- এই মুহূর্তে দে । শ
- জানুয়ারি ১১, ২০২৪
মণিপুর আবার অশান্ত। বিষ্ণুপুরে নতুন করে গুলি, নিখোঁজ ৮। নেপথ্যে উসকানি কার ?
ফের অশান্ত মণিপুর। মণিপুরের বিষ্ণুপুর ও কুম্বি বিধানসভা কেন্দ্রের বিষ্ণুপুর ও চূড়াচাঁদপুর জেলার সংলগ্ন পার্বত্য রেঞ্জের কাছে নতুন হিংসার ঘটনায় এই দুই এলাকা থেকে চারজন করে মোট ৮ জন নিখোঁজ হয়েছে। বিষ্ণুপুরে নিখোঁজ চারজন লোক ওই এলাকার কাছাকাছি চাষের জমি থেকে আদা তুলতে গিয়েছিলেন। তখনই এই ঘটনা ঘটে। এদিকে বিষ্ণুপুর ও চূড়াচাঁদপুরের পার্বত্য রেঞ্জের কাছে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে আরো চার জনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি ঘটে। দুটো ঘটনাই স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
বিষ্ণুপুরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম ওইনাম রোমেন মেইতি, আহানথেম দারা মেইতি, থৌদাম ইবোমচা মেইতি এবং থৌদাম আনন্দ মেইতেই।স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, থৌবাল জেলার ওয়াঙ্গু এবং বিষ্ণুপুর জেলার কুম্বির মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ছয় রাউন্ড মর্টারও ফায়ার করা হয়েছে।
বিষ্ণুপুর ও চূড়াচাঁদপুরে নিখোঁজদের মধ্যে দারা সিং, ইবোমচা সিং, রোমেন সিং এবং আনন্দ সিং নামের চারজন রয়েছে । এরা জঙ্গিদের হাতে বন্দী হয়েছে বলেই পুলিশের অনুমান। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
এর আগে, মণিপুরের সীমান্ত শহর মোরেহ নিরাপত্তা কর্মী ও জঙ্গিদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। মায়ানমার সীমান্তবর্তী মোরেতে গত ৭ জানুয়ারি গভীর রাতে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। এর পর থেকে গ্রামগুলির মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ রবিবার রাতে ৭ নং ওয়ার্ড ও মোরে বাজারে গুলি চালানো হয়। পুলিশ প্রশাসনের মতে, জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়েছে।গত ২ জানুয়ারি, কমপক্ষে সাতজন নিরাপত্তা কর্মী আহত হন, এর মধ্যে চার মণিপুর পুলিশ কমান্ডো এবং ৩ জন বিএসএফ কর্মী ছিলেন। একটি অনুসন্ধান অভিযানের সময় তাঁরা জঙ্গি হামলার মুখোমুখি হন। আহত অবস্থায় তাঁরা এখন ইম্ফলে চিকিৎসাধীন। এর আগে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরও এরকম একটি হাওলা হয়েছে ওখানে । মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং গত সপ্তাহে মন্তব্য করেছিলেন যে মায়ানমারের বিদেশী ভাড়াটেরা মোরেহের হামলায় জড়িত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ১৪ জানুয়ারি হিংসা-বিধ্বস্ত মণিপুর রাজ্য থেকে তাঁর ভারত জোড় ন্যায় যাত্রা শুরু করতে চলেছেন। কংগ্রেস নেতারা আগেই বলেছিলেন যে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেণ সিং তাঁদের প্রাথমিক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার পরে তাঁরা বিকল্প স্থান খুঁজছেন। দলের নেতারা অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন যে রাহুল গান্ধির নেতৃত্বাধীন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা যেকোনো মূল্যে মণিপুর থেকেই শুরু হবে।
ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ১৪ জানুয়ারি ইম্ফল থেকে শুরু হবে এবং ১২টি রাজ্য জুড়ে ৬ হাজার ৭১৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে। রাহুল গান্ধির এই পদযাত্রা ২০ বা ২১ মার্চ মুম্বাইয়ে শেষ হবে।
উত্তর-পূর্বের অন্যান্য অংশের মতো মণিপুর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের একটি মিশ্র জনগোষ্ঠীর একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসের অতীত ইতিহাস রয়েছে। রাজ্যে মেইতি সম্প্রদায় রাজ্যের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি, এ ছাড়া উপজাতি, কুকি এবং নাগারা প্রায় ৪০%, ২৫% এবং ১৫% । বেশিরভাগ মেইতি ইম্ফল উপত্যকায় বাস করে আর আদিবাসীরা পার্বত্য জেলায় বাস করে। এই রাজ্যের মূল উৎপাদন গাঁজা এবং চরস, যা সন্ত্রাসবাদীরা নিয়ন্ত্রণ করে। শাসক ও সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে এই নিয়ে সংঘাত আছে। ২০২৩ মণিপুর সহিংসতার কারণ হল মণিপুর রাজ্যের আদিবাসী ও মেইতি সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতা। আদিবাসী কুকি সংগঠনগুলি মেইতি সম্প্রদায়কে তফশিলি উপজাতির মর্যাদা প্রদানের বিরোধিতা করে ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। তার পর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে মণিপুর।
❤ Support Us