- এই মুহূর্তে দে । শ
- মার্চ ১৩, ২০২৫
বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ফের শো-কজ হুমায়ূন কবীরকে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব চাইল তৃণমূল

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের পাল্টা দিতে গিয়ে বেকায়দায় হুমায়ুন কবীর। বেফাঁস মন্তব্যের জন্য তাঁকে ফের শো-কজ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে হবে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরকে। তিনি ছাড়াও মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকেও সতর্ক করা হয়েছে।
চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শো-কজ করা হলো মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে। বিধানসভার তৃণমূল পরিষদীয় দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি বৃহস্পতিবার তাঁকে শো-কজ করেছে। বিধানসভার পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় একথা জানিয়েছেন। । ২৪ ঘন্টার মধ্যে কমিটির কাছে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে। কবীরের পাশাপাশি মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকেও বক্তব্য রাখবার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের মুসলিম বিধায়কদের বিধানসভা থেকে ছুড়ে ফেলা হবে।” এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে পাল্টা আক্রমণ করেন হুমায়ুন কবীর। বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাইরে তিনি বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী একজন বিধায়ককে চ্যাংদোলা করে দেখাক, কতটা সাহস আছে দেখি।’ এরপর তিনি আরো বলেন, শুভেন্দু জাতিগত আক্রমণ করছে কেন? প্রশাসন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করছে না? পুলিশ কি নাকে ঠুসি দিয়ে আছে? আমাকে কেন আমার জাতির জন্য এত চিৎকার করতে হয়? কেন এখানে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হচ্ছে, গোটা একটা মুসলিম জাতিকে আক্রমণ করছে? পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? ব্যর্থতার কথা আমি বলব না। পুলিশ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে?আমার কাছে আগে আমার জাতি, তারপর দল। আমার জাতিকে আক্রমণ করা হলে আমি চুপ থাকব না।’ নিজের কথা প্রত্যহার না করলে, কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা বন্ধ না করলে, বিরোধী দলনেতাকে মুর্শিদাবাদে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে এসেছেন, সেখানে তাঁর দলেরই এক বিধায়কের এমন মন্তব্য দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। শুধুমাত্র হুমায়ুন কবীর নন, রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দুজনকেই সতর্ক করেন, ভবিষ্যতে আরো সংযত হওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁরা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রী আর বিধায়কদেরও সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘কোনো ধরনের প্ররোচনায় পা দেবেন না। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করুন।’ প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে কোনও ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য বা পদক্ষেপ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু তারপরও হুমায়ুন ফের একই পথে হাঁটায় দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে হুমায়ুনকে শো-কজ করে। তৃণমূলের এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করে বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা শংকর ঘোষ বলেন, ‘হুমায়ুন যখন হিন্দুদের হত্যা করে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তখন তো তৃণমূল কখনও তাকে শো-কজ করেনি। অথচ আজ কেউ যদি বলেন, জাত দলের চেয়ে বড়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে শো-কজ করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট, তৃণমূলের কাছে হিন্দুদের প্রাণ ও সম্পত্তির মূল্য কতটা। তৃণমূলের প্রত্যেকের কাছেই দল সবার শেষে— কারও কাছে দলের চেয়ে টাকা আগে, কারও কাছে জাত আগে, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দলের চেয়ে ক্ষমতা আগে। তাহলে তাদের সবাইকে শো-কজ করা উচিত।’
এবারই প্রথম নয়, গত বছরের ২৭ নভেম্বর দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে হুমায়ুন কবীরকে শো-কজ করেছিল তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। কিন্তু তারপরও তিনি বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকেননি। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এবার তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভার সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁর বক্তব্য, তৃণমূলের নেতাদের কড়া প্রতিক্রিয়ার ফলে তাঁর এবং অন্যান্য বিজেপি বিধায়কদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। এই ইস্যু বিধানসভা অধিবেশনেও ওঠে এবং মুখ্যমন্ত্রী নিজে পরিষ্কার করে দেন, দলের বিধায়কদের সংযত থাকার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। হুমায়ুন কবীরকে শো-কজ করা হলেও, তিনি দলের অবস্থান পরিবর্তন করেননি। এবার তাঁর বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই দেখার বিষয়। তিনি কি বড়ো কোনো শাস্তির মুখে পড়বেন, না কি দলের সঙ্গে সমঝোতা করে সাময়িক চুপ থেকে, আবার আগের মতো ধারাবাহিকভাবে বিতর্কিত মন্তব্য করে যাবেন, তা সময়ই বলবে।
❤ Support Us