Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

বাজেট রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ৪ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব । নদী ভাঙন রুখতে ২০০ কোটি। আবাস, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে বরাদ্দ বাড়লো। একই হারে মিলবে লক্ষ্মীর ভান্ডার

ব্যয় বরাদ্দে শীর্ষে পঞ্চায়েত এ গ্রামীন দফতর, বাড়লো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের বরাদ্দ । পথশ্রী প্রকল্পে খরচ ১৫০০ কোটি টাকা । অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট বিজেপির, দিশাহীন বাজেট মন্তব্য শুভেন্দুর

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বাজেট রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ৪ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব । নদী ভাঙন রুখতে ২০০ কোটি। আবাস, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে বরাদ্দ বাড়লো। একই হারে মিলবে লক্ষ্মীর ভান্ডার

বকেয়া ঋণ শোধ করেও উন্নয়ণের খাতে ১৬.১৭ শতাংশ বরাদ্দ বাড়লো রাজ্য বাজেটে। ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বুধবার রাজ্যের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করে বললেন অর্থ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দিমা ভট্টাচার্য ।

নতুন কর্মসংস্থান এবং রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে উন্নয়ণের অংশীদার করার লক্ষ্যেই এই বাজেট, বিধানসবা অধিবেশনের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় । এদিনের বাজেটে ঘোষিত হলো নদী বন্ধন প্রকল্পের । ফি বছরই গঙ্গা এবং পদ্মার আগ্রাসনে বাংলার বহু মানুষের ক্ষয ক্ষতি হয় । সেই ভাঙন রোধেই এবার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্যের অর্থ দফতর । পাশাপাশি হাওড়া ও হুগলীতে নদী ভাঙন রুখতে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । রাজ্যের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র এবং মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইতিমধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৩৪০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার । কেন্দ্র এ পর্যন্ত এই খাতে কোনো টাকা বরাদ্দ করেনি । নদী ভাঙন, প্লাবন রুখতে আগামী অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে ওই টাকা খরচ করা হবে । রাজ্যের বহু খাতেই কমেছে বা বন্ধ হয়েছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ, এমতাবস্থাতেও পথশ্রী প্রকল্পে রাজ্য জুড়ে ৩৭ হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা । বাংলার বাড়ি প্রকল্পে আওতাভূক্ত করা হবে আরও ১৬ লক্ষ মানুষকে । এই খাতে রাজ্য বাজেটে ৯৬০০ কোটি খরচের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে । ইতিমধ্যেই বাংলার বাড়ি প্রকল্পে রাজ্য নিজের তহবিল থেকে আবাসের প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছে ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে । পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়া হবে জুনের মধ্যেই বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । পাশাপাশি আরও ১৬ লক্ষ মিলিয়ে মোট ২৮ লক্ষ মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হলো । প্রয়োজনে উপভোক্তাদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি ।

গঙ্গাসাগরকে জাতীয় মেলা হিসবে ঘোষণার জন্য বহুদিন ধরেই দাবি পেশ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে । এনিয়েও কেন্দ্রীয় উদাসীনতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, যাতায়াতের সুবিধার্থে সেখান একটি সেতু তৈরির জন্য এই বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে । সেখানে একটি চার লেনের ব্রিজ তৈরি হবে । ধাপে ধাপে এই খাতে মোট ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে পরবর্তী অর্থবর্ষ থেকে । রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে, সিক্সথ পেকমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বাড়লো ৪ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা । এই প্রস্তাব অনুসারে, আগামী পয়লা এপ্রিল থেকে রাজ্যের সরকারি কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্তরা ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন । এরপরেও কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের মহার্ঘ ভাতার ফারাক থাকবে ৩৫ শতাংশ । পাশাপাশি আশাকর্মীদের ফোন দেওয়ার জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করা হয়েছে । পরিকাঠামো উন্নয়ণে রাজ্যে আরও ৩৫০ টি সুফল বাংলা স্টলের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পাশাপাশি রুগ্ন চা শিল্পকে বাঁচাতে ২০২৬ এর পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত কর ছাড়ের সময়সীমা বাড়ানো হল ।
এই বাজেটে সবচেয়ে বেশী বরাদ্দ বেড়েছে পঞ্চায়েত এবং গ্রামীণ দফতরে । এরপরেই রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দফতর । সেখানে খরচ বরাদ্দ করা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা । সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতাধীন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে গত অর্থবছরে উপকৃত হয়েছেন ২.৪৫ কোটি পরিবার । এই খাতে মোট খরচ হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা । রাজ্যের আরও মানুষকে এই প্রকল্পের আওতাভূক্ত করার কথাও বলা হয়েছে নতুন বাজেট প্রস্তাবে । সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের মোট ৯৪টি সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পে এপর্যন্ত ১২ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন । শিক্ষাখাতে কন্যাশ্রী, মেধা শ্রী, তফশিলি বন্ধু, সংখ্যালঘুদের জন্য ঐক্যশ্রী সহ একাধিক প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের পরিসংখ্যানও পেশ করেন তিনি । পাশাপাশি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে সেন্ট জেভিয়ার্স সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জমি দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি । রাজ্যে নারী সুরক্ষা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মূল বাজেটের অর্থেকটাই মহিলাদের জন্য রাখা হয়েছে । তবে গত লোকসভার পর লক্ষ্মীরভাণ্ডার প্রকল্পে প্রদেয় টাকার পরিমাণ বাড়লেও এই বাজেটে তার কোনো পরিবর্তন করা হয়নি । যদিও এবিষয়ে আরও উপভোক্তা বাড়ানোর উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায় । পাশাপাশি রাজ্যের সব মহিলারাই এই সুবিধা পাবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি । মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, রাজ্যের তৈরি এই প্রকল্প এখন বিভিন্ন রাজ্যে অনুকরণ করার প্রবনতা তৈরি হয়েছে, অনেকেই শুরু করে আর বজায় রাখতে পারেনি । কিন্তু বাংলা থেকেই এর শুরু এবং ধারাবাহিকতায় বাংলাই তার দৃষ্টান্ত । পাশাপাশি কৃষি ঋণ, কৃষক পেনশন সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের কথাও এদিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি ।

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাজ্যের নতুন ছয়টি ইকনমিক বা ফ্রেড করিডরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই বাজেটে । ডানকুনি থেকে রঘুনাথপুর করিডর, ডেউচা পাচামি কয়লা খনি, ডানকুনি- অমৃতসর,ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-কুচবিহার,খরগপুর-মোরগ্রাম, পুরুলিয়া-জোকা-কলকাতা সহ একাধিক বাণিজ্য করিডরের কথাও বলা হয়েছে । বাজেট অধিবেশনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, উৎকর্ষ বাংলায় প্রশিক্ষণ পেয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বহু যুবক যুবতী শ্রমদক্ষ হয়েছেন, রাজ্যের এমএসএমি সেক্টারে কাজ পেয়েছেন । কয়লা, স্টিল, সেল গ্যাস, তথ্যপ্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়ছে, ফলে তাতে কর্ম সংস্থান বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে । ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা ওএনজিসি সহ একাধিক সংস্থাকে নূন্যতম মূল্যে জমি দেওয়া হয়েছে । শিল্প গড়তে রাজ্যে তৈরি হয়েছে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক । তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে, তিনি জানিয়েছেন টেন্ডার পেশে কিছু ত্রুটি থাকায় তা পুনর্বিবেচনার জন্য আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে । প্র‌য়োজনে এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি ভেবে দেখা হবে । দেশের নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের যে কেন্দ্রীয় প্রকল্প, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এতে রাজ্যে বিভিন্ন নদীতে ছোটো ছোটো বন্দর তৈরির সম্ভাবনা বাড়বে । এদিন দীঘায় ড্রাই পোর্টের কথাও উল্লেখ করেন তিনি । পরিযায়ী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি, রাজ্যে ফিরে আসা শ্রমিকদের ৫০ দিনের কাজে নথিভূক্তির বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি । কেন্দ্র ইতিমধ্যেই এই খাতে রাজ্যকে টাকা বরাদ্দ বন্ধ করেছে, দেশের বাজেটেও এই খাতে বরাদ্দ ক্রমশ তলানিতে । এই অবস্থায় রাজ্য গত অর্থ বছরে ৬১ কোটি কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যপূরণ করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি ।

এদিন বাজেট পেশ চলাকালীন বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে বিজেপি । পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, রাজ্য যে দেউলিয়া এই বাজেট তার প্রমান। এটি একটি দিশাহীন, কর্মসংস্থান বিরোধী বাজেট। কৃষক থেকে মহিলাদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন । সরকারি কর্মচারীরা প্রাপ্য মাহার্ঘ্য ভাতা পাচ্ছেন না । পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য এখনো এক ডেসিমেলও জমি অধিগ্রহন হয়নি, অথচ বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে টাকা । ২০২৬ এর নির্বাচনের আগে এটা শুধুই খাতায় কলমে একটা তৃণমূল সরকারের প্রতিশ্রুতি মাত্র । লোকশিল্পী থেকে বার্ধক্যভাতা কোনো ক্ষেত্রেই বরাদ্দ বাড়েনি । রাজ্য দেউলিয়া, ছত্রে ছত্রে তা প্রমাণিত হয়েছে ।

এইপ্রসঙ্গে পরে রাজ্যের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পেশ করা বাজেট অনুযায়ী, দেশের প্রতি নবজাতক পিছু ঋণের পরিমাণ ১ লক্ষ ৪১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, পশ্চিমবঙ্গ সেই ঋণের পরিমাণ অর্ধেক । গত অর্থবছরে বকেয়া ঋণের ৮০ হাজার কোটি টাকা মিটিয়েও ১১.৯৪ শতাংশ হারে রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!