- এই মুহূর্তে বৈষয়িক
- জুন ২৪, ২০২৫
বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র গতি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। বৈশ্বিক লগ্নিকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশেষ পোর্টাল চালু করল কেন্দ্র

ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে বিপ্লব আনার পথে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র। দেশের মাটিতে বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী গাড়ি উৎপাদনের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে, বিশ্বের গাড়ি নির্মাতাদের আকৃষ্ট করতে “বিদ্যুৎচালিত যাত্রীবাহী গাড়ি উৎপাদন প্রকল্প বা এসপিএমইপিসিআই-এর আওতায় বিশেষ অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে কেন্দ্রের ভারী শিল্প মন্ত্রক। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় পোর্টাল উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এইচ. ডি. কুমারস্বামী। আবেদন করা যাবে ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, বৈদেশিক বিনিয়োগ টেনে এনে ভারতের মাটিতে যাত্রীবাহী ই-গাড়ির উৎপাদন বাড়ানো এবং দেশকে বৈদ্যুতিক পরিবহণের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। সরাসরি লগ্নি টানতে এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে এই স্কিমে একাধিক আকর্ষণীয় সুযোগসুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্র। বিদেশি গাড়ি নির্মাতারা বিনিয়োগ করলে মিলবে আমদানিতে শুল্ক ছাড়। তবে শর্ত একটাই— ভারতেই গাড়ি তৈরি করতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রী এইচ. ডি. কুমারস্বামী জানিয়েছেন, এই প্রকল্প শুধুমাত্র দেশের পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ বদলাবে না, বরং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভারতকে ভবিষ্যতে প্রস্তুত, পরিচ্ছন্ন ও উদ্ভাবন নির্ভর অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাওয়াই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পে আবেদন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ভারতে ন্যূনতম ৪,১৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হবে। অনুমোদিত সংস্থাগুলো ৫ বছরের জন্য বছরে সর্বোচ্চ ৮,০০০টি সম্পূর্ণরূপে নির্মিত বৈদ্যুতিক ফোর-হুইলার আমদানি করতে পারবে, যার সিআইএফ মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার, ৩ বছরের মধ্যে সেই হার পৌঁছাতে হবে কমপক্ষে ২৫ শতাংশে। প্রস্তুত হওয়া গাড়িগুলির উপর কাস্টমস ডিউটি ধার্য হবে মাত্র ১৫ শতাংশ, যেখানে সাধারণত এক্ষেত্রে শুল্ক হার ৭০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে থাকে।
এই সুবিধা পেতে গেলে সংস্থার গ্লোবাল অটোমোটিভ ব্যবসার বাৎসরিক টার্নওভার হতে হবে অন্তত ১০,০০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি, সংস্থাটি বা তার গ্রুপ কোম্পানিগুলির ফিক্সড অ্যাসেটে ন্যূনতম ৩,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার সময় দিতে হবে ৫ লক্ষ টাকার অ-ফেরতযোগ্য ফি এবং একটি ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি— যা হতে পারে ৪,১৫০ কোটি বা মোট শুল্ক ছাড়ের সমপরিমাণ। বিনিয়োগের হিসাব নির্ধারণে জমির খরচ ধরা হবে না। তবে কারখানা ভবন ও ইউটিলিটি বাবদ নির্মাণ খরচ ধরা যাবে, যা মোট বিনিয়োগের দশ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। চার্জিং স্টেশন নির্মাণেও মোট বিনিয়োগের পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত খরচ গৃহীত হবে। এই প্রকল্প ঘিরে ইতিমধ্যেই ৪ থেকে ৫টি বৈশ্বিক গাড়ি সংস্থা প্রাথমিক ভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। যদিও প্রকৃতপক্ষে কারা আবেদন করবে, তা সময় বলবে। এ প্রসঙ্গে টেসলার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই মন্ত্রী স্পষ্ট জানান, ‘ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য ভারতের বাজারে গাড়ি বিক্রি করা। শোরুম খোলার পরিকল্পনা আছে, কিন্তু ভারতীয় মাটিতে উৎপাদনে নামার কোনও আগ্রহ ওদের এখনো পর্যন্ত নেই।’ মার্সিডিজ বেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওরা ইতিমধ্যেই ভারতে বড় লগ্নি করে ফেলেছে। নতুন স্কিমে আলাদাভাবে ঢুকছে না মানেই আগ্রহ নেই, এমন ভাবার কারণ নেই।’ অন্যদিকে, মার্সিডিজ-বেঞ্জ যে এই স্কিমে ঢুকতে আগ্রহী নয় বলে কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করলে, কুমারস্বামী বলেন, ‘ওরা ইতিমধ্যেই বড় লগ্নি করে ফেলেছে। ওদের ইচ্ছা বা আগ্রহে ঘাটতি নেই।’
ভারী শিল্প মন্ত্রকের সচিব কামরান রিজভি জানান, ‘এই প্রকল্পে অনুমোদন পাওয়ার পরেই কোনো সংস্থা বিনিয়োগ শুরু করতে পারবে। অনুমোদনের আগেই করা যন্ত্রপাতির কেনাকাটা কিংবা স্থাপন করা হয়ে থাকলে, সেগুলি এই স্কিমে গণ্য হবে না। পাশাপাশি, সীমান্ত ভাগাভাগি করা দেশগুলির লগ্নির উপর বিদ্যমান বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।’ তাঁর মতে, এই স্কিম কেবল গাড়ি আমদানির সুবিধা দিচ্ছে না। বরং, এটি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করছে— কীভাবে বৈশ্বিক সংস্থাগুলিকে ভারতে উৎপাদনের জন্য প্ররোচিত করা যায়, কীভাবে স্থানীয় প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বাড়ানো যায়, সেটিই প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠবে।
ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরো লক্ষ্যপূরণ, সবুজ পরিবহণের প্রসার এবং প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গঠনের বিষয়ে বদ্ধপরিকর। সেক্ষেত্রে পরিবহণ খাতে ইলেকট্রিক গাড়ির বিস্তার যে অনিবার্য, তা বলাই বাহুল্য। এ প্রকল্প সে পথেরই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। শুধু বৈশ্বিক বিনিয়োগ নয়, । কর্মসংস্থান বাড়ানো, প্রযুক্তি স্থানান্তর, স্থানীয় শিল্পের বিকাশ, শক্তিশালী ই-গাড়ি ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা — সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি তৈরি করার প্রয়াস। আবেদনকারীরা সরাসরি https://spmepci.heavyindustries.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন জমা দিতে পারবেন।
❤ Support Us