Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩

বিস্ফোরক স্যাম পিত্রোদা: ২৪ এর নির্বাচনে ইভিএম কারচুপি করেই সাফল্য নিশ্চিত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বিস্ফোরক স্যাম পিত্রোদা: ২৪ এর নির্বাচনে ইভিএম কারচুপি করেই সাফল্য নিশ্চিত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ঠিক করা না হলে বিজেপি ৪০০ আসনে জিতবে বলে মন্তব্য করলেন বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার স্যাম পিত্রোদা। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আব্দুল্লা, বামপন্থীরা ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, বলেছেন ইভিএম-এর মাধ্যমে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন হলে প্রযুক্তিগত ভাবে রিগিং হতে পারে, কারণ ইভিএম-এ সমস্যা আছে। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর বিরোধীদের এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে। স্যাম পিত্রোদা এই রাজনৈতিক নেতাদের ধারণার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বলেছেন, “আমি মনে করি হ্যাঁ, এটা হতেই পারে, কারণ যেভাবে ইভিএমকে ভিভিপ্যাট-এর সঙ্গে ডোঙ্গেল দিয়ে যুক্ত করা হয়, যে ভাবে ভিভিপ্যাট কাজ করে, তাতে ইভিএম মোটেই স্ট্যান্ডঅ্যালোন বা একা চলার উপযোগী মেশিন আর থাকে না।”

সিটিজেন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে স্যাম পিত্রোদা বলেছেন, “এই রিপোর্ট পড়লে বুঝতে পারবেন ইভিএম বিষয়টা কত জটিল। এই রিপোর্টে ৬৫০০ জন নাগরিক স্বাক্ষর করেছেন, যাঁরা ইঞ্জিনিয়ার, আইএএস , বিজ্ঞানী ও অন্যান্য পেশার মানুষ। এই রিপোর্ট পড়ে আমি আইআইটি ও মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রের বিজ্ঞানী, গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে ইভিএম-এ ত্রুটি আছে। ভিভিপ্যাট মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রথমে শুধুই ইভিএম মেশিন ছিল। তখন একটা বোতাম টিপেই ভোট দেওয়া যেত। ২০১৪ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ছিল। ২০১৪-র পর ইভিএম-এর সঙ্গে ভিভিপ্যাট যুক্ত করা হল। তখন দুটো বোতাম টিপে ভোট দেওয়া সেই থেকে শুরু হল। যখনই ভিভিপ্যাট ইভিএম-এর সঙ্গে যুক্ত করা হল, তখন থেকে ইভিএম আর এক চলার উপযোগী মেশিন রইল না। এবার এই ভিভিপ্যাট-এর মধ্যে সফটওয়ার , হার্ডওয়ার সবই আছে। ডোঙ্গেল দিয়ে যুক্ত ওই যন্ত্রে ইঞ্জিনিয়াররা  প্রোগ্রাম করে দেন কোনটা বিজেপির প্রতীক, কোনটা কংগ্রেসের প্রতীক ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আপনি যখন ভোট দিলেন তখন ভিভিপ্যাট থেকে যে ছাপা কাগজের স্লিপ বার হয় তাতে ছাপা তথ্য ৭ থেকে ১০ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয় না। ভিভিপ্যাট থেকে এই ছাপা কাগজের ভোটদানের স্লিপ মেশিনের মাধ্যমে গিয়ে ভিভিপ্যাট-এর বাক্সে পরে। তাই ভোটারের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় তিনি কোন স্লিপ দেখলেন আর ভিভিপ্যাট-এর বাক্সে কি জমা পড়ল। কারণ ওই প্রিন্টারের থেকে যে স্লিপ বার হয় তাতে ছাপা বিষয়গুলি সামান্য কয়েক সেকেন্ড ওই ৭ থেকে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্পষ্ট থাকে, থার্মাল প্রিন্ট হওয়ার কারণে সামান্য সময় পরে সব ছাপা মুছে যায়। তাই সিটিজেন ফোরাম অফ ইন্ডিয়া কমিশনকে এই প্রিন্টার বদল করতে বলেছে, যাতে ওই ভোটদানের স্লিপের ওপর ছাপা তথ্য ৫ বছর থাকে অক্ষত অবস্থায় থাকতে পারে। ভোটারকে ওই স্লিপ দেওয়ার কথাও সিটিজেন ফোরাম অফ ইন্ডিয়া বলেছে, এবং এটাও বলা হয়েছে যাতে ওই স্লিপ কোনও ইলেক্ট্রনিক মেশিনের মাধ্যমে কোনও বাক্সে না পৌঁছতে পারে। তারপর ইভিএম-এ দেওয়া ভোট আর ভিভিপ্যাট-এর স্লিপ মিলিয়ে নিলেই সহজ হয়ে যায় কে, কাকে ভোট দিয়েছে, কে কত ভোট পেয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এসব শুনছে না। কমিশন এই আবেদন শুনছে না বলেই আমার সন্দেহ আরও বেড়েছে। এর ফলে ইভিএম-এ মানুষের বিশ্বাসের ঘাটতি হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের উচিত মানুষের কাছে ইভিএম-এর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো। কেন না নাগরিক হিসেবে আমার ভোট গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান। আমি যে ভোট আপনাকে দিচ্ছি তা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা নির্বাচন কমিশনের কাজ। এটাকে হালকা ভাবে নেওয়া মোটেই উচিত নয়। তাই ২০২৪-এর লোকসভা ভোট এই বিশ্বাস নিয়েই নির্বাচন কমিশনকে ভোটে যাওয়া উচিত যাতে নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের এই বিশ্বাস তৈরি হয় যে, হ্যাঁ, আমার ভোট সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে বা হচ্ছে। এই কাজটা নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ সংস্থা। তার সরকারের কথা শোনা উচিত নয়। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তারা বলুক যে এটা নির্বাচন কমিশনের এটা দায়িত্ব। কমিশন জনসাধারণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে বাধ্য। কিন্তু এসব কেউ শুনছেই না। এই কারণেই আমার চিন্তা বাড়ছে।”

তবে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে একটি রাজ্যে কংগ্রেস জিতেছে। তার আগে হিমাচল, কর্ণাটকে কংগ্রেস জিতেছে। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে কংগ্রেস হারলেই ইভিএম-এর ত্রুটি বলা হচ্ছে না তো? এই প্রসঙ্গে স্যাম পিত্তদা বলেন, “কে জিতলেন, কে হারলেন সেটা প্রশ্ন নয়। যদি আপনি গরমিল করে থাকেন তাহলে সব জায়গায় আপনার জেতার দরকার পরে না। তাই বলছি এই প্রশ্ন কে জিতল, কে হারল, কংগ্রেস বা বিজেপির বিষয় নয়। এটা নাগরিকের ভোটের প্রশ্ন, এটা সরকারকেও প্রশ্ন করা নয়, প্রশ্ন নাগরিকরা যে ভোট দিচ্ছেন তার সুরক্ষার। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোট সঠিক ভাবে সংরক্ষণ বা পরিচালনা করছে কি না তার। কারও যদি মনে হয়, নির্বাচন কমিশন তাঁর ভোট সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করছে না, সেই সময় নির্বাচন কমিশনের উচিত বিষয়টি যে তারা সঠিক ভাবেই পরিচালনা করছে তা প্রমাণ করে দেওয়া। কমিশন যদি সঠিক ভাবে কারও ভোট সংরক্ষণ করে তাহলে চাওয়ামাত্র ভোটারকে তাঁর ভোটাদানের স্লিপ দিয়ে দেওয়া এবং ভোট দেওয়ার পরে ভিভিপ্যাট-এ যে ভোটদানের স্লিপ জমা হয়েছে সেগুলি গণনা করে ভোটারের সন্দেহের নিরসন করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বলতে পারে সময় লাগবে, লাগুক না, তিনদিন থেকে পাঁচদিন বাড়তি সময় লাগতে পারে, তার বেশি তো নয়। তাতে কি এমন হয়ে যাবে?  আমি বলছি না কারচুপি অমুকে  করেছে। আমি কারও দিকে আঙ্গুল তুলছি না। আমি এটাই বলছি যে এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ইভিএম এবং তার সঙ্গে ভিভিপ্যাট সংযোগ করে যে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটা নির্ভুল বা পরীক্ষিত নয়। বহু মানুষ বলছেন ইভিএম-এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বা অন্যভাবে কারচুপি করা হতে পারে। আমি বলছি কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা। তবে একটা সাধারণ বিষয় বলাই যায় যে আমি যে ভোট দিলাম সেই ভোটদানের স্লিপ পাঁচ দিন পর আর পড়া যাচ্ছে না, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এই ভোটদানের স্লিপ এমন একটি বাক্সে পৌঁছে যায় যেটা ইলেক্ট্রনিক্যালি হচ্ছে। এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ৭ থেকে ১০ সেকেন্ড মেয়াদের এই ভোটদানের স্লিপও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই বিষয়টা যদি স্বচ্ছ হয় তাহলে বিষয়টা নিয়ে ভোটাররা যা বলছেন সেটাই নির্বাচন কমিশন করুক, কোনও সমস্যা তাহলে থাকে না। তার পর দেখা যাবে কে জিতছে, কে পরাজিত হচ্ছে। এটা চলতেই থাকবে। আজ একজন জিতবে, কাল অন্যজন জিতবে, এটাই তো গণতন্ত্র। তাই যে জিতল কে হারল তা নিয়ে কোনও গোলমাল না করে সঠিক কাজটা করা উচিত।”

কি ভাবে এই ভুল প্রমাণ হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে স্যাম পিত্রদা বলেছেন, “খুব সহজ বিষয়, সিটিজেন কমিশনের রিপোর্টে যা লিখেছে তাতে বলা হয়েছে কেউ ভোট দেওয়ার পর তাঁর ভোটদানের স্লিপটা তাঁকে দেওয়া হোক। তিনি সেটা বাক্সে ফেলবেন। তারপর ইভিএম এবং ওই ভোটদানের স্লিপ গণনা করে ভোটের ফলাফল যাচাই করে ইভিএম ও ভোটদানের স্লিপ যদি মিলে যায় তাহলেই সব ঠিক প্রমাণ হয়ে যাবে। তাই প্রিন্টার বদল করে ভোটদানের স্লিপ ভোটারদের দেওয়া হোক। ভোটদাতা সেই স্লিপ একটি বাক্সে ফেলুক। তারপর ভোট গণনার সময় ইভিএম এবং ওই ভোটদানের স্লিপ মিলিয়ে দেখা হোক কত ভোট কে পেয়েছেন। যদি দেখা যায় ইভিএম ও ভোটদানের স্লিপ সমসংখ্যক হচ্ছে তাহলেই সত্যতা প্রমাণ হয়ে যাবে। আর কোনও সমস্যা থাকবে না। এটা করলে জনসাধারণের ইভিএম-এর উপর, নির্বাচন কমিশনের উপর বিশ্বাস, ভরসা বেড়ে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলি কি করতে চান সেটা তাদের বিষয়। আমি একজন ইলেক্ট্রনিক জ্ঞানসম্পন্ন পেশাদার ইঞ্জিনিয়ার মানুষ এবং দেশের নাগরিক হিসেবে বলছি, এই সিটিজেন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টের গুরুত্ব দিন। কোনও ভাবেই এই রিপোর্টকে অবজ্ঞা করা ঠিক নয়।”


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!