- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- এপ্রিল ২৯, ২০২৩
গ্রামরক্ষীদের হাতে হাতে ‘উস্কানির খড়গ’! ডাল লেকে সাপের জিহ্বা, হরি পর্বতে ঘনঘটার সংকেত। শাসকের ভুল কৌশলে বাড়ছে সন্ত্রাসের মানচিত্র
রাজৌরিতে পাঁচ সেনা হত্যার পর কাশ্মীরে আবার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। জঙ্গিরা পগার পার। ধরা পড়েছে তাদের একজন সক্রিয় সহযোগী। সে কাশ্মীরি। ঘটনাচক্রে, মুসলিম।
রক্তখেকোদের জাত নেই, ধর্ম নেই। তাঁদের একমাত্র পরিচয়, তারা দুর্বৃত্ত, সব অর্থে দেশদ্রোহী। একরকমের শয়তানদের রুখতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা কেন্দ্রীয় শাসক যদি ভিন্ন মেরুর দুর্বৃত্তায়নকে প্রশ্রয় দেয়, যদি কোনো সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করে, তাহলে বুঝতে হবে, বলতেও হবে, এটা নীতি নয়, অপনীতি। অপকৌশল। এরকম বিভ্রান্তিকর কৌশল দেশের সর্বনাশ ডেকে আনে। পাল্টা জঙ্গিগোষ্ঠীর সামাজিক ভিত্ বাড়িয়ে দেয়। কেন্দ্র এরকম কোনো বিভ্রান্তিকর পদক্ষেপ কি গ্রহণ করছে? যদি করে থাকে কাশ্মীরে, দেশের অন্যত্রও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বার বার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদ রুখতে দিল্লির কঠিনতম সংকল্প ঘোষণা করেছেন। সর্বোচ্চ প্রশাসকের দায়িত্ব এটা। এ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী, কোনো সরকার এব্যাপারে শিথিল মনোভাব প্রদর্শন করেননি। সন্ত্রাস কবলিত কাশ্মীর নিয়ে দিল্লির দৃঢ়তা কঠোর, কঠোরতর হওয়া স্বাভাবিক। কঠোর হতে গিয়ে কখনো কখনো নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়াবাড়িও দেখা গেছে। হিজব-উল মুজাহিদিনের জঙ্গি ওয়ানির মৃত্যুর পর উপত্যকার বহু সংখ্যক মানুষ যেভাবে আবেগাচ্ছন্ন হয়ে উগ্র রূপ ধারণ করেছিল, তার মোকাবিলায় আধাসেনা নির্বিকার ছর্রা গুলি চালিয়েছিল, অন্ধ, অর্ধ-অন্ধ করে দিয়েছিল বহুজনকে, তা নিরাপত্তারক্ষীদের নৃশংস অসংযমের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। কাশ্মীরে ছুটে যেতে হয়েছিল— কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে। প্রধানমন্ত্রী তখন বিদেশে। বিদেশ থেকে ফিরেই বলেছিলেন, আমরা এভাবে আমাদের যুবকদের মরতে দিতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীর ওই বিবেকময় আশ্বাসের পরেও কারো টনক নড়েনি। জঙ্গিরা থামেনি। বন্ধ হয়নি নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশ আর আধা সেনার অতি তৎপরতা।
কেন্দ্রের আশ্বাস ছিল, ৩৭০ ধারার রদ কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনবে। ফেরায়নি। বরং বেড়েছে। জঙ্গিদের হামলা, প্রতিক্রিয়ায় রক্ষীবাহিনীর পাল্টা আঘাত বিস্তৃত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন বহু ভারতীয় সেনা, তাঁদের প্রাণের মূল্য বাড়ছে না, বাড়ছে ঝুঁকি। এরকম পরিস্থিতিতে, কেন্দ্র যদি কৌশলে সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলে, বা তোলার চেষ্টা করে, তাহলে এরকম পদক্ষেপকে কৌশল বলা অন্যায়। এর নাম অপকৌশল। অপনীতি কিংবা পরোক্ষ উস্কানি।কাশ্মীরে কেন্দ্র গ্রাম নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি করেছে। বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সিভিল সার্ভিসের জনৈক সদস্য। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা অন্তত ৫০০০। এদের হাতে হাতে ঘুরছে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র । সংবাদ মাধ্যমের বিশেষ বিশেষ সূত্র জানিয়েছে পাক-ভারত সীমান্ত ঘেঁষা একাধিক গ্রামে জঙ্গি হামলা আর নাশকতা বাড়তে থাকলে, ২০২২ সালে কাশ্মীর প্রশাসন পাল্টা সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সংগঠনের নাম দেওয়া হয় গ্রাম নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযোগ, এটা নাকি বকলমে হিন্দু জঙ্গি সংগঠন। তথ্য যদি অভ্রান্ত হয়, তাহলে মানতে হবে, মেরুকরণে অভ্যস্ত কেন্দ্রীয় শাসকের একাংশ পাল্টা লড়াইয়ের (কমব্যাট টেররিজম) মারাত্মক রাস্তা বেছে নিয়েছেন। যা কাশ্মীরের শান্ত এলাকাকে পোড়াবে। একসময় আলফাকে শায়েস্তা করতে গিয়ে সালফার (আত্ম সমর্পিত অসম জঙ্গি) হাতে আগ্নেয়াস্ত্র সঁপে দিয়েছিলেন জনাদুয়েক ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী। তথাকথিত সালফা, আলফা দমনের নামে যে ভয়ঙ্কর অরাজকতা তৈরি করেছিল, তা এখনো দুঃসহ স্মৃতি। একইভাবে, নকশালপন্থীদের শায়েস্তা করতে গিয়ে দুষ্পাঠ্য ভুল করেছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। কংগ্রেসিদের হাতের অস্ত্র একদা বাংলায় কংগ্রেসেরই সূর্যাস্তের কারণ হয়ে ওঠে। শাসক যখন ভুল নীতি, ভুল কৌশল প্রয়োগ করে সামাজিক দুর্বৃত্তকে রুখতে চায়, তখন আকাশে মেঘ জমে, মেঘ থেকে বৃষ্টির বদলে আগুন ঝরে, সে মেঘ শাসকের মুখ পোড়ায়, মানুষ পোড়ায় কেবলই।
❤ Support Us