Advertisement
  • দে । শ
  • এপ্রিল ১৯, ২০২৪

দুশো অতিক্রান্ত বাংলার এই বর্ণময় মশলা মেলার, গোষ্ঠবিহারী মেলা শুরু গোবরডাঙায়

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দুশো অতিক্রান্ত বাংলার এই বর্ণময় মশলা মেলার, গোষ্ঠবিহারী মেলা শুরু গোবরডাঙায়

গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মেলার ভূমিকা যে কতটা কতটা কার্যকরী হতে পারে তা সেদিন অনুভূত হয়েছিল। সেদিন বলতে তা ২০২ বছর অতিক্রান্ত। ১২৩০ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ পূণ্যদিনে যে মেলার সূচনা হয়েছিল গ্রামের জমিদারে বদান্যতায় আজও ‘‌সেই ট্রাডিশন সমানে  চলছে’‌। চারপাশ অনেক বদলে গেছে। বেড়েছে লোকালয়। বাড়ি ঘর। কিন্তু আজও যাই যাই করে রয়ে গেছে যমুনার চর। পয়লা বৈশাখের ভোর রাত থেকে হরেক মশলার গন্ধে ভরে ওঠে গোটা এলাকা। রাত পোহানোর আগেই শুরু হবে ‘‌গোষ্ঠবিহার মেলা’‌। সাল তারিখের হিসেবে যে মেলা শুরু হয়েছিল ইংরেজি ১৮২৩ সালের ১২ এপ্রিল। বাংলা ক্যালেন্ডারে সেটা ছিল ১২৩০ সনের ১ লা বৈশাখ।

উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার  এলাকার  জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ১৮২২ সালে স্থাপন করেছিলেন প্রসন্নময়ী কালীমন্দির ও দ্বাদশ শিব মন্দির। যমুনা নদী তীরে  লাগোয়া জমিদার বাড়ির জায়গাতেই এই মেলার সূত্রপাত। শোনা যায় জমিদার কালীপ্রসন্ন ছিলেন দূরদর্শী মানুষ। তিনিই এই মেলার সূচনা করেন প্রজাদের ফসলে বিক্রির জন্য। প্রধানত  ২ টি উদ্দেশ্য ছিল জমিদারের, প্রথমত প্রজারা উৎপাদিত ফসল বিক্রি করার একটি বাজার পাবেন, দ্বিতীয়ত মেলায় ফসল বিক্রির টাকা থেকে প্রজাদের কাছে  প্রাপ্য খাজনা  জমা হবে জমিদারের সেরেস্তায়। কৃষকরা এই মেলায় নিয়ে আসতেন হলুদ, ধনে, জিরে, লঙ্কা, আদা, রসুন সহ নানা মশলা। তাই এই মেলা ‘‌মশলা মেলা’‌ নামেও পরিচিত। প্রথম দিকে ১ দিন অর্থাৎ বৈশাখের প্রথম দিন মেলা বসত। কালক্রমে ৩ দিন , ৭ দিন এখন ১০ দিনে দাঁড়িয়েছে  মেলার মেয়াদ। জমিদারি প্রথা বিলোপ হলেও মেলা টিকে আছে গোবডাঙার মানুষের সদিচ্ছায়।

মেলা কমিটির সদস্য পবিত্র  মুখোপাধ্যায় বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে মেলা পরিচালনার দায়ভার বহন করছে ‘‌গোবরডাঙা ঐতিহাসিক স্মৃতিরক্ষা কমিটি।’‌ এবারেও বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে মেলা বসেছে। সেখানে আশপাশের এলাকা তো বটেই আশপাশের জেলা থেকেও মানু্য আসছেন মেলায়। পয়লা বৈশাখ ভোর থেকে ভক্তরা ভিড় জমান প্রসন্নময়ী কালী মন্দিরে পুজো দিতে। রাত থেকে লাইন পড়ে যায়। এই মেলায় কৃষকরা তো বটেই মশলার ব্যাপারিরা এখানে নানা রকম মশলা বেচাকেনা করেন। হলুদ, ধনে, জিরে, শুকনো ও কাঁচা লঙ্কা, আদা, পেঁয়াজ, রসুনের পাশাপাশি হেঁশেলে যতরকম মশলা লাগে সবই পাইকারি ও খুচরো বেচাকেনা হয় এখানে। মুগ,মুসুর, সহ নানা ডাল বিক্রিও হয় । বাজার থেকে দাম বেশ খানিকটা কম। অনেকে পরিবারের সারা বছরের মশলা এখান থেকে কিনে রাখেন। মেলার বাকি দিন গুলিতে  নানা রকম সামগ্রীর দোকান বসে। মাটির জিনিস, লোহা, কাঠ,মাটির তৈরি জিনিস বিক্রি হয়। পোশাক, খাবার, পুতুল, খেলনা, কাঁচের তৈরি নানা শৌখিন জিনিসের দোকান বসে। বিনোদনের জন্য খাবার নাগর দোলা, ম্যাজিক সহ নানা আয়োজন থাকে। মেলা কমিটির উদ্যোগে দৌড় প্রতিযোগিতা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আয়োজন করা হয়।

শিয়ালদা বনগাঁ শাখায় মছলন্দপুর অথবা গোবরডাঙা স্টেশনে নেমে টোটো, অটো, ভ্যান রিকশ বা বাসে যমুনা ব্রিজ পার হয়ে গোবরডাঙা কালীবাড়ি। সেখানেই মেলা বসেছে। ২০২ বছরে পুরনো মেলা আজও প্রাণবন্ত। প্রাচীন জমিদার বাড়ির ফটক পেরতেই কোলাহল আর মানুষের ভিড়ে এক ঐতিহ্য মিশে আছে। ‌‌


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!