Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • জুন ৫, ২০২৩

অরণ্যচ্ছেদনের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ কি গড়ে তুলতে পারে উদ্ভিদ প্রেম ? উঠছে প্রশ্ন

বছরে ১২৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক সম্পদ সভ্যতার বিকাশের জন্য ব্যয় করা হয়

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
অরণ্যচ্ছেদনের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ কি গড়ে তুলতে পারে উদ্ভিদ প্রেম ? উঠছে প্রশ্ন

প্রতিনিয়ত উন্নয়নের নামে প্রকৃতির ওপর যে পরিমাণ ধ্বংসলীলা চালানো হয় তার বাজার মূল্য কত ? সম্প্রতি, এমনই এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সমীক্ষা চালিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফাণ্ড। সে সমীক্ষায় তাঁরা জানিয়েছে, বছরে ১২৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক সম্পদ সভ্যতার বিকাশের জন্য ব্যয় করা হয়। এমন পরিসংখ্যান স্বাভাবিক কারণেই যথেষ্ট চিন্তার কারণ। নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর জন্য অনেকেই প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেন। এই নির্ভরতা ব্যক্তি জীবনের সুখ স্বাছন্দ্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, বৃহত্তর স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠ অস্বাভাবিক নয়।

দু বছর আগে দেশের সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত একটি কমিটি তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছিল, একটি গাছের বাজার মূল্য ৭৪ , ৫০০ টাকা। যে অক্সিজেন উদ্ভিদ ত্যাগ করে ও অন্যান্য সম্পদ মানুষকে সরবরাহ করে তাঁর সবটা নিয়েই এই দাম স্থির করেছিলেন সদস্যরা। তাঁদের মতে, একটি চারা গাছে যখন ধীর ধীরে মহীরূহে পরিণত হয় ও তাঁর বয়স যত বাড়তে থাকে তাঁর উপযোগিতাও বাড়ে তাই স্বাভাবিক ক্রণেই বৃদ্ধি পায় তাঁর দাম। এইভাবে শতবর্ষ অতিক্রম করা গাছ কোটি টাকার অঙ্ককে ও ছুঁয়ে ফেলে। কমিটীর পরামর্শ ছিল, পরিকাঠামোগত উন্নতনের জন্য যদি গাছ কাটা হয়, তাহলে তার মূল্য নির্ধারণ অর্থনৈতিক মানদন্ডে করতে হবে।তবে, সংরক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা  সম্ভব হবে।

সুপ্রিম কোর্টের যে পর্যবেক্ষণ তারই প্রতিধ্বনি যেন শোনা গেল ডব্লিউ ডব্লিঊ এফ এর করা সমীক্ষায়। তাঁরা আমেরিকার উদাহরণ দেখিয়ে তাঁরা বলছেন সে দেশের যে ভূমি ভিত্তিক যে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তাঁর বর্তমান বাজার মূল্য ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। যা সেদেশের জিডিপির প্রায় সমান। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত প্রবাল প্রাচীর তাঁরও দেশের অর্থনীতিতে ৫.৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অবদান রয়েছে।

সমীক্ষকদের তাই মত হল, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের শুধু অর্থনৈতিক অর্থাৎ পণ্য পরিষেবা প্রদান নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্কও রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পর্কের মূল্য নির্ধারণের সময় এই বিষয়গুলোকে খেয়াল রাখা দরকার। এখন এই দামস্থির করার প্রয়োজন কেন হয়ে পোড়ছে সে প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষকরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা স্বাভাবিক প্রবণতা হল যা কিছু তথাকথিত বিনামূল্যে পাওয়া যায় তাঁর প্রতি অবহেলা করা। আর্থিক মূল্য যুক্ত হলে মানুষ ব্বুঝতে পারবেকোন অঙ্কের ক্ষতি প্রককৃতির করা হচ্ছে। তাই সচেতনতার দিকে একধাপ আরো এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা ।

তবে এর নেতিবাচক দিকটিও উপেক্ষার নয়। গত বছর মন্ট্রিলে জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেও দাম নির্ধারণের পদক্ষেপকে সমালোচনা করে একাধিক দেশ। কারণ এক্ষেত্রে কোনো সমরূপতা থাকবে না। যেকেউ যে কোনোরকমের মূল্য স্থির করতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে তা নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকে, প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলার মূল্য স্থির করাটাকে অন্যায় বলে নিন্দাও করেছেন।

প্রকৃতির মূল্য আর্থিক মানদণ্ডে স্থির হোক বা নাহোক- মানুষের জীবনে অরণয় যে কতটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে তা টাকার মূল্যে সবাই বিচার করেন না । সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে মহিলারা যখন চিপকো আন্দোলনে নেমে পড়েন আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কতটা কাজ করে তা তাঁরাও কখনো ভেবে দেখেননি।আজকের দিনে আসামের অরণ্য মানব বলে খ্যাত যাদব মোলাই পায়েং ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে ১৩৬০ একরের বনাঞ্চল গড়ে তোলেন তখন কি তিনি প্রাকৃতিক ধ্বংসের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মূল্য বিচার করে তা করতে বসেন ? কিংবা ‘বৃক্ষ্ম মাতা’ নামে পরিচিত তামিলনাড়ুর সালুমারাদা থিম্মাক্কা নিজের উদ্যোগে আট হাজার গাছ লাগিয়ে নিজের গ্রামকে আগের থেকে অনেক সবুজ করে তোলেন তখনও কি টাকা পয়সার হিসাবে সে কাজ করেন? মানুষের সঙ্গে প্রকৃতি সম্পর্ক সুনিবিড়। অর্থমূল্যে বিচার করলে সচেতনতা আসতে পারে, কিন্তু যে আত্মিক সম্পর্ক অরণ্যকে রক্ষা করার দরুণ মানুষের সঙ্গে গাছপালার গড়ে ওঠে তার মূল্য কীভাবে স্থির হবে? সে কথাও কি ভেবে দেখা উচিত নয়?


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!