- এই মুহূর্তে দে । শ
- জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
নজিরবিহীন ঘটনা ! “রাজনৈতিক দলের স্বার্থে নির্দেশ দেন বিচারপতি সৌমেন সেন”, বিস্ফোরক অভিযোগ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে বেনজির সংঘাত। বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মেডিক্যালে ভর্তিতে বেনিয়ম, তাতে সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আর বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে সেই নির্দেশ খারিজ করার পর এই সংক্রান্ত মামলার নির্দেশ নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইলো কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির বেনিয়ম সংক্রান্ত একটি মামলা আসে। তাতে বুধবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই দিনই রাজ্য এই নির্দেশের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিচারপতি সৌমেন সেন আধ ঘণ্টার মধ্যেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই নির্দেশ মানতে চাননি। বিচারপতির দাবি, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের কোনও লিখিত রূপ ছিল না। শেষ পর্যন্ত নিজের নির্দেশেই অনড় থাকেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিবিআই কে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই-র এফআইআর খারিজ করে দেয়। এখানেই দু বিচারপতির সংঘাতের সূত্রপাত।
ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ শুনেই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি তাঁর এজলাসে বসে স্পষ্টতই বলেন, বিচারপতি সৌমেন সেনের এই রায় রাজনৈতিক মদতপুষ্ট। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক স্বার্থেই বিচারপতি সৌমেন সেন এই নির্দেশ দিয়েছেন। এই বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়েই বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বড়দিনের ছুটির আগে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে নিজের চেম্বারে ডেকেছিলেন বিচারপতি সেন। সেখানে বিচারপতি সিনহাকে তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি সেন বলেছিলেন প্রথমত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, বিচারপতির অমৃতা সিনহার এজলাসে শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, প্রাথমিকের দু’টি মামলাও খারিজ করতে হবে বিচারপতি সিনহাকে।”
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে বসেই এদিন জানিয়ে দেন, তিনি এই “তথ্য” জেনেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার কাছ থেকে। শুধু তা-ই নয়, ওই একই ‘তথ্য’ বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও।
উল্লেখ্য, বিচারপতি সিনহার একক বেঞ্চে এই মুহূর্তে রয়েছে প্রাথমিকের অনেকগুলি মামলা। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় বিচারপতি সিনহা কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও। বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই নির্দেশ নিয়ে বা অভিষেকের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে বলেন, “বিচারপতির সেন স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। ওই মামলায় রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকা ব্যক্তির মত আচরণ করছেন বিচারপতি সেন। তিনি কয়েক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তাই সুপ্রিম কোর্টের উচিত তাঁর সমস্ত নির্দেশ খারিজ করা।”
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই বিষয়ে যে নির্দেশনামাটি লিখেছেন, তাতে এক ধাপ এগিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হবে না? একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “বিচারপতি সেনকে তো অনেক আগেই বদলির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তা সত্ত্বেও দু’বছর ধরে তাঁর বদলি হচ্ছে না কেন?” প্রসঙ্গত, দু’বছর আগেই বিচারপতি সেনকে ওড়িশা হাই কোর্টে বদলি করার সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কিন্তু কোন কারণে তাঁর বদলি হয়নি তা অজানা। দেশের প্রধান বিচারপতিকে এই বিষয়টিও দেখতে অনুরোধ করব। অন্য বিচারপতিদের বদলি ওই সুপারিশ মেনেই হয়। এই বদলি আটকাতে কার হাত রয়েছে সেটিও দেখার অনুরোধ করব।”
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন, “এই রায়ের কপি যেন চিফ জাস্টিস অব ইন্ডিয়ার কাছে পাঠানো হয়।”
প্রসঙ্গত, এই প্রথম নয়, নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে একাধিক মামলার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। তা নিয়েও একাধিকবার এর আগে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার সিবিআইকে দ্রুত এই মামলায় তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
❤ Support Us