- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- নভেম্বর ২, ২০২৩
“গাজায় প্রতিদিন ৪০০ শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে : রাষ্ট্রসঙ্ঘ
মঙ্গল ও বুধবার গাজার বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর অন্তত ১৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, হামাস পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে এই খবর জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী আরও জানিয়েছে যে এই হামলায় আরও ১২০ জন এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে নিখোঁজ রয়েছে এবং কমপক্ষে ৭৭৭ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলি এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন ৪০০ শিশু হয় নিহত বা আহত হচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে তারা ক্যাম্পে লুকিয়ে থাকা হামাস নেতাদের বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরের তরফে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা “যুদ্ধাপরাধের সমান।”
ইসরায়েলের বিমান বাহিনী একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে যে উত্তর গাজায় রাতভর অভিযানে আইডিএফ যোদ্ধারা এবং সাঁজোয়া বাহিনী ট্যাঙ্ক-বিরোধী অস্ত্র এবং গ্রেনেড দিয়ে গুলি চালানো হয়েছে।
সন্ত্রাসীদের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধে নিযুক্ত বাহিনী, আর্টিলারি এবং ট্যাঙ্ক থেকে সেনারা গোলাবর্ষণে সহায়তা করে একটি বিমানকে আকাশ থেকে আক্রমণ করার এবং একটি জাহাজকে সমুদ্র থেকে ক্ষ্যেপণাস্ত্র দ্বারা আক্রমণ করার নির্দেশ দেয়। লড়াইয়ের শেষে দেখা গেছে, ডজন ডজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।”
এই যখন পরিস্থিতি, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই সপ্তাহে পশ্চিম এশিয়ায় তাঁর দ্বিতীয় সফরে যাত্রা শুরু করতে চলেছেন, এই অঞ্চলে তাঁর বহু-সমালোচিত কূটনীতি সফর ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ বন্ধে বা সেই লক্ষ্যে গাজা উপত্যকায় সদর্থক ভূ-রাজনৈতিক ফলাফল দিতে ব্যর্থ হওয়ার কয়েকদিন পর হতে চলেছে, যখন গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্যের প্রবেশাধিকার মুখে বললেও এখনও সেই অর্থে দিচ্ছে না ইসরায়েল।
এই হামলার পর প্রাথমিকভাবে মিশরে কিছু সংখ্যক পাসপোর্টধারীদের প্রাথমিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হলেও এখনও গাজায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ আটকে রয়েছে, যারা চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে না।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে গাজায় প্রতিদিন ৪০০-র বেশি শিশু হয় নিহত বা আহত হচ্ছে। একটি বিবৃতিতে, জাতিসংঘ-এর শিশু সিনস্থার তরফে বলেছে যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, এবং চলমান বোমাবর্ষণের ফলে ৬ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার ইসরায়েল দফরে আসছেন। তাঁর মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন তবে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের হতাহতের সংখ্যা হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি পুনরায় জোরদার সওয়াল করবেন। এক সঙ্গে কোনও অসামরিক এলাকায় নির্বিচারে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বোমা বর্ষণের পর কি ভাবে সেই হামলা থেকে সাধারণ মানুষ বাঁচবেন তা নিয়ে বিশ্ববাসীর বিশেষ করে যারা ইসরায়েলের এই হামলার বিরুদ্ধে তাদের সংশয় থেকেই যাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র এটাও বলেছেন, “শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে, শিশুরা লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না।”
বুধবার গাজা উপত্যকায় বৃহত্তর শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে লাতিন আমেরিকার কয়েকটি বড় দেশ।
লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়ের আবাসস্থল আর্জেন্টিনা, পেরু এবং মেক্সিকো ইসরায়েলি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজায় বোমাবর্ষণ ও অবরোধের জেরে বলিভিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার একদিন পর লাতিন আমেরিকার এই দেশগুলির সমালোচনা প্রকাশ্যে আসে। কলম্বিয়া ও চিলি ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “পেরু এই সহিংসতার নিন্দা করে এবং এই নিন্দা অব্যাহত রাখবে।”
মেক্সিকান কূটনীতিক অ্যালিসিয়া বুয়েনরোস্ট্রো, গাজায় জাতিসংঘের একটি জরুরি বিশেষ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে, ইসরায়েলের দখলকারী শক্তিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তাদের এই আক্রমণ ও দখলদারির দাবি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য যুক্তি দিয়েই তিনি এই মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, এই হানাদারি বন্ধ করা দরকার। গাজার মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন আরও উদ্বেগজনক হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলকে অধিকৃত অঞ্চলে সাহায্য পৌঁছনোর অনুমতি দেওয়া উচিত।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ান অর্থমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন যে ইস্রায়েলকে অবশ্যই ‘সংযম’ দেখতে হবে। অ্যাডিলেডে এক সংবাদ সম্মেলনে পেনি ওং বলেন, গতকাল মিশরে ২০ জন অস্ট্রেলিয়ান পরিবারের দুই সদস্য এবং একজন স্থায়ী বাসিন্দার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি এটা দেখে খুব স্বস্তি পেয়েছি এবং কৃতজ্ঞ বোধ করছি যে এই প্রথম এই দলটি আক্রান্ত অঞ্চলটি অতিক্রম করতে পেরেছে।”
তিনি ইসরায়েলের প্রতি একটি বার্তা দিয়ে বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের মৃত্যুকে মেনে নেবে না, তাই যখন ইসরায়েলের বন্ধুরা ইসরায়েলকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানায়, যখন ইসরায়েলের বন্ধুরা ইসরায়েলকে অসামরিক মানুষদের জীবন রক্ষার জন্য অনুরোধ করে, তখন ইজরায়েলের এই কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনা উচিত। তবে এই বিষয়টি ইসরায়েলের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যদিকে এই ঘটনা সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার গুরুতর ঝুঁকির সম্মুখীন করে তোলে ইসরায়েলকে।”
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাইডেন প্রায় ২০০ জনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন বন্দিদের মুক্ত করে বের করে আনার জন্য। তখন এক ইহুদি শিক্ষক বাইডেনকে চিৎকার করে বলেন, “একজন ইহুদি শিক্ষক হিসাবে, আমি আপনাকে এখনই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে চাই।” বাইডেনের এই বক্তব্য অনেক প্রশ্নই উস্কে দিচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হল, তাহলে কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলি বন্দিদের হামাসকে হাত থেকে উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করে তারপর গাজায় আবার আরও তীব্র আক্রমণ চালাতে ইসরায়েলকে উৎসাহিত করছেন ? এই যুদ্ধের তাহলে শেষ কোথায়?
❤ Support Us