- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- নভেম্বর ৭, ২০২২
হুমায়ূন ৭৪। ১০ নভেম্বর ঢাকার বাংলা একাডেমীতে বলবেন শাকুর, সেলিনা
পাঠক তৈরিতে হুমায়ূনের অবদান অসামান্য

আলোক চিত্র: শাকুর মজিদ
কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন, ২৫ কার্তিক, ১৩ নভেম্বর । এদিন বাংলাদেশের নানা প্রান্তে, নুহাশ পল্লীতে তাঁর জন্মাঞ্চলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এবং বাংলা একাডেমীতে, কথায়, গানে বক্তৃতায় স্মরণ করা হবে বহুমাত্রিক প্রতিভাকে । নুহাশ পল্লীতে ভোর থেকে শুরু হবে প্রয়াত লেখকের জন্মবার্ষিকী উদযাপন । বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম, হয়ে ওঠা, লেখালেখির ধারাবাহিকতার গুরুত্ব অপরিসীম । মৃত্যুও এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর যেভাবে বাঙালি আলোড়িত হয়ে উঠেছিল, যে ভাবে ঢাকায় কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু অখন্ড বাঙালির চেতনার মর্মস্থলে নাড়া দিয়েছিল, হুমায়ূনের মৃত্যুও তেমনি বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের জাতিসত্তাকে আবেগ চঞ্চল করে তোলে । কয়েকদিন জুড়ে নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূনের সমাধিতে হাজার হাজার মানুষের বিশেষ করে এই প্রজন্মের শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে প্রমাণিত হয় চেতনার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল তাঁর প্রেম, সহজ উচ্চারণ আর আবহ নির্মাণ ।
হুমায়ুন সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ নন । আখতার উজ্জামান ইলিয়াস কিংবা হাসান আজিজুল হক নন । বা ওয়াসি আহমেদের মতো যাঁরা লেখকতাকে বৈদগ্ধ আর মননশীলতার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে যে সতন্ত্র বোধির জগত গড়ে তোলেন সে জগত থেকে হুমায়ূনের অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা । তিনি সবার লেখক । সবার প্রেমিক । সবার গায়ক ।
বিজ্ঞানের শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদের লেখকতার উত্তরণ বাংলাদেশের পাঠকের ক্রমবর্ধমান পরিসরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । লেখক তৈরি করেননি তিনি । অনবরত পাঠক গড়েছেন । পাঠকের মানচিত্র তৈরি করেছেন । তাঁর এই সচেতন বা স্বতঃস্ফূর্ত বিকিরণে বাংলাসাহিত্য যেভাবে সমৃদ্ধ, যেভাবে ঋণী । এর তুলনা মেলা কঠিন । কাজী নজরুল ইসলাম যেভাবে পাঠকের সবস্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন, নির্মীয়মান মধ্যবিত্তকে যথাসম্ভব, তাৎক্ষনিক ভাবে হলেও রক্ষণশীলতামুক্ত, নির্মল করে তুলে চিত্তজয়ী হয়ে উঠেছিলেন; যেভাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কাহিনী নির্মাণের জটিলতাকে ভেদ করে প্রতিদিনের ঘটনা, প্রতিদিনের সুখদুঃখ, প্রতিদিনের সূক্ষ্ণ সরল অনুভূতির সঙ্গে সাহিত্যবোধের সংযোগ তৈরি করেছিলেন, হুমায়ূনও তেমনি লেখকের অহমিকতাকে, বয়সের তথাকথিত ভারকে অগ্রাহ্য করে নেমে এসেছিলেন, প্রেমে আরও প্রেমে।
তাঁর সময় তাঁকে অতুলনীয় গৌরবদান করেছে । তাঁর সমূহ উত্তরণকে ভবিষ্যৎ আরও নিবিড়ভাবে মূল্যায়ন করবে । ১৩ নভেম্বর, ৭৪ এ পা দেবেন হুমায়ূন । তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী সত্তাকে, মননকে আশা করি সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজে স্মরণ করবে বঙ্গ বিশ্ব ।
এদিন, ঢাকা বাংলা একাডেমীতে তাঁকে নিয়ে নানারকম কথাবার্তা উচ্চারিত হবে । খতিয়ে দেখা হবে তাঁর লেখককতার নানা প্রান্তর । বাংলা একাডেমী বিশিষ্ট স্থপতি আর হুমায়ূন সঙ্গী শাকুর মজিদকে হুমায়ূন বৃত্তান্ত শোনাবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে । শাকুর বিচিত্র মানুষ । ক্যামেরা হাতে তাঁর বিশ্বের নানা মুলুক সফর আমাদের উৎসাহীত করে তোলে । তাঁর তথ্যচিত্রে ক্যামেরাও যেন চরিত্র হয়ে ওঠে । নাটকের গল্পনির্মাণ আর প্রযোজনায়ও তিনি স্বতন্ত্র ভাস্কর । অসাধ্য সাধনার তথ্যচিত্রে শাকুর ভাটিপুরুষ শাহ আব্দুল করিমের জীবনকথা, গানের কথা পেশ করে জানিয়ে দেন, জলাঞ্চলে যে প্রতিভার বসবাস, সে প্রজ্ঞা কোনও নিয়ম মানে না, ভেদ চিহ্ন মানে না, মান্যতা দেয় মানুষের নির্ণীত সাধনাকে ।

১৯৮৬, ২১ জানুয়ারি। মুখোমুখি হুমায়ূন আহমেদ আর শাকুর মজিদ। আজিমপুরের নিউ পল্টন লাইনের ভাড়াবাড়িতে তখন থাকতেন দিমুর স্রষ্টা।
শাকুরই প্ৰথম ব্যক্তি, যিনি হুমায়ূন আহমেদের প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন । হুমায়ূন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক । কম্পিত পায়ে হুমায়ূনের বাড়ি গিয়ে, তাঁর মুখোমুখি হয়ে অপূর্ব বোধ করেছিলেন শাকুর– উনি তো আড্ডাবাজ, বন্ধুবাজ মাটির মানুষ । একে ছোঁওয়া যায়, ছুঁয়ে থাকা যায় । আমৃত্যু হুমায়ূনকে স্পর্শ করে নিজের লেখা আর তথ্যচিত্র নির্মাণের চর্চা করেছেন শাকুর । শাকুর ছাড়াও ১০ নভেম্বর, ৭৪ বছরের হুমায়ূনকে নিয়ে, তাঁর সাহিত্যকর্মকে নিয়ে বলবেন লেখক সেলিনা হোসেন ।
❤ Support Us