- দে । শ
- ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
বাংলার অন্যতম লৌকিক সংস্কৃতি, ডালের বড়ি তৈরি ঘিরেই স্বনির্ভরতার স্বপ্ন বুনছেন গ্রাম বাংলার মহিলারা

ডালের বড়ি দেওয়া যেন বাংলার একটা কৃষ্টি। আধুনিকতার যুগে তা হারাতে বসেছে। শীতে বিউলির ডালের বড়ি দেওয়ার চল এখনও গ্রাম বাংলার মহিলারা ধরে রেখেছেন। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝেও বড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় দিন গোনেন গ্রামের মহিলারা।
কবে শীত আসবে আর রোদে পিঠ দিয়ে একটা একটা করে বড়ি তৈরি করতে বসবেন। শীত আসবে আর বাঙালি হেঁসেলে বিউলির ডালের বড়ি মজুত করবে না এটা হয় নাকি ! পাতে বড়ির একটা পদ থাকলে তো আর কথাই নেই। বাজারে এখন বারো মাস কিনতে পাওয়া যায় মেশিনে তৈরি ডালের বড়ি। তবে তার স্বাদ বাড়িতে তৈরি বড়ির ধারে কাছে না। শহরাঞ্চলে দেখা না গেলে গ্রামে কিন্তু বড়ি দেওয়ার চল এখনও উঠে যায়নি। শীতের আমেজে মিঠে রোদে পিঠ দিয়ে এখন চলছে ডালের বড়ি দেওয়ার রেওয়ারজ বাংলার গ্রামে আজও রয়েছে। শুদ্ধাচারে বিউলির ডাল বেটে , চালকুমড়ো বা কচু বাটা দিয়ে ফেটিয়ে পরিস্কার কাপড়ে বড়ি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে অগ্রহায়ণ মাস পড়তেই। কোথাও কোথাও বছরে বড়ি দেওয়ার সূচনাটাও বেশ মজার। দিনক্ষণ দেখে প্রথমে ডাল বাটা দিয়ে তৈরি করা হয় ‘বুড়ো বুড়ি’। এই বুড়ো বুড়ি হল বছরের প্রথম বড়ি। তাদের আবার বিয়ে দেওয়া হয়। ধান, দূর্বা, সিঁদুর পরিয়ে শাখ, উলু দিয়ে বুড়ো বুড়ির বিয়ে দিয়ে তবেই শুরু হয় বড়ি দেওয়া। তবে এর ডালের বড়ি দেওয়া ঝামেলা ঝক্কি অনেক। তা জেনেই মহিলারা বড়ি দেন। বাড়ির পুরুষ তাতে হাত লাগান। এও এক বাংলা লৌকিক সংস্কৃতি। এক জায়গায় হয়ে বড়ি দেওয়ার পাশাপাশি পাড়ার মহিলাদের নানা আলাপচারিতায় মুখর হয়ে ওঠে রোদে ভরা বাড়ির ছাদ, উঠোন। বাজারে হাতে দেওয়া বড়ির চাহিদাও প্রচুর। এক কিলো বড়ি তিন’শ–সাড়ে তিন’শ টাকা বিক্রি হয়। তাই অনেকে বড়ি দিয়ে বিক্রিও করেন। ডাল বাটার হ্যাপা অনেক। তাই অনেক জায়গায় বোর্ড ঝোলানো থাকে ‘এখানে মেশিনে ডাল বাটা হয়’। এসব করে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই কয়েক শীতের ক’টা মাস স্বনির্ভর হয়ে ওঠেন ডালের বড়ি দিয়ে।
❤ Support Us