- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মার্চ ১২, ২০২৪
নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার গেরুয়া চক্রান্ত, সিএএ নিয়ে রাজ্যবাসীকে সাবধান করলেন মুখ্যমন্ত্রী
হাবড়ার সভা থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে নাগরিকদের সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, নয়া আইন শুধুই ভাওতা । রাজ্যের, দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার গেরুয়া চক্রান্ত । মঙ্গলবার হাবড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নাগরিকত্বের জন্য কেউ কেন্দ্রের কাছে আবেদন করবেন না । তাহলেই ওরা নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে আপনাকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলবে । আপনার সম্পত্তি কেড়ে নেবে । সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন । ওই ফাঁদে খবরদার পা দেবেন না!’
২০১৯ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর, সংসদে সংখ্যাধিক্যের জোড়ে এই আইন পাশ করায় । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগুর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে । সোমবারই সিএএ রুল জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । গতকাল নবান্ন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে ছিলেন, কোনো শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে বৈষম্য হলেই তিনি প্রতিবাদ করবেন । আজ উত্তর চব্বিশ পরগণার হাবড়ার সরকারি সভা থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে কেন্দ্রের সরকারকে তীব্র ভাষায় বিঁধেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায় । তিনি বলেন, এই নয়া রুলের কোনো স্বচ্ছতা নেই। মানুষকে বিভ্রান্ত করে নির্বাচনে ফায়দা লুটতে চাইছে বিজেপি । নির্বাচনের আগে এটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ।
আজ হাবাড়ার সভা থেকে তিনি রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দ্যেশে প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনারা কী বিশ্বাস করেন এই আইনটাতে ।’ কেন্দ্রীয় সরকারের নাম না করেই মমতা এদিন বলেন, ২০২০ সালে তো আইন পাশ হয়েছিল, এতদিন কেন করেনি । যাঁরা নতুন করে আবেদন করবেন, তাদের বৈধ নাগরিকত্বের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে । ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন । বিজেপি নির্বাচনের আগে নানা প্রলোভন দেখাবে, বলবে আপনাদের অধিকার যাবে না । কিন্তু ওরা মিথ্যা কথা বলছে । কাল থেকে উত্তর পূর্ব ভারতের লোক কাঁদছে, হিন্দুরাও কাঁদছে । কারণ আসামে যখন এনআরসি, ক্যা হয়েছিল, ১৯ লক্ষের মধ্যে ১৩ লক্ষ্য হিন্দুরাও বাদ হয়ে গিয়েছিল । এরপর বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘নীতি যদি স্বচ্ছ হত, তাহলে মতুয়াদের আধার কার্ড কাটতে গিয়েছিলেন কেন ? নমশুদ্রদের আধার কার্ড বাতিল করেছিলে কেন, এটা পরিষ্কার রাজনীতির খেলা । আর যদি করতেই হতো তবে একবছর আগে করতেন, দেখতাম মানুষ সত্যি তার অধিকার পায় কিনা ? ফর্মে একজায়গায় বলা হয়েছে বাবার বার্থ সার্টিফিকেটও নিয়ে আসতে হবে । আমি তো আমার বাবা মায়ের জন্মদিন কবে তাই জানিনা । আমার মতো আরো অনেক পরিবার আছেন । যাঁদের এখন ৫০-৬০ বছর বয়স, তাঁদের সবার বাবার বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমি মনে করি এটা পুরোপুরি ভাওতা । ’
এদিনের সভা মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, আমরা থাকতে কোনো ডিটেশন ক্যাম্প করতে দেব না, কারো অধিকার কাড়তে দেব না । আমি সব রাজ্যকে বলবো আপনারাও একে একে তৈরি হন ।’ এরপরই তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম উল্লেখ না করেই বলেন, কী করেছেন মতুয়াদের জন্য, বাংলাদেশে গিয়েও তো প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন । মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা অসুস্থ হলে আমরাই চিকিৎসা করেছি, মতুয়া সম্প্রদায়ের নামে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আমরাই করেছি । ফলে কোনো ভাবেই রাজ্যের একজন নাগরিকেরও অধিকার কেড়ে নিতে দেব না । যদি কোনদিন সুযোগ আসে, সারা ভারতেও যাতে সিএএ কার্যকর না হয় তার ব্যবস্থা করবো । তিনি বলেন, এটা দেশের নাগরিকদের অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত । কেউ নাকরিকত্ব পাবে কিনা সন্দেহ আছে। উল্টে তাদের এনআরসির আওতায় নিয়ে যাওয়ার ছক কষেছে বিজেপি । সম্পত্তির অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে ।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনের সভা মঞ্চ থেকে বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের রুল নিয়ে তিনি আইনজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছেন । তারা জানিয়েছে এটা অসাংবিধানিক । নয়া সিএএ ফর্মে অভিভাবকদের জন্ম শংসাপত্র চাওয়া হয়েছে । সেটা তো বেশীরভাগ মানুষের কাছেই নেই । আসলে এটা বিজেপির বাংলাকে ভাগ করার খেলা । এটা বিজেপির জুমলা । এটা করা হয়েছে মানুষকে হয়রান করার জন্য । আর দুটো-তিনটে সিট জেতার জন্য । পাশাপাশি, রাজ্যের নাগরিকদের অভয় দিয়ে বলেছেন,‘ওদের আইনটাকে সরিয়ে ফেলে দিন । কোনও ভাঁওতায় পা দেবেন না । তা হলে এ কূল-ও কূল দু’কূল যাবে। জমিদারদের বিরুদ্ধে আমি আপনাদের পাহারাদার ।’ তিনি আরও বলেন পাঞ্জাবিদের খালিস্থানি, মুসলিমদের পাকিস্তানি, বাঙালি দেখে ওরা বাংলাদেশি বলে অপমান করছে । আমরা সব ধর্ম পালন করি । প্রতিবাদ আমরা করতে জানি । কাউকে নতুন করে উদ্বাস্তু হতে দেব না, তাদের পাট্টা দিচ্ছি, যাতে রাতা অধিকার পায় । জোট বাধুন, কোনো ভাওতায় পা দেবেন না । আপনারা কেউ বেআইনি নয় ।
এদিনের সভা থেকেও আরো একবার কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া টাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওরা টাকা আটকে রেখেছে । রাজ্য নিজের অর্থে ২২ হাজার রাস্তা করেছে । ৪৭ লক্ষ বাড়ি গড়েছে । কেন্দ্র এখাতে টাকা না দিলে আর ১১ লক্ষ বাড়ি রাজ্যই গড়ে নেবে ।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, বিজেপি মেরুকরণ-এর লক্ষ্যেই সিএএ কার্যকর করার জন্য নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তেকে বেছে নিয়েছে । বাংলার পাশাপাশি, কেরলা, উড়িষ্যা সহ বিভিন্ন রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন জাড়ি করা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিরোধী দলগুলি । মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশাপাশি কেরেলার মুখ্যমন্ত্রী পিনারই বিজয়নও সে রাজ্যে সিএএ আইন লাগু না করার ঘোষণা করেছেন ।
❤ Support Us