Advertisement
  • এই মুহূর্তে বি। দে । শ
  • মার্চ ২০, ২০২৫

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রধান প্রতিপক্ষ, মেয়র একরাম ইমামোগলু আটক। প্রতিবাদে ইস্তাম্বুলের রাজপথে জনবিক্ষোভ

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রধান প্রতিপক্ষ, মেয়র একরাম ইমামোগলু আটক। প্রতিবাদে ইস্তাম্বুলের রাজপথে জনবিক্ষোভ

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতিপক্ষ ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও নিষিদ্ধ পিকেকে সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। তাঁর আটকের প্রতিবাদে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় জনস্রোত। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি এই আটককে, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও ‘পরবর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান’ হিসাবে দেখছে।

তুরস্কে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা। বুধবার ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র একরামম ইমামোগলুকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ইমামোগলু তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি এর সদস্য, প্রেডিডেন্ট রিসপ তায়িপ এরদোয়ানের একমাত্র প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। সাম্প্রতিক সময়ে একরামের জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী, ভোটের কিছু জরিপে তিনি এরদোয়ানকে ছাড়িয়ে গেছেন। ইমামোগলুর এই আটক রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। তুরস্কে এই ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক প্রতিবাদ ও একাধিক সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর আটকের প্রতিবাদে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি এটিকে, ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ ও ‘পরবর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান’ হিসাবে দেখছে। চিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল বলেছেন, এরদোয়ান চাইছেন ইমামোগলুকে ‘প্রশাসনিক হাতিয়ার প্রয়োগ করে ভেঙে ফেলতে, তুরস্কের গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা।’ এই ঘটনা তুরস্কের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, ইমামোগলুর এই আটক তুরস্কে চলমান আইনি দমনপীড়নের অংশ। গত কয়েক মাস ধরে শতাধীক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের আটক করা হয়েছে। এরদোয়ান সরকার ও প্রশাসন এভাবেই বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে অনৈতিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিরোধীদের রাজনৈতিক শক্তি হ্রাস করার চেষ্টা করছে। ইমামোগলু’র আটক তুরস্কের নাগরিকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে। ইস্তাম্বুল সহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচী শুরু হয়েছে। ইস্তাম্বুলের পুলিশ স্টেশনের বাইরে হাজারে মানুষ জড়ো হয়েছেন। তুরস্কের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা ‘এরদোগান স্বৈরশাসক!’ ও ‘ইমামোগলু, তুমি একা নও!’ স্লোগান দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে তুরস্কেএই প্রতিবাদগুলি রাজনৈতিক অস্থিরতার অন্যতম প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

মেয়র একরাম ইমামোগলু ইস্তাম্বুল সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সিএইচপির পরবর্তী প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ইস্তাম্বুলের সফল মেয়র হিসেবে পরিচিতি তাঁকে তুরস্কের ভবিষ্যৎ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এর ফলে অনেকেই মনে করছেন, তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত এবং আটকের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথম তদন্তটি ইস্তাম্বুল পৌরসভার দেওয়া কিছু টেন্ডারের সাথে সম্পর্কিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে। ইস্তাম্বুলের প্রশাসনিক কার্যালয় জানিয়েছে, সাংবাদিক আর ব্যবসায়ীসহ মোট ১০০ জন ব্যক্তি এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সন্দেহজনকভাবে জড়িত রয়েছেন। তদন্তে ইমামোগলুর নামও রয়েছে। দ্বিতীয় তদন্তটি নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে-কে সহায়তা করার অভিযোগের ভিত্তিতে চলছে। তদন্তকারীদের মতে, ইমামোগলু সহ আরো ৭ জন ব্যক্তি এই সংগঠনের সহায়তায় জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইমামোগলুর আটকের পর শহরের গভর্নরের কার্যালয় থেকে ঘোষণা দিয়ে ইস্তাম্বুলে ৪ দিনের জন্য সকল সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে, তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু জাতীয়স্তরে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনারর স্রোত বইছে। এ পর্যন্ত, ইমামোগলু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি, তবে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমি হাল ছাড়ছি না, বরং চাপের মুখে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো।’ এদিকে, ইমামোগলুর বিরুদ্ধে এই তদন্তের মধ্যেই ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় তার ডিগ্রি বাতিল করে দিয়েছে। যদি এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তাহলে তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যদিও ২০২৮ সালে তুরস্কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তবে তুর্কি সংবিধান অনুযায়ী এরদোয়ান এই নির্বাচন করতে পারবেন না। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এরদোয়ান তার ক্ষমতা বজায় রাখতে আগাম নির্বাচন ডেকে পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারেন।

ইমামোগলুর আটক তুরস্কের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যপক প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র অ কাউন্সিল অফ ইউরোপ এই ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আর মিথ্যা অভিযোগ’ বলে চিহ্নিত করেছে। তাঁরা ইমামোগলুকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সম্ভাব্য প্রেসিডেন্টের আটক তুরস্কের অর্থনীতিতেও বড়ো ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তুরস্কের লিরা মুদ্রা একদিনে ১২% কমে গিয়ে ৪২ ডলার প্রতি লিরায় পৌঁছেছে। তুরস্কের স্টক মার্কেটও ৫% পর্যন্ত পতন ঘটেছে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য যা নেতিবাচক সংকেত। এছাড়াও, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক তীব্র মুদ্রা পতন ঠেকাতে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিক্রি করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এর ফলে দেশটির মুদ্রানীতি ও সুদের হারের উপর প্রভাব ভয়ঙ্কর ফেলবে, পরবর্তী কয়েকমাসে মুদ্রাস্ফীতি আর মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!