- এই মুহূর্তে দে । শ
- ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
একটা উপাসনালয় ভেঙে আরেকটির নির্মাণে লঙ্ঘিত হচ্ছে দেশের আইন।হিন্দু বিরোধী ছিলেন না মুঘলরা, বললেন ইরফান হবিব
সঙ্কীর্ণতার রাজনীতি মন্দির মসজিদ বিতর্ককে দেশ জুড়ে ইন্ধন জোগাচ্ছে, সেই আবহেই এবার মুখ খুললেন ইতিহাসবিদ ইরফান হবিব।
বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে নিজের বাড়িতে এপ্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, মথুরা ও বারাণসীতে মন্দির ভেঙ হয়েছিল । ইতিহাসে এর উল্লেখ আছে । এটা ভুল সিদ্ধান্ত ৷ এতে কোনও সন্দেহ নেই, তবে এটাও দেখতে হবে যে ঘটনার পর ৩০০ বছর অতিবাহিত ৷ অন্য কোনও ধর্মীয়স্থান ভেঙে এই ভুল শোধরানো যাবে না ।
সেখানে মন্দির ছিল না মসজিদ, তা নির্ধারন করতে আলাদ করে সার্ভে বা কোর্টের নির্দেশের প্রয়োজন নেই । ধর্মাচরণ সংক্রান্ত ১৯৯১ সালের আইনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইন অনুসারে ১৯৪৭ সালের পর দেশের ধর্মীয় স্থানগুলির যে অবস্থা তাই রাখা উচিত । সেখানে পরিবর্তন করতে হলে দেশে লাগু আইনের পরিবর্তন করতে হবে । বেনারস নিয়ে যে সিদ্ধান্ত আদালত নিয়েছে, তাতে এই আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে । তিনশো- চারশো বছরের পুরনো স্থাপত্যের পরিবর্তন করে কী লাভ? এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন বহু বৌদ্ধ মঠ ভেঙে হিন্দু উপসনা গৃহ তৈরি হয়েছে ভারতে, এবার সেগুলোও কি ভেঙে ফেলা হবে । গয়ার মহাবোধি মন্দিরই এর অন্যতম নিদর্শন । শিব উপাসকরা সেটা ভেঙে মন্দির গড়েছিলেন । বর্তমানে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মাবিলম্বী উভয়েই সেখানে উপাসনা করেন ।
তিনি আরও জানান, অনেক মসজিদের উপর মন্দির নির্মাণের কথা বলা হলেও এর কোনও সঠিক তারিখ পাওয়া যাবে না৷ ঔরঙ্গজেবের মন্দির ধ্বংস করার ইতিহাস রয়েছে। এটা একটা ভুল কাজ ছিল। মসজিদ বানাতে চাইলে যেকোনও জায়গায় বানাতে পারতেন। মন্দিরের উপর নির্মাণের কি দরকার ছিল ? একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, একইভাবে মন্দিরও যেকোনও জায়গায় বানানো যায়৷ মসজিদ ভেঙে মন্দির বানানোর কী দরকার।
অধ্যাপক হাবিব বলেন, ক্রমাগত প্রচার করা হচ্ছে ভারত গণতন্ত্রের জন্মদাতা, তথ্যটি ভুল। আসলে প্রাচীন ভারতের নির্দিষ্ট কোনো সীমানা ছিল না। বৈশালি ছিল একটা মহাজনপদ। আঞ্চলিক রাজারাই তাদের বিজিত অঞ্চলের ভিত্তিতে নিজেদের ভারতের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করত । হিন্দুস্থান শব্দটি আরবদের উপহার । হিন্দুস্থান নামকরণ করেছিলেন তারাই।
তিনি আরও বলেন দেশে দক্ষিনপন্থীরা ক্রমাগত ঔরঙ্গজেবকে আক্রমন করছে। এটা ঠিক তিনি নানা জায়গায় মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়েছেন। যা নীতিগতভাবে অন্যায় । কিন্তু এখন যেভাবে মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়া নিয়ে মুঘলদের নামে কুৎসিত মন্তব্য করা হচ্ছে তাদের ইতিহাসটা জানা উচিত, পড়ে দেখা উচিত ।
তিনি বলেন, মুঘলরা ভারতে মন্দির নির্মানকে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। আকবর নিজে অমুসলিমদের থেকে জিজিয়া কর সংগ্রহ রদ করেছিলেন । পরবর্তীতেও সেই নিয়ম লাগু ছিল। এমনকি ঔরঙ্গজেবও হিন্দুদের থেকে জিজিয়া কর আদায় করেছেন, এমন কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। সম্রাট শাহজাহানের সময় বূন্দাবনে কূষ্ণের উপসনাকে উৎসাহিত করা হয়। আকবর এবং জাহাঙ্গিরের সময় মথুরার মন্দিরের জন্য আলাদা ভাতা দেওয়া হতো। ঔরঙ্গজেবের সময়ও সে প্রথা বন্ধ হয়নি। মুঘল আমলে ব্রজভূমি গ্রন্থেও তার উল্লেখ আছে।
মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়ার পেছনে ঔরঙ্গজেবের কী উদ্দেশ্য ছিল, এপ্রসঙ্গে ইতিহাসবিদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এর উত্তর রাজনীতিবিদরাই দিতে পারবেন।
অন্যদিকে আলিগড় মসজিদে মন্দির ছিল বলে যে দাবি উঠেছে, সেই নিয়ে ইরফান হাবিব বলেন, কোথাও মন্দিরের পরিবর্তে মসজিদ বানানো হয়েছে বলে কোথাও কিছু প্রকাশিত হয়নি। সরকারি বিবৃতিতেও এসেছে মসজিদটি সরকারি জমিতে নির্মিত। আগে এখানে কোনও উপাসনালয় বা মন্দির ছিল, তা বলা হয়নি।
আগ্রার তাজমহল সম্পর্কে তিনি বলেন, তাজমহল একটি সমাধি । এটা কোনও প্রাসাদ নয় । একপাশে একটি মসজিদ ও অন্য পাশে একটি মুসাফিরখানা রয়েছে । এর মর্যাদা ফারসি তারিখে লেখা । বাদশাহনামায় এর উল্লেখ আছে । বার্নিয়ারও এটি বর্ণনা করেছিলেন । এটি একটি সমাধি । মাজারে উরসের রশি আছে । হিন্দু মহাসভার এই বিষয়ে কেন আপত্তি আছে, জানি না ।
❤ Support Us