Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • এপ্রিল ১৭, ২০২৫

নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকল চাকরি, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে স্বস্তিতে ‘যোগ্য’ চাকরীহারারা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকল চাকরি, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে স্বস্তিতে ‘যোগ্য’ চাকরীহারারা

সুপ্রিমকোর্টে ‘অ-কলঙ্কিত’ যোগ্য শিক্ষকদের নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজে বহাল রাখবার আর্জি জানিয়েছিল মধ্যশিক্ষ পর্ষদ। পর্ষদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন অযোগ্য’ বা ‘টেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত হননি এমন চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে ৩১ মে তারিখের মধ্যে যোগ্যদের বাছাই করে নতুন নিয়োগ পরীক্ষার কাজ শুরু করতে হবে। এই রায়ে আপাতত সাময়িক স্বস্তিতে চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তবে তাঁরা স্কুলে যেতে পারলেও গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ক্ষেত্রে কোর্টের আগের নির্দেশই বহাল থাকবে।

সুপ্রিমকোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা-কর্মচারীর চাকরি বাতিলের পড় গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। এখনো রাস্তায় রয়েছেন চাকরিহারাদের একাংশ। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর অভাবে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলি ধুঁকছে। তাঁদের পাশে থাকবার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষাদফতর। চাকরিহারাদের স্কুলে যাওয়ার উপদেশঅ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সে নিয়েও হাজার জটিলতাঁর মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের। এমত অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনে যাতে ভোগান্তি না হয়, বিষয়টি মাথায় রেখে সুপ্রিমকোর্টে ‘অ-কলঙ্কিত’ যোগ্য শিক্ষকদের নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজে বহাল রাখবার আর্জি জানিয়েছিল মধ্যশিক্ষ পর্ষদ। বৃহস্পতিবার পর্ষদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন অযোগ্য’ বা ‘টেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত হননি এমন চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে কমিশনকে ৩১ মে-এর মধ্যে যোগ্যদের বাছাই করে নতুন নিয়োগ পরীক্ষার কাজ শুরু করতে হবে। এই রায়ে আপাতত সাময়িক স্বস্তিতে চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তবে তাঁরা স্কুলে যেতে পারলেও গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ক্ষেত্রে কোর্টের আগের নির্দেশই বহাল থাকবে।

রাজ্যের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান চরম অস্থিরতার মধ্যে, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের একাংশের জন্য সাময়িক স্বস্তির বার্তা নিয়ে এল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেছেন ‘রাজ্য সরকার আর কমিশনকে ৩১ মে-র মধ্যে কোর্টে হলফনামা দাখিল করতে হব। যেখানে নতুন নিয়োগ সংস্ক্রান্ত বিজ্ঞাপনের অনুলিপি ও সময়সূচি সংযুক্ত থাকতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে সম্পূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি নির্ধারিত সময়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ না হয়, তবে পুনরায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারি করা হবে, যার মধ্যে আর্থিক জরিমানাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।’ তবে এই স্বস্তি গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। ২৫,০০০-এরও বেশি চাকরিহারাদের মধ্যে শিক্ষাকর্মীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে তাঁদের চাকরিও বাতিল হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের আবেদন আমরা মঞ্জুর করছি না, কারণ এই শ্রেণিতে প্রমাণিত ‘অযোগ্য’ প্রার্থীর সংখ্যা তুলনায় অনেক বেশি। আদালতের আদেশের কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল, কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করে দেয় সুপ্রিমকোর্ট। সিবিআই-এর জমা দেওয়া তদন্ত রিপোর্টে প্রায় ৮,০০০ জন শিক্ষক ‘অযোগ্য’ বা দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়া প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হন। তাঁদের শুধুমাত্র চাকরি খোয়াতে হয়নি, বরং আদালত তাঁদের এ যাবত পাওয়া সমস্ত প্রাপ্ত বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দেয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়, যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁদের অন্তত রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে চলমান সমস্যা মোকাবিলা করতে চাকরিতে বহাল রাখা হোক। সেই আবেদনেই আজ রায় দিল শীর্ষ আদালত। শিক্ষামহলের মতে, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশে রাজ্যের বহু স্কুল শিক্ষক সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে। এক ধাক্কায় এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক চাকরিচ্যুত হওয়াতে এই মুহূর্তে রাজ্যের স্কুলগুলিতে ক্লাস চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একেকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা বরাদ্দের বেশি ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কখনও ২-৩ টি ক্লাস মিলিয়ে পড়াশোনার পাঠ চলছে। এই রায় শুধুমাত্র চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য নয়, রাজ্যের গোটা শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। ধুঁকতে থাকা স্কুলগুলির ঘুরে দাঁড়ানোটা বাংলার আগামী প্রজন্মের মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার এই ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপ দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!