সংসদে পাশ হয়ে গেল মহিলা সংরক্ষণ বিল, পক্ষে ৪৫৪, বিপক্ষে ২ ভোট

প্রত্যাশা ছিলই, লোকসভায় পাশ হয়ে গেল মহিলা সংরক্ষণ বিল। বুধবার সন্ধ্যায় গোপন ভোটাভুটিতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আনা বিলটি সমর্থন করেছেন ৪৫৪ জন সাংসদ। বিলে সংশোধন চেয়ে বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন মাত্র দু’জন সাংসদ।

লোকসভা এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের জন্য মঙ্গলবার নতুন বিল পেশ করেছিল মোদি সরকার। এই বিলটির পোশাকি নাম, ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল লোকসভায় ১২৮তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি পেশ করেন। দীর্ঘ ২৭ বছর পরে অবশেষে সংসদের নিম্নকক্ষ স্বীকৃতি দিল মহিলা সংরক্ষণের ঐতিহাসিক দাবি। প্রথা অনুযায়ী এর পর রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে বিলটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির ছাড়পত্র পেলে কার্যকর হবে মহিলাদের জন্য লোকসভা-বিধানসভায় আসন সংরক্ষণ।

কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে মঙ্গলবার তাঁর বক্তৃতায় মহিলা বিল পেশের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘২০১০ সালে মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মহিলা সংরক্ষণ বিল সংসদের এই কক্ষে পাশ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মোদি সরকার আমাদের কৃতিত্ব দিতে চায় না।’’

অন্য দিকে, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বিল পেশের সময় জানান, ১৩ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলেই মহিলা বিল সংসদের উচ্চকক্ষে পাশ হয়ে গিয়েছিল। অধীর চৌধুরীর বক্তব্যের জবাবে মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘সেই সরকারের আর অস্তিত্ব নেই। বিলটির মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

মঙ্গলবারের এই চাপানউতরকে সঙ্গে নিয়েই বুধবার লোকসভায় মহিলা বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। সেখানে রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধিকে সামনে রেখেই কংগ্রেস শিবির ‘মোদির কৃতিত্বে ভাগ বসানোর’ চেষ্টা শুরু করে। বিরোধীরাও সেই সুরে সুর মেলায়। সোনিয়া গান্ধি তাঁর বক্তৃতায় স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১০ সালে তিনি ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের চেয়ারপার্সন থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সরকার রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি-সহ সরকার এবং বিরোধী পক্ষের সাংসদেরা মহিলা সংরক্ষণ বিল বিতর্কে অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগের দিন রবিবার নিয়মানুযায়ী ডাকা সর্বদল বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে কোনও কথা জানায়নি কেন্দ্র। এমনকি, মঙ্গলবারের আলোচ্যসূচিতেও প্রথমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, পুরো বিষয়টিই গোপন ছিল। অধিবেশন শুরুর পরে সাপ্লিমেন্টরি লিস্ট অফ বিজনেস-এ ১২৮তম সংবিধান সংশোধনী বিল হিসাবে মহিলা সংরক্ষণের বিলটি পেশ করার কথা জানানো হয়েছিল। প্রসঙ্গত কংগ্রেস সহ সব বিরোধীরাই মহিলা সংরক্ষণ বিল সমর্থন করবে বলে আগেই জানায়, তবে বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস মহিলা সংরক্ষণ বিল তাদের রাজত্বকালে এসেছিল বলে দাবি করে।