- এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- অক্টোবর ১৬, ২০২৫
সম্পদ তালিকায় দেশের প্রথম দশে কিং, তবুও কেন ক্ষতিকর পণ্যের প্রচারমুখ ? শাহরুখকে খোঁচা ইউটিউবার রাঠীর

দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী সিনেমা তারকাদের একজন। দশকের পর দশক ধরে রুপোলি পর্দা কাঁপানো ‘বলিউড বাদশা’ শাহরুখ খান আজ কেবল একজন অভিনেতা নন, কিংবদন্তি। আর্থিক শক্তিকেন্দ্রও তাঁর পোক্ত হাত। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা সংস্থা, ক্রিকেট টিম মালিকানা থেকে শুরু করে একাধিক ব্র্যান্ডের মুখ হয়ে আজ তাঁর যা আয়, তা আমজনতার কল্পনাতীত। সেই অঢেল অর্থসম্পদের সূত্র ধরেই এবার উঠ প্রশ্ন। শাহরুখের ক্ষতিকারক ‘পানমশলা’র বিজ্ঞাপন নিয়ে তীব্র সমালোচনায় মুখর জনপ্রিয় ইউটিউবার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ধ্রুব রাঠী।
সম্প্রতি প্রকাশিত, ‘ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট-২০২৫’ অনুযায়ী, শাহরুখ খানের মোট সম্পদের পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিপুল সম্পত্তির ভিত্তিতে রাঠীর সোজাসাপটা প্রশ্ন— এই অর্থই যখন রয়েছে, তখন আরও ১০০-২০০ কোটির বিজ্ঞাপনী টাকার লোভ কি রাখা যায় না? একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাঠী অঙ্ক কষে বোঝাচ্ছেন— যদি শাহরুখ খান তাঁর সমস্ত সম্পদ শুধু ব্যাংকে রেখে দেন, এবং সে টাকায় মাত্র ৭ শতাংশ হারেও সুদ মেলে, তবুও তাঁর বছরে আয় হবে প্রায় ৮৭০ কোটি টাকা। কর বাদ দিয়েও হাতে থাকবে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। রাঠীর প্রশ্ন, ‘এই অবস্থায় কি আরো ১০০-২০০ কোটি টাকার দরকার আছে তারকার ? যদি না থাকে, তবে পানমশলা জাতীয় ক্ষতিকর পণ্যের হয়ে তিনি আজ প্রচার কর চলেছেন কেন?’
My question to Shah Rukh Khan.@iamsrk pic.twitter.com/MZjCbsIkjx
— Dhruv Rathee (@dhruv_rathee) October 15, 2025
২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে ধ্রুব বলেছেন, সে সময় শাহরুখ খান বছরে প্রায় ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা আয় করতেন এ ধরণের বিজ্ঞাপন করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ গুণে— আজকের দিনে যা ১০০ থেকে ২০০ কোটিও হতে পারে। এ প্রসঙ্গেই রাঠীর তির্যক মন্তব্য— ‘আত্মসমীক্ষা করে এক বার ভাবুন তো, অতিরিক্ত এ আয় আপনার কি সত্যিই দরকার আছে? না কি এর চেয়েও বড়ো কিছু করতে পারেন আপনি? ধরুন, আপনি যদি এই বিজ্ঞাপন থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলেই তো একটা শক্ত বার্তা যাবে দেশবাসীর কাছে। আপনি তো শুধু অভিনেতা নন, আপনি এক জন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বও।’
ধ্রুব রাঠীর এমন বক্তব্য ঘিরে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বহু মানুষ তাঁর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় অভিনেতা যদি এমন একটি পণ্য, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সেটির প্রচার বন্ধ করেন, তবে জনসচেতনতার পক্ষে তা হবে বিরাট এক পদক্ষেপ। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের প্রচার দেশের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে। যাঁদের উপর দেশ অনেকাংশে নির্ভর করছে, তাঁরাই যদি ক্ষতিকর পণ্যের মুখ হয়ে ওঠেন, তবে দায় এড়ানো যায় না। তবে প্রবল সমালোচনার পাল্টা যুক্তিও শোনা যাচ্ছে অন্য পক্ষ থেকে। তাদের একাংশের দাবি, এ ধরনের বিজ্ঞাপন অনেক সময় বহু বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকে। সে সব চুক্তির মধ্যে নানা আইনি জটিলতাও থাকে। মাঝপথে চুক্তি ভাঙা মানেই ক্ষতিপূরণ, কখনো বা দীর্ঘদিনের আদালতের মামলা। তাছাড়া, অনেকের মতে, এই সব পণ্য বাজারে বৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে, সরকারি অনুমোদন রয়েছে এবং আইনি দিক থেকে তারা ব্র্যান্ড হিসেবে কার্যত ‘পান মশলা’ বা ‘এলাচ’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। সুতরাং বিজ্ঞাপন অপরাধ কিছু নয়। গুটকা কোম্পানি গুলোর বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ নিক, কারখানা বন্ধ করুক, তাহলেই আর বিজ্ঞাপিত হবে না। কিন্তু সরকার তা করবে না, কারণ এসব কোম্পানি বছরে কয়েকশো কোটি টাকা ট্যাক্স দেয়, রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনে লড়তে বিপুল অর্থসাহায্য করে।
অন্য আরেক এক দল বলছেন, শাহরুখ খানের ‘নেট ওয়ার্থ’ যতই বেশি হোক না কেন, তার সবটা কিন্তু হাতে থাকা নগদ নয়। বিনিয়োগ, সম্পদ, শেয়ার ও ব্যবসার ভিতর দিয়েই এই সম্পদের হিসেব দাঁড় করানো হয়। আর এ কারণে অনেক সময় তারকারা অতিরিক্ত আয়ের উৎস ছাড়তে চান না, বরং ভবিষ্যতের জন্য সেসব অর্থ নিরাপদ রাখেন। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শাহরুখ খান নিজে বা তাঁর ম্যানেজমেন্ট টিমের তরফে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। যদিও বিতর্ক এই প্রথম নয়, শাহরুখকে আগেও বহু বার বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। উল্লেখ্য, অমিতাভ বচ্চন নিজেও এক সময় একই ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপনে যুক্ত ছিলেন। পরে নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টে সেই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ভেঙে দেন তিনি। জানিয়ে দেন, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের পণ্য প্রচার করবেন না। অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগানের মতো তারকারাও ‘পানমশলা’র বিজ্ঞাপন করে থাকেন। এবার শাহরুখ কী করবেন? দেশজুড়ে এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। ‘বাদশা’র মতো এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আয়ের উৎস ছেড়ে অবশেষে সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকেই এগোবেন? নাকি বেছে নেবেন নীরবতার কৌশল?
❤ Support Us