Advertisement
  • এই মুহূর্তে স | হ | জ | পা | ঠ
  • অক্টোবর ২৩, ২০২৫

পৃথিবীর আকাশে এবার দুটি চাঁদ ! নতুন মহাজাগতিক সঙ্গীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে নাসা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
পৃথিবীর আকাশে এবার দুটি চাঁদ ! নতুন মহাজাগতিক সঙ্গীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে নাসা

না, কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার দৃশ্য নয়। এর পেছনে নেই ক্রিস্টোফার নোলানও। তবু খবরটা শুনলে অবিশ্বাস্যই মনে হবে— পৃথিবীর আকাশে দেখা মিলেছে ‘দ্বিতীয় চাঁদ’-এর! নাসা জানিয়েছে, আমাদের নীল গ্রহের সঙ্গে এখন ছায়াসঙ্গীর মতো ঘুরছে এক ক্ষুদ্র গ্রহাণু, পোশাকি নাম— পিএন-৭। তবে পৃথিবীর এই নতুন সহযাত্রীকে আপাতত ‘কোয়াসি-স্যাটেলাইট’ বা ‘অর্ধচাঁদ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থা। নাসা নিশ্চিত করেছে, বস্তুটি এই মুহুর্তে পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে ঘুরছে এবং ২০৮৩ সাল পর্যন্ত সে এখানে এভাবেই থাকবে।

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের হালিয়াকালা অবজারভেটরিতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে কয়েক মাস আগেই প্রথম ধরা পড়ে ক্ষীণ আলোর এক বিন্দু। প্রথমে তা গ্রহাণু ভেবে উড়িয়ে দেওয়া হলেও, দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, বস্তুটি পৃথিবীর সঙ্গে আশ্চর্যরকম ছন্দ মিলিয়ে চলছে। নাসার তথ্য অনুযায়ী, এই ছোট্ট গ্রহাণুটি সূর্যের চারপাশে এমন এক কক্ষপথে ঘোরে, যা পৃথিবীর কক্ষপথের প্রায় সমান্তরাল। অর্থাৎ, সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরলেও, তার গতি ও অবস্থান এমন যে, মনে হয়, এটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। তাই ‘দ্বিতীয় চাঁদ’-এর বিশেষণ।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, পিএন-৭ কোনো নতুন অতিথি নয়। পুরনো আর্কাইভ ছবিতে দেখা গিয়েছে, এটি অন্তত ১৯৬০-এর দশক থেকেই পৃথিবীর আশপাশে ঘুরছে। আকারে খুবই ক্ষুদ্র— আনুমানিক ১৮ থেকে ৩৬ মিটার ব্যাস, অর্থাৎ একটি ছোট বাড়ির সমান। আর চাঁদের মতো সরাসরি পৃথিবীর মহাকর্ষেও বাঁধা নয় এটি। বরং সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর সঙ্গে ‘১:১ রেজোন্যান্স’-এ ঘোরে— অর্থাৎ, পৃথিবীর গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এ কারণেই পৃথিবীর আকাশে যেন ভাসছে দুটি চাঁদ— এক আসল, অন্যটি ছায়ার মতো সঙ্গী। নাসার হিসেব বলছে, আগামী কয়েক দশক, অন্তত ২০৮৩ সাল পর্যন্ত, পৃথিবীর সঙ্গে এই ‘অর্ধচাঁদ’-এর বন্ধন অটুট থাকবে। এরপর সূর্য ও অন্যান্য গ্রহের মহাকর্ষীয় টানে এটি ধীরে ধীরে সরে যাবে অন্য পথে।
পৃথিবীর সঙ্গে এর নিকটতম দূরত্ব প্রায় ৪০ লক্ষ কিলোমিটার— যা চাঁদের দূরত্বের প্রায় দশ গুণ, আর এর দূরতম অবস্থান ১ কোটি ৭০ লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত।

তাহলে কি আমাদের প্রাচীন চাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে নতুন গ্রহাণু? বদলে যাবে পৃথিবীর যাবতীয় ভূগোল? বিজ্ঞানীরা বলছেন, না। এটি থেকে আপাতত কোনো বিপদ নেই, বরং একে মহাজাগতিক আশ্চর্য ঘটনা বলেই আমাদের সানন্দে গ্রহণ করা উচিত। এটি আসলে এক ‘কোয়াসি-মুন’— এমন এক বস্তু, যা গ্রহের সঙ্গে কক্ষপথ ভাগ করে নেয়, কিন্তু তার আকর্ষণে বাঁধা থাকে না। ফলে পৃথিবীর চিরায়ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, ঘূর্ণনের উপর এর কোনো প্রভাব পরবে না। পৃথিবীর মাটিতে এর আছড়ে পড়বার সম্ভাবনাও নেই। নাসার জানিয়েছে, পৃথিবীর সঙ্গে একই ছন্দে ছুটছে, কিন্তু কখনো একে অপরকে স্পর্শ করবে না।’

এ ধরনের মহাজাগতিক সঙ্গী পৃথিবীর ইতিহাসে একেবারেই বিরল। এখন পর্যন্ত মাত্র আটটি ‘কোয়াসি-মুন’-এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করা গিয়েছে। তাই পিএন-৭-এর আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক মহলে তুমুল সাড়া ফেলেছে। কারণ, এ ধরনের ক্ষুদ্র গ্রহাণু জোর্তিবিজ্ঞান গবেষণার জন্য এক আশ্চর্য ক্ষেত্র তৈরি করে— কক্ষপথের গতি, মহাকর্ষের প্রভাব, এবং পৃথিবীর নিকটবর্তী মহাজাগতিক বস্তুর আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে এগুলি অমূল্য। যদিও এর ক্ষুদ্র আকার ও ক্ষীণ আলোয় সাধারণ টেলিস্কোপে একে দেখা প্রায় অসম্ভব। তাই পৃথিবীর এই নতুন সঙ্গী হয়তো চাঁদের মতো রাত আলোকিত করবে না, কিন্তু মনে করিয়ে দিল এক চিরন্তন সত্য, আমরা যতই মহাকাশকে চিনেছি ভাবি না কেন, ব্রহ্মাণ্ড এখনো ভরা অকল্পনীয় অজানা বিস্ময়ে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!