Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা বৈষয়িক
  • ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই বঙ্গে বিনিয়োগের বড়ো ঘোষণা আম্বানি -গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই বঙ্গে বিনিয়োগের বড়ো ঘোষণা আম্বানি -গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে র উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে বাংলায় বড়ো বিনিয়োগের ঘোষণা করল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী ৷ মুকেশ আম্বানি থেকে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন থেকে ভুটানের মন্ত্রী – সবার মুখেই দরাজ প্রশংসা মুখ্যমন্ত্রীর ৷

তারাখচিত মঞ্চ। জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ, এভাবেই শুরু হল অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন – ২০২৫। মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে সজ্জন জিন্দাল কে নেই মুখ্যমন্ত্রীর পাশে। দেশ বিদেশের শিল্পপতি ও প্রতিনিধিরা ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী সভায় উপস্থিত। রয়েছেন ভূটানের মন্ত্রী। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার জন্য বিনিয়োগ–লগ্নি টানতে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী। নতুন প্রজন্মকে কর্মসংস্থান দেওয়াটা এখন রাজ্যের কাছে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
কলকাতায় নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টরে বুধবার দুপুর ২টোয় শুরু হয় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। চলবে আগামীকাল পর্যন্ত। মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, এবারে ২০টি দেশ ‘পার্টনার’ । ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাই কমিশনারেরা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য গতকালকেই কলকাতায় চলে এসেছেন। এছাড়াও মঙ্গলবার মমতা জানান, এবার ৪০ দেশের বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন সম্মেলনে। উদ্বোধনের পর, প্রথমেই বক্তব্য রাখেন আইটিসির চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী, সংক্ষিপ্ত ভাষণে মুখ্যমন্ত্রীর ভূসায়ী প্রশংসা করতে দেখা যায় তাঁকে। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, হর্ষ নেওটিয়া, ভুটানের মন্ত্রী ইয়নটেন ফুনসুক, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ফিকির চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন আগরওয়াল, জিন্দাল গোষ্ঠীর সজ্জন জিন্দাল, মুকেশ আম্বানি-সহ অন্যান্য আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ৷ প্রত্যেকের মুখেই শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা।

ভুটানের মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভুটানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ নিবিড়। জলপাইগুড়ি হয়ে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। বক্তব্যের মধ্যেই বারেবারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বক্তব্যের শুরুতেই জানান, পশ্চিমবঙ্গ উন্নয়নে এগিয়েছে মমতা জমানায়। এখন পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টিশিল কাজের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ, সেকথাও বলেন সোরেন। বক্তব্যের শেষে ঝাড়খণ্ডে বিনিয়োগ করার জন্য শিল্পপতিদের আহ্বান জানান সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শুরুর দিনেই একাধিক বিনিয়োগের প্রস্তাব ৷ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুকেশ আম্বানি কী বলছেন, সেদিকে নজর ছিল সব পক্ষের। মোট পাঁচটি আলাদা আলাদা বিষয়ে বিনিয়োগের কথা বলেন মুকেশ আম্বানি, তিনি বলেন এই রাজ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল রিলায়েন্স, আগামী দিনে সেই পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি করা হবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ৷ মনে করিয়ে দেন, জিও যাত্রা শুরু করেছিল কলকাতা থেকে। তিনি মনে করেন, কলকাতা ও মমতা ব্যানার্জি সৌভাগ্য বয়ে এনেছে। সেই কারণে এ রাজ্যে ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরির বিষয়ে আরও বিনিয়োগ করবে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি। তিনি আরো বলেন বিশ্বজুড়ে এখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জোয়ার। প্রযুক্তির বিকাশ ও গবেষণার কাজে আরো বেশি করে বিনিয়োগ করবে তাঁর কোম্পানি। বাংলায় একটি এআই ডেটা সেন্টার তৈরি করবে তাঁর সংস্থা। সেখানে উন্নততর এআই তৈরির কাজ করা হবে। রিটেল ও খুচরো ব্যবসায় আগামী সময়ে বিনিয়োগ বারবে। এ রাজ্যের একাধিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও প্রস্তুতকারক সংস্থাতেও বিনিয়োগ করেছে রিলায়েন্স। আম্বানি উল্লেখ করেন, আনমোল রাজা, বিস্কফার্ম থেকে শুরু করে বিশ্ববাংলার মতো সংস্থার খাদ্য বিভাগে বিনিয়োগ করেছে তাঁর সংস্থা। গ্রিন এনার্জি বা সবুজ শক্তির দিকে এগোচ্ছে সব দেশ। সেই ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের কথা বলেছেন মুকেশ। তিনি বলেছেন, সোউর বিদ্যুৎ প্রকল্পের আরো বিকাশের জন্য সোলার বাংলা প্রকল্পের কথা ভাবা যেতে পারে।। ‘আমাদের বিনিয়োগ ডিজিটাল পরিষেবা, সবুজ শক্তি এবং খুচরা বিক্রেতা-সহ একাধিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত হবে ৷” তাঁর দাবি, এই বিনিয়োগের ফলে রাজ্যে এক লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে’- বিশ্বের অন্যতম ব্যবসায়ী আম্বানির দাবি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বলেন, “প্রত্যেকবার এখানে আসার আগে আমি ভাবি, আগের বারের থেকে ভালো হবে না । প্রতিবার আমি ভুল প্রমাণিত হই । প্রত্যেকবার গ্লোবাল সামিট আরও বড় হয় । মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদিন ৬৪, ০০০ স্টেপ হাঁটেন, এটাই তাঁর এনার্জি । মহিলা এমপাওয়ারমেন্ট ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকা গোটা দেশের অনুসরণ করা উচিত । বাংলার অ্যাসেট তার মানুষ । তাদের দক্ষতা ।” রিলায়েন্স সবসময় বাংলার নির্ভরযোগ্য অংশীদার থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ৷

মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি ভাষণের একপর্যায়ে শিল্পপতিরা জানতে চান বিনিয়োগ করলে কাজের পরিবেশ মিলবে কিনা। এই সব প্রশ্নের একবারে উত্তর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ এই শিল্প সম্মেলন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‌ধর্মঘট হয় না বাংলায়। এখানে ফিরেছে কর্মসংস্কৃতি। নারীর ক্ষমতায়নে শীর্ষে বাংলা। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পেও এক নম্বরে। পথ দেখাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, শিক্ষাশ্রী। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, কী হবে এই সম্মেলন করে?‌ কিন্তু আমাদের দেখাদেখি অন্য সব রাজ্য এমন ধরনের সম্মেলন করছেন। আর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই সম্মেলন জরুরি।’‌ যে কোনো সমস্যায় পড়লে মুখ্যমন্ত্রী তা সমাধানের চেষ্টা করেন। এর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন হর্ষ নেওটিয়া এবং সঞ্জীব পুরী। একই কথা শোনা গিয়েছে শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কার বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘বেঙ্গল ইজ ইন বিসনেস, বেঙ্গল মিনস বিজনেস। তাই বাংলার এলে আপনাদের হতাশ হতে হবে না।’

মুকেশের পাশাপাশি আগামী কয়েক বছরে বাংলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলে ঘোষণা করেছেন আরপি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ৷ এদিন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেছেন, “আমরা স্বাস্থ্যসেবা, শক্তি এবং শিক্ষায় 10 হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করব ৷” তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বলেছেন, “আমরা এখন একটি ভিন্ন বাংলায় বাস করি, যা পরিবর্তিত ।” তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী সর্বদা সহজলভ্য, দ্রুত এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত নেন । এছাড়াও জিন্দাল গ্রুপের প্রধান সজ্জন জিন্দাল বাংলায় শিল্পবান্ধব সরকার ও পরিবেশে মুগ্ধ। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ১৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেন। পিছিয়ে নেই আইটিসি-র চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী। হোটেল, এফএমসিজি, আইটি-সহ একাধিক সেক্টরে বিনিয়োগ রয়েছে আইটিসি গ্রুপের। এই গ্রুপের হেডঅফিসও কলকাতায় রয়েছে। আইটিসি চেয়ারম্যান বুধবার জানিয়েছেন, রাজ্যে তাঁদের হোটেল ব্যবসা দিনে দিনে বাড়ছে। বর্তমানে আইটিসি গ্রুপের ৬টি হোটেল পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরী। আগামী বছরের মধ্যে হোটেলের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি। অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন নেওটিয়াও পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের হোটেল ব্যবসার বিস্তৃত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য সম্মেলনের বক্তব্যে। পশ্চিমবঙ্গে একাধিক হোটেল রয়েছে নেওটিয়া গোষ্ঠীর। আগামী দিনে তাজ গ্রুপের সঙ্গে পার্টনারশিপে আরও হোটেল তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। কলকাতার বাইরে পাঁচতারা এবং সাততারা হোটেল গড়ে তোলার কথাও জানিয়েছেন। কলকাতার বাইরে দার্জিলিং, কালিম্পং, গোরুমারা অভয়ারণ্য, দিঘা, শান্তিনিকেতন, সুন্দরবনের মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে হোটেল গড়বে নেওটিয়া গ্রুপ। এর পাশাপাশি গল্ফ থিমের টাউনশিপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপ। ২৪০ একর জমির উপর সেই টাউনশিপ গড়ে তোলা হবে। তা গড়ে তুলতে ৭-৮ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন হর্ষ নেওটিয়া।

অন্যদিকে বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বাংলায় বিনিয়োগের ডাক দিলেন পশ্চিমবঙ্গের ব্রান্ড অ্যামবেসডর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্যের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মেলনের গুরুত্ব কতখানি, সে কথা উলেক্ষ করেন তিনি। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের সঙ্গে বাংলার তুলনা টেনেছেন বাইশ গজের মহারাজা। মুখ্যমন্ত্রী র ঢালাও প্রশংসা শোনা গেল তাঁর মুখে। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ১০০ শতাংশ দিয়ে চেষ্টা করছেন, যাতে বাংলাও এগিয়ে যায়।’ ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বাংলা–ঝাড়খণ্ডের ভূপ্রকৃতিগত মিলের কথা তুলে ধরে বললেন , ‘‌ঝাড়খণ্ডে প্রচুর খনিজ সম্পদ আছে। যৌথ প্রকল্পের উদ্যোগ নিলে দুই রাজ্যেরই বিপুল উন্নতি সম্ভব ’।‌ পরিবেশবান্ধব শক্তি–সহ একাধিক বিষয়ে বাংলার সঙ্গে যৌথভাবে শিল্পবিকাশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করল ভুটান।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!