- প্রচ্ছদ রচনা
- ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২
দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করতে চায় সিট, রাজি নয় আনিসের পরিবার
আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল কলকাতা! তাঁর বাবা, সালেম খান চাইছেন সুবিচার। আমিসের পরিবার চাইছে সিবিআই তদন্ত। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিট গঠন করে তাঁদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন । আনিসের দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করতে চায় সিট৷ যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিলেন নিহত ছাত্রনেতার বাবা সহ পরিবারের সদস্যরা৷ এ দিন সকালেই সিট-এর তরফে এই প্রস্তাব দেওয়া হয় আনিসের পরিবারকে৷
আনিসের রহস্যজনক মৃত্যুর পর পুলিশের তরফেই তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়৷ যদিও আনিসের পরিবার অভিযোগ করেছিল, তাঁদের না জানিয়েই ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল৷ এর পর আনিস মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্বভার হাতে পায় সিট৷ তদন্তের স্বার্থে দ্বিতীয়বার আনিসের দেহের ময়নাতদন্তের জন্য আমতা থানায় রিক্যুইজিশন পাঠায় সিট৷
পাশাপাশি বাগনান থানার এসআই সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনীও এ দিন সকালে আনিসের বাড়িতে যায়৷ বেলার দিকে সিট-এর সদস্যরাও সেখানে পৌঁছন৷ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটও সেখানে যান৷আনিসের বাবা সালেম খান বলেন, ‘কীসের জন্য আমরা সাহায্য করব? আমরা নতুন করে ময়নাতদন্তে রাজি নই৷ পুলিশই তো আমার ছেলেকে খুন করেছে৷’ তিনি আরও জানান, একমাত্র সিবিআই তদন্তভার হাতে নিলেই দ্বিতীয়বার ছেলের দেহের ময়নাতদন্তে সম্মতি দেব৷
এরই মধ্যে আনিস খানের দাদা সাবির খান অভিযোগ করেছেন, সিবিআই তদন্তের দাবি তোলায় মঙ্গলবার গভীর রাতে অজানা নম্বর থেকে ফোন করে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে৷এর আগে আনিসের মোবাইল ফোনও সিট-এর হাতে দিতে রাজি হয়নি তাঁর পরিবার৷ সেক্ষেত্রেও তাদের দাবি ছিল, সিবিআই ছাড়া কারও হাতে আনিসের মোবাইল ফোন দেবেন না তাঁরা৷ আনিস খানের পরিবার বার বারই জানিয়েছে, রাজ্য পুলিশের তদন্তে তাঁদের আস্থা নেই৷
আনিস খানের মৃত্যুর তদন্ত প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করলেন রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ ।
বললেন, এই মুহূর্তে সবথেকে বড় যে প্রশ্ন উঠছে, যা সমস্ত রাজ্যবাসীর প্রশ্ন তা হল ওই দিন কি আনিসের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল, নাকি পুলিশের ছদ্মবেশে অন্য কেউ ছিল! এখনও এই প্রশ্নের কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।একটা প্রশ্নের উত্তর পেতে এত দেরি কেন? ভারতীর কথায়—কেন এক্ষেত্রে অনলাইন টিআই প্যারেড করা হচ্ছে না! প্রতিটি পুলিশ কর্মীর ছবি-নাম পরিচয় থাকে পুলিশের ডেটাবেসে। সেই ডেটাবেস নিয়ে গিয়ে আনিসের বাবাকে দেখালেই বোঝা যেত ওই দিন সত্যি কোনও পুলিশ ওই ছাত্রনেতার বাড়িতে গিয়েছিল নাকি ছদ্মবেশে ছিল অন্য কেউ? এই উত্তরটা যখন এত দেরিতে আসে তখনই সন্দেহ বাড়বেই । এটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এত দেরি কেন হবে?প্রাক্তন পুলিশ সুপার আরও বলেন, আজ থেকে ৯ মাস আগে নিরাপত্তা চেয়েছিল আনিস। সেই সময় কয়েকজনের নাম নিয়ে চিঠিও দিয়েছিল সে। এই ক্ষেত্রে নিয়ম হল জিডি নম্বর ধরে পুলিশ অভিযোগকারীর বাড়ি গিয়ে তদন্ত করে। তাঁকে কে মারবে, কেন মারবে তা তদন্ত করা ইনভেস্টিগেশনের প্রাথমিক পর্যায়। এক্ষেত্রে পুলিশ আনিসের বাড়ি যায়নি, তদন্ত করেনি। আনিসের মৃত্যুর পর তাঁর বাবা যখন একাধিকবার ফোন করেছিলেন থানায় তখন থানার তরফ থেকে সবার আগে যে ‘রেসপন্স’ পাওয়ার কথা অর্থাৎ তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছন, ফরেনসিক ডাকা তা করা হয়নি। অর্থাৎ প্রথমে নিরাপত্তা না দেওয়া, মাঝে পুলিশের বেশে আনিসের বাড়িতে কয়েকজনের আগমন, তাঁর মৃত্যু এবং শেষে ঘটনার খবর পেয়েও পুলিশের যে ভূমিকা-এই বিষয়গুলি একসঙ্গে রাখলে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে সবার আগে ওসিকে সরানো উচিত। কারণ ওই থানায় সিসি, জিডি নথিবদ্ধ রয়েছে। প্রয়োজনে এসপি কে সরিয়ে দিয়ে তদন্ত করানো উচিত, যা এক্ষেত্রে হয়নি।
ভারতী ঘোষের সংযোজন, আনিসের পরিবার সিবিআই তদন্ত চাইতেই পারেন। এই দাবি রাখা তাঁদের অধিকার। কেন তাঁদের এই দাবি দমনের চেষ্টা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
❤ Support Us