- এই মুহূর্তে দে । শ
- মার্চ ১৯, ২০২৫
প্রবীণ নাগরিকের যত্ন না নিলে,তাঁদের সম্পত্তির ভাগও নয় – জানাল মাদ্রাজ হাইকোর্ট

একটি মামলার শুনানিতে এ দিন মাদ্রাজ হাইকোর্ট জানিয়েছে, যদি কোনো সন্তান বা নিকট আত্মীয়রা বৃদ্ধ নাগরিকদের যত্ন না নেয়, তাহলে সম্পত্তির ভাগ দিতে না পারেন বঞ্চিত মানুষেরা। ২০০৭ সালের ‘মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ প্যারেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেনস অ্যাক্ট’-এর আওতায় এই মন্তব্য করা হয়েছে। অন্যদিকে বীরভূমে অবহেলিত বৃদ্ধার সম্পত্তি ছেলের কাছ থেকে ফেরানোর কাজ শুরু করল জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি মাদ্রাজ হাই কোর্টে প্রবীন নাগরিকদের অধিকার রক্ষা ও তাঁদের জন্য উপযুক্ত যত্ন নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিচারপতি এস এম সুব্রহ্মণ্যম এবং কে. রাজশেখর এই সিদ্ধান্তে পরিষ্কারভাবে বলেছেন , যে বৃদ্ধ নাগরিকরা তাঁদের সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের কাছে সম্পত্তি স্থানান্তর করেন, তাঁদের সেই সম্পত্তি স্থানান্তরের শর্তের মধ্যে যত্ন, মর্যাদা ও ভালোবাসার বিষয়টি থাকতে পারে। যখন তাঁরা সম্পত্তি দান বা স্যাটেলমেন্ট ডিডের মাধ্যমে তাদের সন্তান বা আত্মীয়দের কাছে তাদের সম্পত্তি স্থানান্তর করেন, খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের প্রত্যাশা থাকে উত্তরসূরীরা বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের যত্ন নেবে। এই রায়ের মূল বিষয় হল, যদিও সম্পত্তি দানের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে এটি উল্লেখ করা থাকে না, তবুও সেই শর্তটিকে মানতেই হবে। যদি তা না হয়, তবে ওই বৃদ্ধ নাগরিক সেই সম্পত্তি ফিরিয়ে নেবার জন্য আবেদন করে, আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। ২০০৭ সালের ‘মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ প্যারেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেনস অ্যাক্ট’-এর আওতায় এই মন্তব্য করা হয়েছে। ওই অ্যাক্টে বৃদ্ধ নাগরিকদের মৌলিক সুরক্ষা আর যত্ন নিশ্চিত করার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
এদিনের মামলার আবেদনকারী ছিলেন, ৮৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা নাগালক্ষ্মী। যিনি তাঁর একমাত্র ছেলে কেশবনকে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দান করেছিলেন। কিন্তু শুরুর দিকে ছেলের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলেও, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলে যায়, লাঞ্ছিত, অবহেলিত জীবন কাটাতে বাধ্য বৃদ্ধা। অবস্থা চরমে ওঠে যখন তাঁর ছেলে মারা যান। তাঁর পুত্রবধূ কোনোরকম দায়িত্ব নিয়ে অস্বীকার করে। নাগালক্ষ্মী তখন নাগাপত্তিনামের আরডিও-তে অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, তাঁর সন্তান ও পুত্রবধূ তাকে সম্পূর্ণভাবে অবহেলা করেছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তরফে নাগালক্ষ্মীর আবেদন গ্রহণ করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে স্যাটেলমেন্ট ডিড বাতিল করা হয়। এরপর, তাঁর পুত্রবধূ মলা আদালতে আপিল করেন, কিন্তু আদালত সে আবেদন খারিজ করে দেয়।
কোর্টের এই রায়টি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চুক্তিপত্রে না থাকলেও প্রবীণ নাগরিকদের অবহেলা করলে, তাঁদের সম্পত্তির ভাগও জুটবে না সন্তান বা নিকটআত্মীয়দের কপালে। বৃদ্ধ নাগরিকদের জন্য এটি একটি শক্তিশালী আইনি নিরাপত্তা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আইনি পদক্ষেপ নিয়ে তাঁরা নিজের সম্পত্তি ফিরে পেতে পারেন। এরকমই এক ঘটনায়, বীরভূমের জেলাপ্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক, কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। জানা যাচ্ছে, বীরভূমের সিউড়ি পুরসভার অরবিন্দপল্লি এলাকার বছর ৭৫-এর বৃদ্ধা বিনোদিনী মণ্ডল অভিযোগ করেছিলেন যে, স্বামী মারা যাওয়ার পর তার বড় ছেলে দিলীপ তাকে সম্পূর্ণভাবে অবহেলা করেছে। ১৪ বছর ধরে ছেলেটি মায়ের খোঁজ নেয়নি অথচ তাঁর নামে থাকা বাড়িটি দখল করে বসে আছে। দীর্ঘদিন চুপচাপ সহ্য করেছিলেন, কিন্তু অবশেষে পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায়, বাধ্য হয়ে তিনি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মহকুমাশাসক সুপ্রতীক সিংহ নির্দেশ দেন, মায়ের সম্পত্তি থেকে ছেলে দিলীপকে বঞ্চিত করে বাড়ি ছাড়তে হবে। দিলীপ আপত্তি জানালেও, পুলিশের তৎপরতায় ওই বাড়ি থেকে তাকে উচ্ছেদ করার কাজ শুরু হয়েছে। বিনোদিনী মণ্ডল তার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে আমাকে দেখেনি, বাড়ি দখল করে রেখেছে। আমি জীবনের শেষ সময়ে একটু শান্তি চাই।’ মহকুমাশাসক সুপ্রতীক সিংহ বলেন, ‘আমাদের তদন্তে অভিযোগটি সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। বৃদ্ধার ছেলেও অভিযোগ স্বীকার করেছে। আমরা দ্রুত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করব।’ প্রশাসনের এই পদক্ষেপে বিনোদিনী সন্তুষ্ট, তাঁর আইনজীবী জানান, এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হয়ে রইল, মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন না করলে আইন কঠোর হতে পারে।
❤ Support Us