- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মার্চ ২০, ২০২৫
যোগী নীতীশের রাজ্য থেকেই জাল ওষুধ ঢুকছে বাংলায় ! ড্রাগ-কন্ট্রোলের তদন্তে বিস্ফোরক অভিযোগ

বিহার, ইউপি থেকে থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে প্রায় ২ কোটি টাকার জাল ব্লাড প্রেসারের ওষুধ এসেছে। যার মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ কয়েকদিন আগে হাওড়া থেকে উদ্ধার হয়েছে। বিক্রেতা বাবলু মান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরইমধ্যে পানিহাটিতে এরইমধ্যে এক জনপ্রিয় অনলাইন ফার্মাসির গোডাউনে অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে ৩ ধরনের জাল ব্লাড প্রেসারের ওষুধ, যার মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। পুলিশ ও ড্রাগ কন্ট্রোলের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মতে, এই চক্রের সঙ্গে যোগীরাজ্যের যোগ থাকতে পারে, যদিও সে তথ্য এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ড্রাগ-কন্ট্রোলের কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, বিহার-উত্তরপ্রদেশের এই জাল ওষুধ চক্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
জনপ্রিয় ওই অনলাইন ফার্মাসি কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল ড্রাগ কন্ট্রোলে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে, মঙ্গলবার ড্রাগ কন্ট্রোল কর্মকর্তারা ওই ই-ফার্মাসির গোডাউনে অভিযান চালান। সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের হার্ট অ্যাটাক আর সুগারের ওষুধ, যেগুলোর ব্যাচ নম্বর যাচাই করার পর মূল কোম্পানি নিশ্চিত করে যে, সেগুলি সবই জাল। তদন্তে ওই ফার্মাসির কর্মীরা জানান, তাঁরা জাল ওষুধগুলো উত্তরপ্রদেশের লখনৌ থেকে কিনেছিলেন। এর পর, রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল উত্তরপ্রদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। লক্ষ্ণৌ এর এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে চিঠি পাঠানো হয়, কিন্তু তিনি পুদুচেরির একটি ব্যবসায়ীর দিকে অভিযোগের তীর ঘুরিয়ে দেন। ড্রাগ কন্ট্রোল সূত্রে আরো জানা গেছে, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মধ্যে থাকা এই জাল ওষুধের চক্রের প্রভাব দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। লক্ষ্ণৌ থেকে একটি জনপ্রিয় ব্যান্ডের জাল ট্যাবলেট এর আগে বাংলায় সরবরাহ করা হয়েছিল। জাল ওষুধে বাজার ছেয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমজনতা থেকে চিকিৎসক, ওষুধ দোকানের মালিক- সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। প্রশ্নের উঠছে, কীভাবে এই জাল ওষুধগুলি এত সহজে বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। ক্রেতারা না জেনেই সেসব ওষুধ কিনছেন, খাচ্ছেন।
বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যদি তাঁদের কোন সদস্য এই জাল ওষুধ চক্রে জড়িত থাকে, তবে অবিলম্বে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে। সংগঠন কাউকে বরদাস্ত করবে না। এআইসিডিএফ-এর সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ সরকারও অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে আসা অধিকাংশ ভেজাল ও জাল ওষুধ উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগর থেকে আসছে। অনেক পরিমাপের মানহীন ওষুধ পশ্চিমবঙ্গে আসছে হরিয়ানার মাধ্যমে। এই উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলি ভেজাল ও জাল ওষুধের কেন্দ্রস্থল, যা মূলত বদি ও সোলান ভিত্তিক কোম্পানিগুলিতে উৎপাদিত হচ্ছে, তিনি অভিযোগ করেছেন। জয়দীপের মতে, এই ভেজাল ও আছাড়া ওষুধগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাই সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের আরো সজাগ হতে হবে। তিনি বলেছেন যে অপরাধীরা কিউআর কোডগুলি নকল করে, কম্পিউটার জেনারেটেড বিলের মাধ্যমে জাল ওষুধ বিক্রি করছে, যাতে আসল বলে মনে হয়। তিনি মনে করেন যখন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলি তাদের কর্মীদের মাসিক টার্নওভারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তখনই এই ধরনের অনৈতিকতা শুরু হয়। কোম্পানির প্রতিনিধিরা হাসপাতাল বা পাইকারদের কাছে নমুনা ওষুধ বিক্রি করেন, তাঁদের অপরাধের জন্য উৎপাদনকারী সংস্থারাও দায়ী। জয়দীপ জানান যে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলি বিতরণকারীদের সাথে কনসাইনমেন্টের সঙ্গে ব্যাচওয়াইজ ‘ল্যাবরেটরি টেস্ট রিপোর্ট’ দেয় না। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে প্রতিটি রাজ্যের প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে মেডিকেল স্টোরগুলির শেলফ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার করতে হবে। অনেক কোম্পানি মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধগুলি প্রত্যাহার করতে চায় না। একইভাবে, সরকারকে এমআরপির ওপর ছাড় দেওয়া ব্যবস্থাটি বন্ধ করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত। অনেক বিপণন ও উৎপাদনকারী কোম্পানি পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য বিশাল ছাড় দেয়। এর ফলেই কু-চক্র গুলো জালিয়াতিতে সুবিধা পায়। তিনি দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ওষুধের বাজারে এত প্রতারণার ঘটনা ঘটছে কারণ বাংলা সীমান্ত রাজ্য, বাংলা হয়ে প্রতিবেশী দেশেও সে সব ওষুধ ছড়িয়ে পড়ে। এ সবের পিছনে বড়ো বড়ো অপরাধী সংগঠন জড়িত।
এআইসিডিএফ নেতার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, বিহার ড্রাগস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জীব রায়, এই মন্তব্যটি অবমাননাকর বলে মনে করছেন। তিনি বলেছেন, এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিহারের কোন লাইসেন্সধারী প্রস্তুতকারক সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে ওষুধ বিক্রি করে না। বিহার ফার্মা শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা’। উত্তরপ্রদেশ ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকাশন্ত ভাটিয়াও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশে কোন ধরনের ভেজাল ওষুধ উৎপাদন হওয়ার সুযোগ নেই। পশ্চিমবঙ্গে উদ্ধার হওয়া ভেজাল ওষুধগুলি হয়তো অন্য রাজ্য থেকে এসেছে, কিন্তু উত্তরপ্রদেশ থেকে আসেনি। গত বছর সাহারানপুরে একটি জাল ওষুধ সরবারহের ঘটনা ঘটেছিল বটে, কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিল।’
❤ Support Us