- এই মুহূর্তে দে । শ
- এপ্রিল ১২, ২০২৩
নীলা-সাদায় না স্কুল পড়ুয়াদের। চিরাচরিত ইউনিফর্মেই স্বচ্ছন্দ তারা
সরকারি ইউনিফর্মে ঘোর আপত্তি স্কুলপড়ুয়াদের। চিরাচরিত ইউনিফর্ম পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসে শিক্ষার্থীরা । গত বছর থেকে চালু হলেও নতুন পোষাক নেওয়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেই। শহরের অধিকাংশ সরকারি স্কুলের চিত্র মোটামুটি একই। এরকম পরিস্থিতিতে আবার নীল-সাদা পোষাক তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে স্কুল শিক্ষা দফতর। যা নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।
শিক্ষকদের মতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরত পড়ুয়াদের জন্য নতুন ইউনিফর্ম বিদ্যালয়গুলোতে পাঠিয়ে ছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা তা নিতে না চাওয়ায় স্কুলের স্টোর রুমে বহু নীল-সাদা পোযাক অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখন যদি আবার নতুন করে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্কুল ইউনিফর্ম তৈরি করা হয় তাহলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে। সবথেকে বড়ো কথা, পড়ুয়ারাই এ নিয়ে আগ্রহী নয়। শহরের বহু পুরোনো বিদ্যালয় রয়েছে যারা তাঁদের ঐতিহ্যগত ইউনিফর্মকেই বজায় রাখতে চান। এমনই এক শতবর্ষ পেরনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, নব প্রবর্তিত পোষাক নিয়ে আপত্তির কথা শিক্ষা দফতরকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম। গত বার আমরা নীল-সাদা পোষাক নিইনি। এবছর আবার নীল-সাদা পোষাকের ওয়ার্ক অর্ডার নিতে আসায় ফের আমাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছি।
দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, গত বছর ছাত্রদের নীল সাদা পোষাক দেওয়া হলেও অনেকেই তা পরতে আপত্তি। অভিভাবকরাও বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন। তাঁদের মতে, পোষাকের রং দেখে স্কুলের পড়ুয়াদের আলাদা করে চিনতে পারা যায়। বহু পড়ুয়াই গত বারের দেওয়া নীল-সাদা ইউনিফর্ম না নিয়ে পুরনো পোষাকেই ক্লাস করেছে । তাঁদের জন্য বানানো পোষাক এখনও পড়ে রয়েছে। আবার অর্ডার নিতে এলে নিজেদের আপত্তির কথা বলব।
প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশও অভিভাবকদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন । তাঁরাও জানিয়েছেন কোনো বড়ো অনুষ্ঠানে একাধিক স্কুলের পড়ুয়ারা উপস্থিত থাকলে তাদের পোষাকের রং দিয়েই সহজে আলাদা করে নেওয়া যায়। গত বছর নেতাজি ইন্ডোরে শিক্ষা দফতরের এ রকমই একটি অনুষ্ঠানে তাঁরা স্কুলের ইউনিফর্ম দেখেই দূর থেকে তাঁদের পড়ুয়াদের চিনে নিতে পেরেছিলেন।
স্কুল ইউনিফর্ম নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেছেন, যে সব স্কুল নীল-সাদা পোষাক চাইছে না, তাদের কেন জোর করে দেওয়া হচ্ছে ? অনেক পড়ুয়াদের অভিভাবকদের তো পোষাকের মান নিয়েও আপত্তি রয়েছে। নীল-সাদা ইউনিফর্ম থাকা সত্ত্বেও বহু ছাত্র পুরনো পোষাক পরে স্কুলে আসছে। তাই একই স্কুলের পড়ুয়াদের বিভিন্ন রঙের স্কুলপোষাক হয়ে যাচ্ছে।
নীল-সাদা রং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত প্রিয়। ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের বহু সেতু , রাস্তাঘাটের ডিভাইডার, ফুটপাথে শাসকের রং প্রাধান্য পেয়েছে। এখন স্কুল শিক্ষার্থীর পরিধেষ ইউনিফর্মেও নীল-সাদার স্পর্শ। শিক্ষা দপ্তর রাজ্যের প্রায় ১৬২৮ টি স্কুলের মধ্যে সমতা আনার কথা বলেছেন। কিন্তু বিভিন্ন স্কুলের ঐতিহ্য ও অবস্থান ভিন্ন। সেখানে জোর করে কোনো নির্দিষ্ট রংকে চাপিয়ে দিলে স্কুলগুলো স্বাতন্ত্র্য হারাবে। একমুখিনতা ও অখণ্ড আনুগত্য স্বৈরতন্ত্র স্থাপনের অন্যতম শর্ত। সে লক্ষ্য পূরণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার শিক্ষা। কেন্দ্রের শাসক দল তা নিয়ে যথেষ্ট তৎপর । একই পথে কি হাঁটতে চাইছে রাজ্য?
❤ Support Us