Advertisement
  • এই মুহূর্তে বি। দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫

সামরিক বিমানে অবৈধ অধিবাসীদের ভারতে ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ট্রাম্প

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
সামরিক বিমানে অবৈধ অধিবাসীদের ভারতে ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ট্রাম্প

অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে আমেরিকার সামরিক বিমান পেন্টাগনের সি-১৭। দিল্লির তরফে এ বিষয়ে এখনো সরকারি বিবৃতি আসে নি। তবে বিদেশমন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সি-১৭ বিমানটি ২৫০ জন অভিবাসীদের নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে, কমপক্ষে ২৪ ঘন্টার আগে এটি দিল্লি পৌঁছাবে না। সম্প্রতি গুয়াতেমালা, পেরু, হন্ডুরাসের মতো দেশেও সামরিক বিমানে করে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন।

দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতা দখলের পর থেকেই একাধিক নয়া ফরমানে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘অবৈধ অধিবাসীদের’ দেশে ফেরানোর ইস্যু নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে এগোতে চায় ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন, যাদের মধ্যে ভারতীয়রাও অন্তর্ভুক্ত। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের ফেরত পাঠানোর কাজে পেন্টাগনে আমেরিকার সামরিক সদর দফতর থেকে সাহায্য নিচ্ছে ওয়াশিংটন। রয়টার্স জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে পেন্টাগন থেকে বিমান দেওয়া হচ্ছে। এল পাসো, সান দিয়েগো, টেক্সাস এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ধৃত বিভিন্ন দেশের প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি ‘নাগরিক’কে নিজ নিজ দেশে ফেরাতে আমেরিকার সামরিক বাহিনীর বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি সম্প্রতি গুয়াতেমালা, পেরু, হন্ডুরাসের মতো দেশে সারিক বিমানে করে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছিল, এবার ভারতীয়দের দেশে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রথম সি-১৭ সামরিক বিমানে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের ‘ডিপোর্ট’ করল আমেরিকা। সামরিক বিমানের ফ্লাইটে প্রতি অভিবাসীর জন্য ব্যয় কমপক্ষে ৪ হাজার ৬৭৫ ডলার। হোয়াইট হাউসের তরফে প্রকাশিত হয়েছে ছবি, তাতে দেখা যাচ্ছে সারিসারি মানুষের ভিড়, প্রত্যেকের কোমড়ে বাঁধা চেন। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মৌলিক অধিকারের প্রতি নিদারুণ অসম্মান – ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছে ব্রাজিল সরকার।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নীতির অধীনে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি লাখ লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কার করবেন এবং দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন। দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন কংগ্রেস একটি বিল পাস করে। এই আইনের আওতায় যেসব অবৈধ অভিবাসী অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে এবং নির্দিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত হয়, তাদের আটক ও বহিষ্কার বাধ্যতামূলক করা হয়। এমনকি নির্বাচনী প্রচারের সময়ও ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি পুনরায় নির্বাচিত হলে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম বহিষ্কার অভিযান শুরু করব।’

কিছুদিন আগে আমেরিকায় ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এর আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। এই নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘ভারত সঠিক কাজ করবে’। এদিকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গেও এই নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও। এই আবহে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছিল, কোনও ভারতীয় নাগরিক যদি অবৈধ ভাবে আমেরিকায় বসবাস করে থাকে তাহলে তাদের ফেরত নিতে কোনও আপত্তি নেই ভারতের। নয়াদিল্লির সবুজ সংকেত পেতেই দেশে ফেরানোর কাজ শুরু করে দিল আমেরিকা।

গত কয়েকবছরে বেআইনিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩-২৪ সালে ভারতীয় নাগরিকদের অনুমোদন ছাড়াই উত্তর সীমান্ত দিয়ে মার্কিন দেশে প্রবেশের চেষ্টার ৯০, ৪১৫ টি ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন বা সিবিপির তথ্য অনুসারে, ভারতীয়রা এখন অনুপ্রবেশে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। দ্বিতীয় স্থানে ফিলিপিন। কেন ভারতীয়রা অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা করে? করুণ অর্থনৈতিক অবস্থা আর মার্কিন দেশে ভিসার সীমাবদ্ধতা, অভিবাসন চালানোর প্রধান কারণ। অবৈধ নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও, ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে ‘দক্ষ-কর্মী ভিসা’ -এর সর্বাধিক প্রাপক। ২০২৩ এর রিপোর্ট বলছে , এইচ-১বি ভিসার প্রায় ৭৮ শতাংশ পেয়েছে ভারতীয় নাগরিকরা ২০৭, ৩০৭ ও এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রাম বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক ভারতীয় ভিসা বা গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য বিধিনিষেধ এবং দীর্ঘ বিলম্বের সম্মুখীন হন। মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও তাঁরা অবৈধভাবে বাস করেন সেখানে।

দীর্ঘকাল ধরে আমেরিকার সমাজে অভিবাসীদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত মাসে, ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালের বিশপ মারিয়ান এডগার বুড্ডে ট্রাম্পকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, “আমাদের ঈশ্বরের নামে, আমি আপনাকে আমাদের দেশের লোকেদের প্রতি করুণা করতে বলছি। গরীব মানুষেরা আমাদের ফসল বাছাই করে, আমাদের অফিস বিল্ডিং পরিষ্কার করে, পোল্ট্রি এবং মাংস প্যাকিং প্ল্যান্টে কাজ করে, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পরে আমাদের থালা-বাসন ধুয়ে দেয়, হাসপাতালে রাতের শিফটে কাজ করে। তারা নাগরিক নাও হতে পারে, হয়তো তাঁদের যথাযথ নথিপত্রও নেই, কিন্তু অভিবাসীদের অধিকাংশই অপরাধী নয়। তারা কর দেয় এবং সমাজে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে । ওঁরাআমাদের গীর্জা, সিনাগগ, গুরুদ্বার, মসজিদ এবং মন্দিরের বিশ্বস্ত সদস্য।” ট্রাম্প নিজের অবস্থানে অনড়, তিনি বলেছেন, “অনেক সংখ্যক অভিবাসী অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে এবং মানুষকে হত্যা করেছে।” যদিও নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সামনে আসে নি। সাম্প্রতিক কালে এক বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে অভিবাসন বৃদ্ধি অপরাধের সাথে যুক্ত নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যার তুলনায় কম হারে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।” ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ এবং টেক্সাসের রাষ্ট্রীয় তথ্য বলছে অবৈধ নাগরিকরা বেশিরভাগ সহিংসতা বা সম্পত্তি অপরাধের পরিবর্তে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনেই কেবলমাত্র জড়িত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নির্বাসনের ভয় অননুমোদিত অভিবাসীদের অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত হতে নিরুৎসাহিত করে।

অন্যদিকে, নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির একাধিক গুরুদ্বারে অভিযান চালিয়েছিল মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট। অবৈধ ভাবে মার্কিন মুলুকে বসবাস করা শিখ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতেই এই অভিযান চালানো হয়েছিল। উল্লেখ্য, এর আগে নিয়ম ছিল, অবৈধ অভিবাসী ধরতে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো যাবে না। তবে ক্ষমতায় আসার পরে আমেরিকার সেই নিয়মকে বাতিল করেন ট্রাম্প। এই আবহে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ধরতে মার্কিন মুলুকের গুরুদ্বারে অভিযান চালানো হয়।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!