- দে । শ
- মার্চ ১৩, ২০২৫
‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’-এর তকমা হারাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফাতর আরো এক ছাত্র

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির জেরে পুলিশের ধরপাকর জারি রয়েছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষাবন্ধু সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তদন্তে নেমে আরো এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে ধৃত পড়ুয়া টালিগঞ্জের বাসিন্দা, নাম শৌনদীপ মাহাতো, দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সে। বুধবার সন্ধ্যায় যাদবপুর থানার পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায়, পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, শৌন্যদীপ শিক্ষাবন্ধু সমিতির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এর আগে, একই ঘটনার কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তনী, গল্ফ গ্রিনের বিজয়গড় এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ সাহিল আলিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি একটি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। বর্তমানে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাহিল।
গত ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সভার সময় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সামনে ছাত্ররা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ছাত্রকে গাড়ি চাপা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, এই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর রণক্ষেত্রের আকার নেয়। তারপর জল বহুদূর গড়িয়েছে। ব্রাত্য বসু ও ওমপ্রকাশ মিশ্রদের পাশাপাশি একাধিক ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। তৃণমূল কার্যালয় ভাঙচুর, শিক্ষামন্ত্রী ও অধাপকদের হেনস্তা সহ পড়ুয়াদের একাধিক অভিযোগ তো ছিলই, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে ‘দেশবিরোধী গ্রাফিতি’ আঁকবার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক দাবি নিয়ে ছাত্রদের তরফে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যাল চত্বরে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ চলছে।
এই ডামাডোল পরিস্থিতির মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালযয়ের ‘ইনস্টিটিউট অফ এমিনেন্স’ তকমা পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ২০২২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৩২৯৯ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে কেন্দ্র সরকারকে জানানো হয়। এর মধ্যে ২০% রাজ্য সরকার বহন করলে বাকি অর্থ কেন্দ্র দিত। তবে রাজ্য সরকার আর্থিক সহায়তা দিতে রাজি না হওয়ায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী সময়ে বাজেট কমিয়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠায়, যা কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করেনি। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান, ‘এমপাওয়ার্ড এক্সপার্ট কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই মর্যাদা দেওয়ার সুপারিশ করলেও রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তার অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।’ বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যর দাবি, ‘প্রথমে কেন্দ্র সরকার ১০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুদান দিতে রাজি ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার নিজেদের অংশের টাকা না দেওয়ায় প্রস্তাব বাতিল হয়। পরবর্তীতে প্রস্তাবিত বাজেট ১০১৫ কোটি থেকে কমিয়ে ৬০৬ কোটি করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়কেই ২৫% অর্থ সংগ্রহ করতে বলা হয়।’ বিজেপির তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রের অনুমোদিত বাজেট ছিল ৪২৪.২০ কোটি টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ছিল ১৫১.৫০ কোটি টাকা এবং রাজ্য সরকারকে ৩০.৩০ কোটি টাকা দিতে বলা হয়। তবে রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এই সুযোগ হারাল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালে শেষবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সে বছর ৩০০০ কোটি টাকার প্রস্তাবে ২৫% রাজ্যের অর্থসংস্থানের কথা বলা হয়েছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট কমিয়ে ৬৫০ কোটি টাকা করে জানায় যে, তাদের আয়ের মাধ্যমে ৫ বছরে ২৫% অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। বাকি টাকা কেন্দ্র দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত তকমাটি পেতে পারত। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয় নি। এ নিয়ে রাজ্য শিক্ষাদফতরের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যাদবপুরের উৎকর্ষতা কেন্দ্রের তকমা হারানো খুব দুঃখজনক। তবে এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব বেশি কিছু করবার থাকে না। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের অনুদানের উপর অনেকখানি নির্ভর করে। এ ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উদাসীন মনোভাবের দিকে ইঙ্গিত করে। ভারতবর্ষের উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যাদবপুর অন্যতম, অতীতে নানা ক্ষেত্রে আমরা তা প্রমাণ করেছি। কিন্তু ব্যয়বরাদ্দ এ ভাবে কমতে থাকলে আগামী দিনে গবেষণা ও শিক্ষার মান ধরে রাখা কঠিন হবে।’
❤ Support Us