Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫

ট্রাফিক জ্যামে বিশ্ব রেকর্ড, মহাকুম্ভের পথে স্তব্ধ প্রয়াগরাজ

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
ট্রাফিক জ্যামে বিশ্ব রেকর্ড, মহাকুম্ভের পথে স্তব্ধ প্রয়াগরাজ

কেবল জলধারার ত্রিবেণী সঙ্গম নয়, প্রয়াগরাজে রাস্তায় জনস্রোত। বাঁধভাঙা প্লাবনের মতো উপচে পড়ছে পূর্ণার্থীদের ভিড়। মহাকুম্ভে পূণ্যস্নানের জেরে প্রয়াগরাজের রাস্তায় ৩০০ কিলোমিটার জুড়ে ট্রাফিক জ্যাম । যাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রাফিক জ্যাম বলে মনে করছেন অনেকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলায় হাজির হতে যে হারে মানুষ মহাকুম্ভে হাজির হচ্ছেন, তাঁদের গাড়ি মেলা প্রাঙ্গন থেকে দূরে থাকলেও, তাতে যেন মহাসমুদ্র তৈরি হয়েছে। একের পর এক গাড়ি যেমন দাঁড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, তেমনি এক, দেড় ঘণ্টা ধরে মানুষকে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যে বিপুল মানুষ মহাকুম্ভে হাজির হতে চাইছেন, ট্রাফিক জ্যামের জেরে মেলা প্রাঙ্গন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তাঁদের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। । যানবাহনের সমুদ্র উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলার দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলিকে পার্কিং লটে রূপান্তরিত করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দিতে আগ্রহী লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী রবিবার মেলার স্থান থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে তাদের গাড়িতে আটকা পড়েছেন। ফলে কোনোভাবেই সেখান থেকে কোনও গাড়ি সরে অন্যত্র যেতে পারছে না। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রয়াগরাজের কয়েক হাজার গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে। সেগুলি মেলা প্রাঙ্গনের ধারপাশে ঘেঁষতে পারছে না। তীর্থযাত্রীরা যেভাবে মেলা প্রাঙ্গনের আগেই আটকে পড়ছেন, আর তাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ছে, তা নিয়ে কার্যত জোর চর্চা শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যানজট নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হওয়ার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মধ্যপ্রদেশের বেশ কয়েকটি রুটে যান চলাচল। প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০-৩০০ কিলোমিটার যানজট রয়েছে। এখনও অবধি ৪১ কোটি মানুষ মহাকুম্ভে গঙ্গায় ডুব দিয়েছেন। তবু ভিড়ের কমতি নেই। আবার কারো দাবি, কোনও কোনও গাড়িকে ৪৮ ঘন্টা ধরে আটকে থাকতে হচ্ছে। মাত্র ৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে প্রায় ১০-১২ ঘন্টা সময় লাগছে।

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না মহাকুম্ভের। ঘটেছে একের পর এক ভয়াভহ দুর্ঘটনা। কিন্তু পুণ্যার্জনের অভীপ্সায় মানুষের সমাগম যেন বেড়েছে চলেছে সেখানে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীবাহী গাড়ি, বাস এখন সঙ্গমমুখী। বারাণসী, লখনউ এবং কানপুর থেকে প্রয়াগরাজের রুটে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট হচ্ছে। শহরের ভেতরে প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। সঙ্গমে পৌঁছতে ১০- ১২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এগোতে হচ্ছে পুণ্যার্থীদের। এত ভিড় সামলাতে প্রয়াগরাজ সঙ্গম রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । কারণ প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশনের বাইরেও প্রচণ্ড ভিড়ের জন্য যাত্রীরা স্টেশন থেকেই বের হতে পারছেন না। উত্তর মধ্য রেলওয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রয়াগরাজ জংশন স্টেশনে একমুখী ট্র্যাফিক ব্যবস্থা চালু করেছে। প্রবল ভিড়ে যাতে ফের পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা না ঘটে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এখন কেবল প্রয়াগরাজ থেকে ট্রেন চলাচল করবে। উত্তর-পূর্ব রেলওয়ে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর আগে দারাগঞ্জ স্টেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশ সীমানার মধ্যে রেওয়ার চকঘাট এলাকায় এই ট্রাফিক জ্যাম সম্পর্কে নেটিজ়েনদের পোস্টে ছয়লাপ সোশ্যাল মিডিয়া। কেউ লিখছেন, ‘প্রয়াগরাজ পৌঁছতে এখনও ৪০০ কিলোমিটার পথ বাকি। মহাকুম্ভে যাওয়ার আগে পরিস্থিতি দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।’ অন্য এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লেখেন, ‘কুম্ভ যাওয়ার পথে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে গিয়েছি। ভোর সাড়ে ৪টে থেকে অপেক্ষায়। ৫ ঘণ্টায় মাত্র ৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়েছি। এখন লখনৌতে থাকার কথা ছিল। প্রয়াগরাজ স্তব্ধ। বিমানের টিকিট বাতিল করে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে আবার বুকিং করতে হলো।’ এক ব্যক্তি বলেন, ‘৫০ কিলোমিটার রাস্তা যেতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগছে। ৪৮ ঘণ্টা ধরে এই ট্রাফিক জ্যামে স্তব্ধ যান চলাচল।’

মধ্যপ্রদেশ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কাটনি জেলায় সোমবার পর্যন্ত প্রয়াগরাজগামী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকবে। মাইহার পুলিশের তরফেও কাটনি থেকে গাড়িগুলিকে জবলপুরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংবাদসংস্থাকে এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘২০০-৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রাফিক জ্যাম রয়েছে। প্রয়াগরাজে যাওয়া অসম্ভব।’সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশের কাটনি, জবলপুর, মৈহার এবং রেওয়া জেলার রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি ও ট্রাকের বিশাল সারি।

রেওয়া জ়োনের পুলিশ আধিকারিক সাকেত প্রকাশ পাণ্ডে বলেন, ‘রবিবার মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের জন্যই এই ট্রাফিক জ্যাম হয়েছে। তবে আগামী দু’দিনের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। প্রয়াগরাজ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে তবেই এ দিন থেকে গাড়িগুলো ছাড়া হচ্ছে।’

রেওয়া প্রশাসনের বক্তব্য, মহাকুম্ভগামী পুণ্যার্থীদের গাড়ির সংখ্যা কমছে না। ফলে প্রতিদিনই ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হচ্ছে। রেওয়ার জেলাশাসক প্রতিভা পাল বলেন, ‘নিরাপদ আশ্রয়, খাবার এবং জলের বন্দোবস্ত করা হয়েছে আটকে পড়া পুণ্যার্থীদের জন্য।’ বিজেপি-র মধ্যপ্রদেশের সভাপতি ভিডি শর্মা দলীয় কর্মীদের পুণ্যার্থীদের সাহায্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নিশানা করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব । তাঁর দাবি ,পুণ্যার্থীরা কি মানুষ নন? তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত পুণ্যার্থীদের প্রতি আরও মানবিক হওয়া প্রয়োজন। সিনেমা কর মুক্ত করা সম্ভব হলে গাড়িগুলি টোল ফ্রি হবে না কেন?’ প্রয়াগরাজের যানজটের জন্য শহরে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছতে পারছে না, জরুরি পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রয়াগরাজে স্নান করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর আগে কুম্ভস্নান করেছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ একাধিক রাজনৈতিক নেতা ব্যক্তিত্ব।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!