- এই মুহূর্তে দে । শ
- জুন ১৮, ২০২৫
আরবিআই-এর সহযোগিতায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিল রাজ্য

রাজ্য সরকারের কোষাগারে নগদের জোগান দিতে ফের একবার ঋণের পথে হাঁটল নবান্ন। জুন মাসেই পরপর দুই দফায় মোট ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত ১৭ জুন, ২২ বছরের মেয়াদি ‘স্টেট গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ’ ইস্যু করে ২,০০০ কোটি টাকা ঋণ নেয় রাজ্য। তার আগে, ৩ জুন ২০ বছরের বন্ড বিক্রির মাধ্যমে ঠিক একই পরিমাণ অর্থ তোলে নবান্ন। দুই নিলাম মিলিয়ে কেবল জুন মাসে রাজ্য সরকারের কোষাগারে ঢুকেছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল ঋণের জন্য রাজ্যকে ৭.১০৯৬ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঋণের উদ্দেশ্য ঘোষণা করেনি, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, এই অর্থের একটি বড় অংশ বকেয়া ডিএ পরিশোধেই ব্যবহার করা হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ অনুযায়ী, জুন মাসের মধ্যেই বকেয়া মহার্ঘ ভাতা-র ২৫ শতাংশ মেটাতে হবে রাজ্য সরকারকে। সরকারি কর্মচারী সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার মোট অঙ্ক ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কর্মরত, অবসরপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন রাজ্যায়ত্ত সংস্থার কর্মচারীদের প্রাপ্য মিলিয়ে এই অঙ্ক পৌঁছেছে এই মাত্রায়। অর্থ দফতরের সূত্র অনুযায়ী, এখনই পুরো টাকা জোগাড় সম্ভব নয় বলেই, আংশিক অর্থ সংগ্রহে বাজার থেকে ঋণ তুলছে রাজ্য। তৃণমূল সরকার এই নির্দেশের বিরোধিতা করে আবেদন জানিয়েছে বটে, তবে চূড়ান্ত শুনানির আগে আদালত অবমাননার সম্ভাবনা এড়াতে অন্তত আংশিক অর্থ মেটানোর পরিকল্পনায় রয়েছে রাজ্য। সেই প্রয়োজন থেকেই কি এই ঋণ ? আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, রাজ্য সরকার বাজার থেকে সংগৃহীত ঋণ যেমন পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বা অন্যান্য মূলধনী প্রকল্পে খরচ করতে পারে, তেমনই প্রয়োজনে বেতন-ভাতার মতো চলতি খরচেও তা ব্যবহার করতে পারে। অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘এই মুহূর্তে রাজ্যের হাতে বকেয়া মেটানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই। তাই ধাপে ধাপে ঋণ তুলে সেই চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’ এক প্রবীণ অর্থনীতিবিদের মতে, ‘ঋণ তোলাই সরকারের শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তা কী খাতে ব্যবহার হচ্ছে, সে বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। না হলে এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে রাজ্যের অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে আরও টলমল করে দিতে পারে।’
আরবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ জুনের নিলামে প্রতিযোগিতামূলক ও অ-প্রতিযোগিতামূলক মিলিয়ে মোট ২০০০ কোটি টাকার সিজিএস পুরোপুরি বিক্রি হয়েছে। একইভাবে, ৩ জুনের নিলামেও ঠিক ২০০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে রাজ্য। এই ঋণ সংগ্রহের অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে মূলধনী খাতে, যেমন পরিকাঠামো উন্নয়ন, অথবা বেতন ও ভাতা পরিশোধে। আইনে এর জন্য কোনও বাধ্যতামূলক শর্ত নেই। তবে ডিএ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের অবস্থান এবং ঋণ গ্রহণের সময়কাল ঘিরে এক ধরনের ‘সম্ভাব্যতা’র ইঙ্গিত তো থাকছেই। রাজ্য বাজেটে চলতি অর্থবর্ষে বাজার থেকে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা ঋণ তোলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ৪ হাজার কোটির ঋণ গ্রহণ নতুন কিছু নয় বলেই মনে করছে অর্থমহল। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকার বাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ তুলেছিল। এদিন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তামিলনাড়ু, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানার মতো একাধিক রাজ্য অংশ ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল।
ঋণের টাকা দিয়ে যদি ডিএ-র ২৫ শতাংশও পরিশোধ করা হয়, তা হলেও তা বকেয়ার ছোট একটি অংশ মাত্র। তবে এতে কর্মীদের মধ্যে একটি বার্তা যাবে যে, সরকার বকেয়া পরিশোধে সচেষ্ট। কর্মরত কর্মীদের ক্ষেত্রে জিপিএফে অর্থ জমা দেওয়ার ভাবনা থাকলেও, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ক্ষেত্রে সেই অর্থ সরাসরি পেনশন অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। এই ব্যবস্থায় কিছুটা হলেও সরকারের নগদ চাপ কমবে। বকেয়া ডিএ পরিশোধের পথে এই ঋণ কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার। । প্রশাসনিক খরচ, এর স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তবে একটাই কথা—ঋণ তোলা সহজ, কিন্তু তার সুদ মেটানো আরো কঠিন। এক সরকারের করে যাওয়া ঋণ, শোধ করতে হয় অন্য সরকারকে। রাজ্য সরকারের উচিত এই অর্থ কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা। কারণ শেষ পর্যন্ত এই অর্থের বোঝা জনগণের ওপরেই বর্তায়।
❤ Support Us