- এই মুহূর্তে দে । শ
- জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
ইন্ডিয়া জোট ঘিরে অনিশ্চয়তা। গেরুয়া শিবিরের হাত ধরে আজই কি নীতীশের ইস্তফা
লোকসভা ভোটের আগেই কি চ্যালেঞ্জের মুখে “ইন্ডিয়া” জোট? পরিস্থিতি কিন্তু তেমনই আভাস দিচ্ছে। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ৪২ আসনে একাই লড়বে তৃণমূল। দিল্লিতে ৩০০-র বেশি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিলে “বুঝে” নেওয়া হবে– বুধবার এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে আপ কোনও সম্পর্ক রাখবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আপ নেতা ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। তিনি জানিয়েছেন, “পাঞ্জাবের সবকটি লোকসভা আসনে একা লড়বে আপ।”
অন্যদিকে পাশের রাজ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জেডিইউ সূত্রে খবর। নীতীশ কুমার আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর সব দলীয় কর্মসূচি বাতিল করেছেন। বিহারে বংশবাদী রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে নীতীশ লালু প্রসাদ যাদবকে পরিবারিক রাজনীতি করার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন কর্পুরী ঠাকুরের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে। বিহারে কান পাতলে এখন শোনা যাচ্ছে নীতীশ কুমারের বিজেপিতে যোগ দেওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। নীতীশ চাইছেন, তিনি বিজেপিতে গেলে হয় তিনি পুরো মেয়াদ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, না হলে বিহারের বিধানসভা ভেঙে দিয়ে একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে যাবেন।
এই পরিস্থিতিতে পাঞ্জাবের পথ ধরে দিল্লিতেও আপ-কংগ্রেস সংযোগ যে হচ্ছে না সেটা স্বাভাবিক। তবে পরিস্থিতি যা তাতে রবিবারই নীতীশ কুমার বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন এবং সুশীল মোদি হবেন বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে বিহার রাজনীতি এই পরিস্থিতিতে জটিল আকার ধারণ করেছে। লালু প্রসাদ যাদবের ফোনই ধরছেন না নীতীশ কুমার। নীতীশের ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে এনডিএতে ফেরার যুক্তি, “ইন্ডিয়া জোটে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।” একই যুক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, তিনিও বলেছেন, “জোটের নাম ইন্ডিয়া আমিই দিয়েছি। আমাকে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ইন্ডিয়া জোট সিপিএমের ইচ্ছেয় চলছে। জোটটা কারও একার নয়।” বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ ও জাতীয় স্তরে সিদ্ধান্ত ভোটের পর নেওয়া হবে, এই কথা ঘোষণার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ করেছেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি অনুযায়ী তিনিই ইন্ডিয়া জোটের কান্ডারী, জোটের প্রথম বৈঠক নীতীশ কুমারের উদ্যোগে বিহারেই হয়। মমতা তখন বলেন, “দিল্লিতে নয়, বিহারেই জোটের প্রথম বৈঠক হোক, কারণ এখান থেকেই জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জোট ঘোষণা হয়েছিল।” প্রসঙ্গত জয়প্রকাশ নারায়ণের সেই জোট ছিল ইন্দিরা গান্ধির কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বিহারের ইন্ডিয়া জোট কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে হলেও এখন জোট শরিকরা কংগ্রেসকে দূষেই নিজ নিজ রাজ্যে জোট ভাঙছেন।
নীতীশ যখন বিজেপির হাত ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেসের হাত ধরেছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘‘নীতীশ কুমারের ডিএনএ-তে সমস্যা রয়েছে।’’ তবে দেড় বছরেরই সেই তিক্ততাপর্ব কাটলো, আর তাই বিজেপি বিরোধী “ইন্ডিয়া” ছেড়ে আবার বিজেপির হাত ধরতে চলেছেম বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে শনিবারই রাজ্যপাল রাজেন্দ্র অরলেকরের সঙ্গে দেখা করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিতে পারেন নীতীশ কুমার। সেই সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে নতুন সরকার গড়ারও দাবিও এদিনই তিনি জানাতে পারেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নীতিশ কুমার ইন্ডিয়া জোট ছাড়লে সমস্যা হবে না কারণ বিহারে নীতীশের জনভিত্তি ক্রমহ্রাসমান। তবে কংগ্রেস মনে করছে, নীতীশ ইন্ডিয়া জোট ছাড়লে বিজেপি বিরোধীতায় সমস্যা হতে পারে।
তবে এই অবস্থা যে ইন্ডিয়া জোটে হতেই পারে প্রথম থেকেই সিপিএম সেই কথা বলে আসছে। মহম্মদ সেলিম শুরু থেকে ধারাবাহিক ভাবে বলেছেন, “আমরা অপেক্ষায় আছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কবে ইন্ডিয়া জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন।”
বৃহস্পতিবার সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমরা এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলাম, আমরা জানতাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের থেকে সবচেয়ে আগে বেরিয়ে যাবেন। কেন না তিনি আসলে বিজেপির বন্ধু।” এই পরিস্থিতি বুঝেই হয়তো সিপিএম শুরু থেকে বলে আসছে বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধে তারা লোকসভা নির্বাচনে লড়বে। তাই মমতা, মান, নীতীশের অবস্থান দেখে মনে করা যেতেই পারে সিপিএমের পূর্বানুমান ঠিক।
এদিকে বৃহস্পতিবার কোচবিহার নাগরিক বৃন্দর তরফে রাহুল গান্ধির ন্যায় যাত্রায় প্রতিবাদ দেখায়। এই ঘটনার সমালোচনায় সরব হয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “যে কোনও কারও মিছিল, সভা করার অধিকার আছে। তার জন্য অন্যকে জানাতে হবে কেন? অসমে বিজেপি রাহুলকে বাঁধা দিয়েছে, বাংলায় রাহুলকে বাঁধা দিয়েছে তৃণমূল।” কোচবিহার নাগরিক বৃন্দ আসলে তৃণমূল কর্মীদের সংগঠন বলে জানিয়েছেন এই সংগঠনের বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা সমালোচনা করেছেন অধীর রঞ্জন চৌধুরীর। কোচবিহার ২ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি কোচবিহার নাগরিক বৃন্দর বিক্ষোভে ছিলেন,সেই ছবি দেখা গিয়েছে।
এদিকে অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও কংগ্রেসের জোট হওয়া এখনও নিশ্চিত নয়। তাই বোঝা যাচ্ছে বিজেপির ভয়ে, এজেন্সির ভয়ে অনেকেই হয়তো শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাত ছেড়ে বিজেপির হাত ধরবে। তবে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধি হত্যার পর ১৪ বছরের রাহুল গান্ধি সেই মৃতদেহের পাশ দিয়ে হেঁটেছেন, আবার ১৯৯১ সালের ২১ মে রাজীব গান্ধি হত্যার পরও ২১ বছরের রাহুল গান্ধি তাঁর বাবার মৃতদেহের পাশ দিয়েই হেঁটেছেন। কিন্তু তাঁকে আমরা যতোই “পার্টটাইম পলিটিশিয়ান” বলি না কেন তিনি কিন্তু কংগ্রেস ছাড়েননি। আর অন্যরা? কংগ্রেস ভেঙে এখন অনেকেই নেতানেত্রী হয়েছেন। চমকাচ্ছেন কংগ্রেসকে। তবে মুখে আমিই একমাত্র বিজেপি বিরোধী,কংগ্রেস বিজেপি বিরোধী নয়, এটা যাঁরা গলা ছেড়ে বলেন, তাঁরাই এখন একে একে ইন্ডিয়া জোট থেকে কংগ্রেসের হাত ছেড়ে কেউ প্রকাশ্যে কেউ গোপনে বিজেপির দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছেন।
তবে নীতীশের বিজেপি যাওয়াটা খুব সোজা হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এরই মধ্যে বিহারের দলিত বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন, নীতীশ কুমারকে বিজেপিতে নেওয়া হবে না, বিহারের রাজনীতিতে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তবে বিজেপির একটা অংশ ইন্ডিয়া জোটে ভাঙন ধরাতে, বিহারে লালুর গড়ে ভাঙণ ধরাতে নীতীশকে নিজেদের কাছে টানতে চাইছে। বিজেপিতে নীতীশ এলে তাঁকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী রাখা হবে না, তাঁকে বিহার বিজেপির আহ্বায়ক করা হবে বলেও বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। তবে এবার নীতীশ লালুর হাত ছাড়লে এটা হবে তাঁর ৬ বারের জোট বদল। এরা সত্যিই কি ইন্ডিয়া জোটের মুখ হওয়ার যোগ্য? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর ইন্ডিয়া জোটের ভাঙন? সেটা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
❤ Support Us