- দে । শ
- সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪
ছত্তিশগড়ে রহস্য মৃত্যু বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের

সংসারে দুটো বাড়তি পয়সা জোগাতে ছত্তিশগড়ে কাজ করতে ছুটেছিলেন কালনা শহরের জাপোট এলাকার বাসিন্দা আনন্দ দত্ত (৫০)। সেখান থেকে তার আচমকা মৃত্যুর খবর আসায় ছড়িয়েছে রহস্য। মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে সহকারী হিসাবে তিন মাস আগে ছত্তিশগড়ে যান আনন্দ। আর দিন কুড়ি পরেই তার বাড়িতেই ফিরে আসার কথা ছিল। ফিরল তার নিথর দেহ। সহকারীদের দাবি অনুযায়ী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আনন্দর। সেটা মানতে রাজি নন তার পরিবারের লোকজন। মৃত্যুর কারণ ও চিকিৎসার নথিপত্র নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। দানা বেঁধেছে রহস্য। ইসিজি রিপোর্টে লেখা তারিখ ও সাল নিয়েও সংশয়। শ্মশানঘাটে মৃতদেহ দাহ করতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা তৈরি হলেও মৃত্যুর শংসাপত্র না থাকায় তা আর হয়নি। শেষপর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হতেই সেই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কালনা হাসপাতালের মর্গ থেকে বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা শহরের জাপটপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনন্দ দত্ত। স্ত্রী ও ৩ ছেলে নিয়ে পরিবার। আনন্দবাবু তেমন কিছু করতেন না। সংসারে অর্থনৈতিক টান ছিল। সেই অভাবের তাড়নাতেই পুজোর আগে তিনি এলাকার মৃৎশিল্পী সমীর পাল, সহকারী বিশ্বজিৎ পালের সঙ্গে তাদের সহকারী হিসাবে কাজ করার জন্য ছত্তিশগড়ে প্রতিমা তৈরির কাজে যান। গত মঙ্গলবার রাতে সঙ্গীদের ফোন মারফত হঠাৎ করে আনন্দবাবুর পরিবার জানতে পারেন যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এরপরেই তার মৃত্যুসংবাদ আসে। যদিও তারপরেই বুধবার গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে কালনায় তার মৃতদেহ আসে। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেট না থাকায়, বেশ কিছু নথিপত্র নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে পরিবারে। মৃতের বড় ছেলে অমলেন্দু দত্ত বলেন, ‘ওখানকার হাসপাতালের কোনও কাগজপত্র পাইনি। একটি ইসিজি রিপোর্ট থাকলেও সেখানে ৪ নভেম্বর ২০১৬ সালের তারিখ উল্লেখ রয়েছে, তাতেই হাতে লেখা ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ রয়েছে। কাগজপত্র ঠিক নেই। অন্যের রিপোর্ট আমার বাবার নামে করে দিয়েছে। এই নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও একটি সাদা কাগজে ফোন নম্বর ছাড়া কিছুই আমরা পাইনি। এই কারণে বাবার মৃত্যুর কারণ নিয়ে সংশয় তৈরী হয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াও মৃতদেহ দাহ করা সম্ভব নয়। কালনা থানায় গিয়েছিলাম। কালনা থেকে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ যদিও তার বাবার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ণ দেখতে পায়নি বলে জানিয়েছে অমলেন্দু। মৃতের সঙ্গে ছত্তিশগড়ে যাওয়া মৃৎশিল্পী সমীর পাল বলেন, ‘আমরা ওখানে দুর্গা, গণেশ, বিশ্বকর্মার মূর্তি তৈরির জন্য গিয়েছিলাম। পরশু রাতের দিকে আনন্দবাবুর বুকে ব্যথা হচ্ছিল। ঘনঘন জল খাচ্ছিল। গ্যাসের ওষুধ খায়। খাওয়াদাওয়ার পর বমি করে। ফের ইনো খায়। ফের কাজে বসে। এরপরেই অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানায়।’ প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে থাকা মাধব বিশ্বাস জানান, ‘আনন্দবাবু অসুস্থ হওয়ার পর তাকে বেসরকারি বারুণী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক চিকিৎসা করার সুযোগ পাননি। চিকিৎসক জানান, হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়।’ তবে ইসিজি রিপোর্টে কিভাবে ২০১৬ সাল ও তারিখ প্রিন্ট হয়েছে সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
❤ Support Us