- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলই লড়বে, দেগঙ্গার সভা থেকে বার্তা মমতার

ইন্ডিয়া থাকবে, তবে বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলই লড়বে, দেগঙ্গার সভা থেকে ঘোষণা তৃণমূলনেত্রীর। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু সকলকে বিজেপি, সিপিএমের ভাঁওতায় ভুলতে নিষেধ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনা ধরা পড়ল না তাঁর গলায়। তবে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে, বলা যায় নির্বাচনের আগে যে রূপে তিনি অবতীর্ণ হয়, ঠিক সেই “অগ্নিকন্যা” হিসাবেই বৃহস্পতিবার দেগঙ্গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষণ দিলেন। বিজেপিকে চোর বলে নিশানা করলেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র আটকে রাখছে বলে অভিযোগও করতেন কড়া ভাষায়।
এদিন উত্তর ২৪ পরগণার দেগঙ্গার সভা থেকে বিজেপিকে কড়া ভাষায় নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলনেত্রী যেন তাঁর “অগ্নিকন্যা” রূপে আবার ফিরে এসেছিলেন বৃহস্পতিবার। তাঁর বক্তব্য, শরীরিভাষা বারবার সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। বিজেপি ও সিপিএমকে একসঙ্গে বিঁধে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “ইন্ডিয়া জোট থাকবে। ওরা আর জদিন ক্ষমতায় থাকবে? বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলই লড়বে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে বাংলায় তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের ক্ষীণ সম্ভাবনাও সম্ভবত নস্যাৎ হয়ে গেল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “তৃণমূলের সবাই চোর, তোরা সাধু? তোরা তো চোরের মা, চোরের মায়ের বড় গলা! ভোটটা যাতে না করা যায় তার জন্য সবাইকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বালুকে গ্রেফতার করেছে, ভোট করতে দেবে না বলে। টাকা, সোনা যা নিয়ে যাচ্ছে তা ফেরত দিচ্ছে না।”
এরপরই তৃণমূলনেত্রীর হুঙ্কার, “এদের উৎখাত করতে ডাক দিয়ে যাই, যুব, মহিলাদের বাড়ি থেকে বার হতে হবে। বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল একা লড়বে। সিপিএম, বিজেপি এক হয়ে এখন তৃণমূলকে চোর বলছে। বিজেপি, সিপিএম মানুষের জন্য কিছু করেনি। ৩৪ বছর একটা জড় পাথর হয়ে ছিল। মনে আছে বিজেপি বলেছিল সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা করে দেবে, নোট বন্দি করে বলেছিল কালো টাকা উদ্ধার করবে, কিছু হয়েছে? সব টাকা বিজেপির কাছে গেছে। একটাও ওদের চোর, ডাকাতকে ধরেছে? মনে রাখবেন আমার কাছে সব মানুষ প্রিয়। সব মানুষকে নিয়ে আমি ঘর করতে পারি। কালীঘাটের মন্দির, তারাপীঠ, অনুকূলচন্দ্র, জল্পেশ মন্দির, ফুরফুরা শরিফ সব করে দিয়েছি। এসব নিয়ে কেউ আগে ভাবেনি। হজযাত্রীদের সহায়তা দিচ্ছি।”
এর পরই বিজেপির ধর্ম ও রাজনীতিকে মিলিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “কেউ যদি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তাদের বলছি, বিজেপির টাকায় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করবেন না।”
গত নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বিজেপি টাকা দিতে এলে নিয়ে নেবেন।” বৃহস্পতিবার তিনি বললেন, “এবারও দেখবেন নির্বাচনের আগে হোটেল, রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে, টাকা নিয়ে চলে আসবে। ভালো ভালো কথা বলবে। ভুলে যাবেন না। আমি বলছি না টাকাটা নিয়ে নেবেন। সেটা আপনাদের বিষয়। তবে মনে রাখবেন যে টাকা ওরা দেবে সেটা আপনাদেরই টাকা।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন উত্তর ২৪ পরগণার দুই নেতা সোমনাথ শ্যাম ও অর্জুন সিংয়ের নাম না করে তাঁদের সতর্ক করে দেন, কারণ এই দুই নেতা এখন পারস্পরিক বিবাদে জড়িয়েছেন। মমতা বলেন, “নিজের ভালো নয়, রাজনীতি করে মানুষের ভালো করুন। নিজেদের দলের ঊর্ধ্বে ভাবনেন না। আমি অনেক মার খেয়ে, হেঁটে এখানে পৌঁছেছি।” মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, দল করতে এসে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে সোমনাথ-অর্জুন যা করছেন, তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, এটা চলতে দেওয়া যায় না।
এরপর উত্তর ২৪ পরগণায় তৃণমূলের একটি কোর কমিটি ঘোষণা করে দেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেত্রী নির্মল মুখার্জি, পার্থ ভৌমিক, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু, এটিএম আবদুল্লা সহ ১৫ জনকে নিয়ে একটা কোর কমিটি গঠন করে দেন। তিনি বলেন, “উত্তর ২৪ পরগণার ৫টি কেন্দ্রেই নজর রূখতে হবে। মনে রাখবেন ভুল করে সিপিএম,বিজেপিকে ভোট দেবেন না। সংখ্যালঘুরা সাবধান, মনে রাখবেন আপনাদের সব আমরা করেছি। বাংলাটাকে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে রাখতে হবে,না হলে বিপদ। সিএএ নিয়ে যা বলছে তাতে ভুল বুঝবেন না। আমি আপনাদের পাহারাদার ছিলাম, আছি, থাকব। এই জেলার সব জানি। ছাত্রযুবদের সঙ্গে আনুন। পুরনোদের ডেকে নিন, পুরনো-নতুন সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।”
এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান দিয়ে বলেন, “অলিগলি মে শোর হ্যায়, বিজেপি চোর হ্যায়।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অসংখ্য জনতা গলা মেলালেন। শেষে মঞ্চ ছাড়ার আগে তিনি বলে গেলেন, “আবার দেখা হবে, আমি রাস্তায় আছি।”
❤ Support Us