- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মার্চ ১৮, ২০২৫
কারা প্রকৃত ওবিসি, যাচাইয়ের জন্য চাই ৩ মাস সময়– রাজ্যের আবেদন মঞ্জুর শীর্ষ আদালতে

পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি বা অন্যন্য অনগ্রসর শ্রেণি শংসাপত্র বাতিল মামলার নয়া মোড়। মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতি বিআর গাভাই ও বিচারপতি এজি মাসিহর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। যেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বল নতুন করে ওবিসি সমীক্ষা চালানোর জন্য আবেদন করেন। শংসাপত্র সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরো বিস্তারিত সমীক্ষা করার জন্য ৩ মাসের সময় চাওয়া হয়। রাজ্য সরকারের আবেদন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। ৩ মাস পর, জুলাই মাসে এ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এদিন আইনজীবী সিব্বল আদালতকে জানান, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে নতুন তালিকা তৈরি করা হবে। সমীক্ষা শেষে ওবিসি তালিকায় যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৩ মাস সময় চাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই, বিচারপতি গাভাই জানতে চান, রাজ্যের নতুন সমীক্ষা নিয়ে অন্য পক্ষের কোনো আপত্তি রয়েছে কিনা। রাজ্যের আইনজীবী জানান, অন্য পক্ষের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়, কারণ তাদেরই আবেদন ছিল যাতে নতুন সমীক্ষা করা হয়। বিচারপতি গাভাই মন্তব্য করেন, ‘যদি নতুন সমীক্ষা ও সংরক্ষণ দেওয়ার পর কেউ ক্ষুব্ধ না থাকে, তাহলে এই মামলার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। তবে নতুন সমীক্ষা চললেও রাজ্যের পদক্ষেপের উপরই মামলার ভবিষ্যত নির্ভর করবে।’ সিব্বল পাল্টা বলেন, ‘জুলাইয়ে নতুন তালিকা আসলে তাতে আপত্তি করার সুযোগ থাকবে না।’ এরপর হালকা রসিকতার ছলে বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘৩ মাসের জন্য অন্তত আমরা একটু রেহাই পেলাম।’
গতবছর মে মাসে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর রাজ্যে ইস্যু হওয়া সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল ঘোষণা করেছিল। ওই রায়ে প্রায় ২২ লাখ সার্টিফিকেট অকেজো হয়ে যায়। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, এসব সার্টিফিকেট যথাযথভাবে আইন মেনে তৈরি হয়নি। সরকারি চাকরিতে ওবিসিদের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেছিল রাজ্য। যা নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করেছিলেন, ‘শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা গোটা একটি সম্প্রদায়ের জন্য অপমানজনক হতে পারে।’ হাইকোর্টের রায়ে জানানো হয়, মুসলিমদের ৭৭টি শ্রেণিকে ওবিসি সংরক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। বাতিল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে রাজ্যের সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন করে সংরক্ষণও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল। এর পাশাপাশি, রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরও এই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আপিল করে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় নি, ফলে ওবিসি সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গের লাখ লাখ তরুন-তরুণি। বন্ধ হয়ে আছে রাজ্যস্তরের সরকারি চাকরির পরীক্ষা। বিরোধীদের অভিযোগ সংরক্ষণ তালিকায় দেদার কারচুপি হয়েছে। যোগ্যদের এই সার্টিফিকেটের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি হয়েছে। গত সোমবার, ফুরফুরা শরিফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলার আইনি জট নিয়ে তোপ দাগেন। তিনি অভিযোগ করেন, সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি আটকে থাকায়, সরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডাক্তার, নার্স বা কর্মচারী নিয়োগ করা যাচ্ছে না।
❤ Support Us