- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- নভেম্বর ২৯, ২০২৩
বিধানসভায় নজিরবিহীন ঘটনা। তৃণমূল-বিজেপি পরস্পরকে “চোর” স্লোগান । স্পিকারকে বিজেপির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আবেদন মমতার
বিধানসভা চত্তরে ৩০ ফুটের ব্যবধানে তৃণমূল-বিজেপি মুখোমুখি স্লোগানের লড়াই। স্লোগানের একটাই শব্দ “চোর”। একবার তৃণমূল বিধানসভায় বি আর আম্বেদকরের মূর্তির নিচ থেকে যখন বলছে, অমিত চোর, মোদি চোর, বিজেপির সবাই চোর, তখন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বলতে থাকেন, পিসি চোর, ভাইপো চোর, তৃণমূলের সবাই চোর। তৃণমূল-বিজেপি সবারই মুখে একটা শব্দ তা হল “চোর”, এই চোর শব্দটাই কখনও তৃণমূল বিজেপিকে আক্রমণের হাতিয়র করল আবার সেই একই সময় “চোর” শব্দটিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করল বিজেপি।
৩০ ফুটের ব্যবধানে যখন বিজেপি ও তৃণমূল পরস্পরকে চোর বলে চিৎকার করছে, শুভেন্দু যখন মমতা চোর,চোর,চোর বলছেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদেরটা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে হচ্ছে, ওরা বেআইনি ভাবে এই কাজ করছে।” ওরা বলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “একটা মিটিং চলাকালীন এই অসভ্যতা,জল্লাদ গিরি যারা করছে, যারা তৃণমূলের টাকায়, লুঠ করেছে, দলের বদনাম করেছে, সেই গদ্দারদের কেউ ভয় পায় না।” মমতা এভাবেই নাম না করে আচমকা বিধানসভায় ঢুকে পড়ে মমতা চোর স্লোগান দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীকেই যে নিশানা করেছেন, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি।
মমতা বলেন, “ধর্মতলায় পাত্তা পায়নি, তাই এখানে এসে অসভ্যতা করছে। আমি স্পিকারকে বলব, টিভি দেখে, সংবাদপত্র দেখে আপনি পুলিশকে বলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। বিধানসভা স্পিকারের অধীনে থাকে। আমাকে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের সময় ছিল পাঁচটা পর্যন্ত। আমাদের কর্মসূচি শেষ, জনগনমন গেয়ে আমরা আমাদের কর্মসূচি শেষ করব।”
এরপর বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা ছেড়ে বেরিয়ে যান।
এদিন তিনটে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের বিধায়কদের নিয়ে ১০০ দিনের কাজের টাকা আদায়ের দাবিতে বিধানসভার লনে বি আর আম্বেদকরের মূর্তির নিচে কালো পোশাক পরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই কমসূচি চলার কথা ছিল। এই কর্মসূচি থেকে ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসরা অমিত চোর, মোদি চোর, তৃণমূলের সবাই চোর, বাপ চোর, ব্যাটা চোর, তৃণমূলের সবাই চোর, ওয়ান,টু,থ্রি,ফোর বিজেপির সবাই চোর স্লোগান দিতে থাকে।
এরই মধ্যে সাড়ে চারটে নাগাদ শুভেন্দু অধিকারী হঠাৎ বিধানসভায় “মমতা চোর, চোর,চোর, তৃণমূলের সবাই চোর স্লোগান দিতে দিতে বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে ঢুকে পড়েন। শুভেন্দু মমতা চোর, তৃণমূল চোর। তৃণমূল ডিএ চোর, রেশনের চাল চোর, পিসি চোর ভাইপো চোর, তৃণমূলের সবাই চোর বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে স্লোগানে গলা মেলান বিজেপির অন্য বিধায়করা। স্লোগান দিতে দিতে বিধানসভা কক্ষে প্রবেশ দ্বারে বসে পড়েন শুভেন্দু ও বিজেপির সাংসদরা, হাতে তৃণমূল চোর লেখা প্লাকার্ড।
শুভেন্দু আচমকা বিধানসভায় ঢুকে তৃণমূল ও মমতাকে চোর বলার সময় তৃণমূলও পাল্টা বিজেপির সবাই চোর, বাপ চোর, ব্যাটা চোর, বিজেপির সবাই চোর স্লোগান দেয়। মুহূর্তে বিধানসভা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে লালবাজারের বিশাল পুলিশ ফোর্স বিবদমান তৃণমূল ও বিজেপির মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। অবশেষে বিজেপির এই কর্মসূচি বেআইনি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান।
এই ঘটনা দেখে ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর তৃণমূল বিধায়কদের দ্বারা বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনা মনে পড়ে গেল। তবে আজ, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে বিধানসভা ভাঙচুরের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা তৃণমূল বা বিজেপি কেউ ঘটায়নি। যদিও দিন তারিখটা কাছাকাছিই ছিল। আজ ২৯ নভেম্বর,২০২৩, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন ছিল। ২০০৬ সালেও যেদিন বিধানসভা ভাঙচুর হয়েছিল, সেদিনটিও ছিল৩০ নভেম্বর, এমনই এক শীতকালীন বিধানসভা অধিবেশনের দিন।
২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলছিল। তখন সিঙুর আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায় ছিল। ওই দিন কলকাতা থেকে সিঙুরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পথে তাঁকে আটকে দেয় বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ। এর পর কলকাতায় ফিরে এসে সটান বিধানসভায় চলে যান মমতা। সেখানে গিয়ে সংবিধানের প্রতিলিপি হাতে নিয়ে চিৎকার করে দলের বিধায়কদের তাঁর ওপর পুলিশি হামলার অভিযোগ করতে থাকেন তিনি। তখনই বিধানসভার শতাব্দীপ্রাচীন আসবাব ভাঙচুর শুরু করেন তৃণমূল বিধায়করা। প্রথমে বিধানসভা কক্ষের বাইরে ও পরে ভিতরেও ব্যাপক ভাঙচুর হয়।
তবে জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিধানসভায় বিরোধীদের মুখে চোর স্লোগান শুনতে হয়নি। এদিন যা ঘটল তা নজিরবিহীন ঘটনা।
❤ Support Us