- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ২৩, ২০২৫
উপনির্বাচনে মোড় ঘোরানো ফলাফল: গুজরাটে বিজেপি, কেরালায় কংগ্রেস, পাঞ্জাবে আপ, কালিগঞ্জে ২০ হাজারের বেশি লিড তৃণমূলের, কংগ্রেসকে টেক্কা দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি

দেশব্যাপী ৫টি বিধানসভা আসনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনের ভোটগণনায় স্পষ্ট হল দেশের বর্তমান রাজনৈতিক মানচিত্রে যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছিল, তা কতটা বাস্তব। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া গণনায় দেখা গেল, গুজরাটে বিজেপি তাদের পুরনো দুর্গ পুনরুদ্ধারের পথে, কেরালায় কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জোরদার বার্তা দিচ্ছে, পাঞ্জাবে আপ ধরে রাখছে নিজের জায়গা, আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল তাদের সংগঠনের শক্তি আবারো প্রমাণ প্রমাণ করছে।গুজরাটের উপনির্বাচনের ২টি আসন—বিশাভাদার ও কাদি, বিশেষ নজরে ছিল ভোট বিশ্লেষকদের। বিশাভাদার আসনটি দীর্ঘদিন বিজেপির নাগালের বাইরে ছিল। কিন্তু এবারের উপনির্বাচনে কিরীট প্যাটেলকে সামনে রেখে বিজেপি যে ভাবে ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছে, তা উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসাবেই বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ ১৮ বছর পর এই আসনে জয় পেতে চলেছে গেরুয়া শিবির। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আপের গোপাল ইতালিয়া এবং কংগ্রেসের নীতিন রনপরিয়া, তবে এই মুহূর্তে দুজনেই অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছেন। বিশাভাদারে বিজেপির এই সাফল্য রাজ্যে তথা দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখে যেতে পারে। একই ছবি কাদি আসনেও। রাজেন্দ্র চাভদা বিজেপির টিকিটে এগিয়ে আছেন, যা বিজেপির প্রতি দলিত ভোটব্যাঙ্কের আস্থার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কংগ্রেস ও আপ উভয়ের প্রার্থীকেই সেখানে কার্যত খড়কুটোর মতো ভাসতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, বামশাসিত কেরালার নিলাম্বুরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর হাত ধরে কংগ্রেস রাজনীতির ময়দানে ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনী লিখতে শুরু করেছে। এই আসনটি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ওয়ানাড় লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেসের জাতীয় রাজনীতিতে শক্তিপ্রকাশ আর ইন্ডিয়া জোটের ক্ষেত্রে নিজেদের পোক্ত অবস্থানের প্রদর্শনের দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল এই কেন্দ্রের উপনির্বাচন। কংগ্রেসের তরফে প্রার্থী করা হয়েছিল অভিজ্ঞ নেতা আর্যাদান শওকতকে। পাসাপাশি, লড়াইয়ের ছিলেন এলডিএফ-এর প্রার্থী এম স্বরাজ, আর বিজেপি অ্যাডভোকেট মোহন জর্জ। তবে শুরু থেকেই শওকত যে ছন্দে ছিলেন, তা বজায় রেখেই ভোটের শেষপর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন। প্রসঙ্গত , ২০২১ সালে এই আসনটি মাত্র ২৭০০ ভোটে জিতেছিলেন বাম-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী পি ভি আনোয়ার, যিনি পরবর্তী সময়ে তৃণমূলে যোগ দেন।
পাঞ্জাবের লুধিয়ানা ওয়েস্ট বিধানসভা কেন্দ্রে আপ ফের একবার প্রমাণ করল, রাজ্যে এখনও তাদের শিকড় সমূলে ছিন্ন হয়নি। একাধিক সমস্যায় জর্জরিত মান সিংয়ের দল, এবারে প্রার্থী হিসেবে সঞ্জীব অরোরাকে নিয়ে প্রথম থেকেই আশাবাদী ছিল। আপ নেতা গুরপ্রীত বসি গগির আকস্মিক মৃত্যুর পর এই আসনটি শূন্য হয়, যা দখলে রাখাটা আম আদমি পার্টির কাছে মর্যাদা রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নির্বাচনের প্রাক্কালে আপের শীর্ষ নেতৃত্ব—অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীষ সিসোদিয়া ও আতিশি— সক্রিয় প্রচারে নেমে বোঝাতে চেয়েছিলেন, এই উপনির্বাচন তাঁদের জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। ফলাফল অন্তত সে প্রচেষ্টারই প্রতিফলন। কংগ্রেসের ভারত ভূষণ আশু আর বিজেপির জিওন গুপ্ত যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। বিশাল ফারাকে এগিয়ে রয়েছেন সঞ্জীব আরোরা।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের কলিগঞ্জে আবারও জয় সুনিশ্চিতের পথে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রার্থী আলিফা আহমেদ—প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের কন্যা—প্রথম থেকেই দাপট দেখিয়ে এগিয়ে রয়েছেন। গণণা চলছে, এই মুহূর্তে ২০ হাজারের বেশি লিড রয়েছে তৃণমূলের। চমক দিয়ে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। নবম রাউন্ডের শেষে কালীগঞ্জে তৃণমূল পেয়েছে ৪২ হাজার ৩৪৮ ভোট, বিজেপি পেয়েছে ১৮ হাজার ৯৫ ভোট এবং কংগ্রেস প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১৫ হাজার ০৭। প্রায় ৫৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত এই আসনে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক যে অপ্রতিরোধ্য, তা কালীগঞ্জ আবার ঘোষণা দিচ্ছে। কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থী যথাক্রমে কাবিল উদ্দিন শেখ ও আশীষ ঘোষ তৃণমূলের রণনীতি ও দীর্ঘমেয়েদি প্রকল্প আর উন্নয়নের সামনে ধোপে টিকতে পারেননি।
দেশজুড়ে ৫ আসনের এই উপনির্বাচন শুধু আসন দখলের চেষ্টা নয়, কারণ এতে রাজ্যরাজনীতির বিশেষ কোনো রদবদল ঘটবে না, তবে ২০২৬ সালে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে এবং ২০২৯ সালের লোকসভা ভোট। তার আগে বিজেপি, কংগ্রেস, আপ ও তৃণমূল— সহ প্রধান সব রাজনৈতিক দল নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে, সংগঠনের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণে নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
❤ Support Us