Advertisement
  • এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
  • অক্টোবর ১৩, ২০২৫

বাংলার ‘ইউনিটি কনসার্ট’-এর তালিকা থেকে বাদ অনির্বাণের ব্যান্ড, ফের বিতর্কের কেন্দ্রে ‘হুলিগানইজম’

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বাংলার ‘ইউনিটি কনসার্ট’-এর তালিকা থেকে বাদ অনির্বাণের ব্যান্ড, ফের বিতর্কের কেন্দ্রে ‘হুলিগানইজম’

পুজোর মরশুমে বাঙালিকে বিদ্রোহী ‘পুজোর গান’ উপহার দিয়ে, আমেরিকায় শো সেরে সদ্য ফিরেছেন অভিনেতা-পরিচালক-গায়ক অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও তাঁদের ব্যান্ড ‘হুলিগানইজম’-এর সদস্যরা। কলকাতা ফিরতেই পেলেন ‘অপ্রীতিকর’ খবর। আগামী ১ নভেম্বর গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ‘ইউনিটি কনসার্ট’-এর চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ‘হুলিগানইজম’। আর সে খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্ষোভ, কটাক্ষ, ব্যঙ্গ, সব মিলিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।

যেখানে লক্ষ্মীছাড়া, ফসিলস, ইউফোরিয়া, চন্দ্রবিন্দুর মতো ব্যান্ডদের নাম আগেই ঘোষিত হয়েছিল, সেখানে হুলিগানইজম-ও ছিল নিশ্চিত পারফর্মারদের তালিকায়। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যেবেলা তাঁদের অফিসিয়াল পেজে হঠাৎ এক পোস্টে জানানো হয়— ‘অজ্ঞাত’ কারণে বাদ গিয়েছে দলটি। হুলিগানইজম-এর তরফে বলা হয়, ‘তাতে দুঃখ পাইবেন না শ্রোতাগণ। দুর্দান্ত সব ব্যান্ডের ডালি বিদ্যমান। ফসিলস, লক্ষ্মীছাড়া, চন্দ্রবিন্দু এবং ইউফোরিয়া-র আগুনে অনুষ্ঠান জ্বলিয়া উঠিবে। তবে বন্ধুগণ, হুলিগানইজম-এর গান বন্ধ হইবে না।’ পোস্টের পরের অংশে পড়ে উঠেছে ব্যঙ্গের সুর। ‘ইহার পেছনে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি বা কারণ কখনই খুঁজিবেন না। আমরা আগেই বলিয়াছি, পশ্চিমবঙ্গ অরাজনৈতিক রাজ্য ও সাংস্কৃতিক উদারতায় বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছে।’ এই কথাতেই মূলত শুরু হয়েছে বিতর্ক। ভক্তরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই বাদ পড়েছে হুলিগানরা।

সম্প্রতি অনির্বাণদের ব্যান্ড ‘হুলিগানইজম’ একটি গান পরিবেশন করে, যেখানে একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে ব্যঙ্গ করা করার অভিযোগ ওঠে। সরাসরি তৃণমূলের কুণাল ঘোষ, বিজেপির দিলীপ ঘোষ এবং সিপিএমের শতরূপ ঘোষের প্রসঙ্গ আসে অর্নিবাণের গানে। ‘তিন ঘোষ’কে একসঙ্গে ঘষে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ট্রায়ো, যার ভিত্তিতে লেখা গান ‘মেলার গান’। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ গানটির প্রশংসা করলেও, শতরূপ ঘোষ ও দিলীপ ঘোষ শিবিরে রীতিমতো ক্ষোভ। শতরূপ সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনির্বাণকে আক্রমণ করছেন। অন্যদিকে বিজেপি-র অভিযোগ, গানটির কিছু অংশ সনাতন ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। সে অভিযোগেই দলের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি লালবাজার সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। অভিনেতা ও বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ দাবি করেছিলেন, হুলিগানইজমের গান সনাতনীদের অবমাননা করেছে। অনির্বাণকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

বিতর্ক নিয়ে সেসময় সরাসরি কিছু না বললেও, ঘনিষ্ঠ মহলে অনির্বাণ জানিয়েছেন, এসব আসলে ‘ওষুধের সাইড এফেক্ট’। তাঁর মতে, ‘সমালোচনা আসলে সৃজনশীলতার স্বীকৃতি। ব্যথা যত বেশি, ওষুধ তত তীব্র।’ আর এই প্রতিক্রিয়াই হয়তো প্রমাণ করে, হুলিগানইজম শুধুমাত্র গানের দল নয়, বরং বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় এক জোরালো প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। এবার হুলিগানইজমের বাদ পড়া নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বহু শ্রোতা। কারো মতে, ‘ভালো কিছু করতে গেলে বাধা আসবেই।’ আবার কারো বক্তব্য, ‘বাদ দেওয়া মানেই পথটা ঠিক। অতীতে বহু শিল্পকেই এমন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘যে বাংলা একদিন চিন্তাবিদদের জন্ম দিয়েছে, আজ সেখানে স্বাধীন চিন্তা দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।’

তবে এত সমালোচনার মাঝেও কণ্ঠস্বর হারাচ্ছে না ব্যান্ড বলেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অর্ণিবাণ, কৃশানু, দেবরাজরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা অনুরাগীদের আশ্বাস দিয়েছেন, গান চলবে এবং তা চলবে চেনা রাজনৈতিক স্যাটায়ারের ধারা নিয়েই। উল্লেখ্য, পয়লা নভেম্বর, দুপুর ২টো থেকে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে শুরু হতে চলেছে ‘ইউনিটি কনসার্ট-২০২৫’। টিকিটের দাম শুরু হয়েছে ৬৯৯ টাকা থেকে। পারফর্ম করবেন বাংলার উল্লেখযোগ্য ৪টি রক ব্যান্ড— ফসিলস, লক্ষ্মীছাড়া, ইউফোরিয়া এবং চন্দ্রবিন্দু। বাদ পড়েছে হুলিগানইজম। এখন দেখার, পরবর্তী কোন মঞ্চে নতুন কোন চমক নিয়ে ফেরেন অনির্বাণরা।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!