- এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- অক্টোবর ১১, ২০২৫
৮৩ তে শাহেনশা

অমিতাভ বচ্চন, ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, যিনি গত পাঁচ দশক ধরে হিন্দি সিনেমার রূপ ও গতিপথ নির্ধারণ করে এসেছেন। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে একটি অমলিন ছাপ রেখে চলেছেন।
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে আনন্দ, জঞ্জির ছবির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। এরপর আসে একের পর এক সিনেমার মাইলফলক—দিওয়ার, শোলে, ও ডন, যা তাঁকে ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত করে।
১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর জন্মগ্রহণকারী বচ্চন কখনও নিজেকে এক ধরনের চরিত্রে আটকে রাখেননি। চুপকে চুপকে ও অমর অকবর অ্যান্টনি-তে তাঁর দুর্দান্ত কমিক টাইমিং তাঁর অভিনয় দক্ষতার আরও এক নতুন দিক তুলে ধরে। আবার সিলসিলা ও কভি কভি-তে তাঁর রোমান্টিক চরিত্র দেখিয়েছে, তিনি শুধু ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ নন, বহুমাত্রিক একজন অভিনেতা।
মোহব্বতেঁ, ব্ল্যাক, পা, পিকু, পিঙ্ক, ও ঝুন্ড-এ তাঁর অভিনয় প্রমাণ করে তিনি অনন্য চরিত্রেও নিজেকে নিখুঁতভাবে মানিয়ে নিতে পারেন। পিকু-তে এক চঞ্চল, কিন্তু স্নেহপরায়ণ বাবার চরিত্র হোক বা পিঙ্ক-এ একজন কড়া আইনজীবীর ভূমিকায়, প্রতিটি চরিত্রে তিনি নিজের অভিনয় প্রতিভা ও আধুনিকতার ছাপ রেখে গেছেন। তিনি আঞ্চলিক সিনেমাতেও নজর কেড়েছেন—যেমন গুজরাটি কমেডি ড্রামা ফক্ত পুরুষো মাতে, তেলেগু মহাকাব্যিক সাই-ফাই কাল্কি ২৮৯৮ এ.ডি., এবং রজনীকান্তের সঙ্গে তামিল অ্যাকশন ড্রামা ভেট্টাইয়ান।
৮৩ বছর বয়সেও যিনি নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন, আসুন দেখে নেওয়া যাক তাঁর সেরা পাঁচটি সিনেমা যা তাঁর অনবদ্য বহুমুখিতা ও পর্দার উপস্থিতিকে তুলে ধরে।
জঞ্জির (১৯৭৩):
অমিতাভ বচ্চনের সুপারস্টার হয়ে ওঠার সূচনা এই ছবি থেকেই। জঞ্জির পরিচয় করায় ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ চরিত্রের সঙ্গে। ইন্সপেক্টর বিজয় খন্নার চরিত্রে তিনি এক নতুন তীব্রতা নিয়ে আসেন পর্দায়। ছবির শক্তিশালী ডায়ালগ, আবেগঘন দৃশ্য ও অ্যাকশন-নির্ভর কাহিনী তাঁকে জাতীয় স্তরের তারকায় পরিণত করে।
দিওয়ার (১৯৭৫):
সালিম-জাভেদ রচিত এবং ইয়শ চোপড়া পরিচালিত এই অ্যাকশন ক্রাইম ফিল্মটি ভারতীয় সিনেমার কালজয়ী ক্লাসিক। বিজয় বর্মার ভূমিকায় বচ্চনের অভিনয় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে আইকনিক। ছবির বিখ্যাত সংলাপ “আজ আমার কাছে মা আছে” আজও সিনেমার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
শোলে (১৯৭৫):
দেওয়ার মুক্তির একই বছরে আসা এই ছবি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক মাইলফলক। ‘জয়’ চরিত্রে, ধমেন্দ্রর ‘বীরু’-র সঙ্গে তাঁর জুটি, এবং সংবেদনশীল অথচ সংযত অভিনয়, ছবিকে কালজয়ী করে তোলে। আজও এই ছবি প্রজন্মের পর প্রজন্ম দর্শকদের মুগ্ধ করে।
ডন (১৯৭৮):
এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চন দু’টি ভিন্ন চরিত্র—একজন নির্মম গ্যাংস্টার ও তাঁর সদালাপী সাদাসিধে ডুপ্লিকেট—অসাধারণ দক্ষতায় রূপায়ণ করেন। ছবির কাহিনির গতি, উত্তেজনা ও ডায়ালগ আজও দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে এবং এটি বহু রিমেকের অনুপ্রেরণা হয়েছে।
কাল্কি ২৮৯৮ এ.ডি. (২০২৪):
চলচ্চিত্র জীবনের এত বছর পরেও বচ্চন দর্শকদের অবাক করে দেন তাঁর অভিনয়ের পরিধি দিয়ে। নাগ অশ্বিন পরিচালিত এই মহাকাব্যিক সায়েন্স-ফিকশন ছবিতে অমিতাভ বচ্চন, কমল হাসান, প্রভাস, দীপিকা পাড়ুকোন ও দিশা পাটানির সঙ্গে অভিনয় করেছেন। আশ্বত্থামার ভূমিকায় তাঁর অভিনয় তার তীব্রতা, পর্দায় কর্তৃত্ব ও অভিনয়শৈলীর জন্য ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
গভীর নাটক থেকে হালকা কমেডি—প্রত্যেক ঘরানার ছবিতে অমিতাভ বচ্চন প্রমাণ করেছেন, প্রতিভার কোনও সীমা নেই, বয়স কোনও বাধা নয়। ২০০-রও বেশি সিনেমার অংশ হয়ে তিনি ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় ও সম্মানীয় অভিনেতা হয়ে উঠেছেন—একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি, যাঁর প্রভাব আজও ভারতীয় সিনেমার গতিপথ গঠনে ভূমিকা রাখছে।
❤ Support Us