Advertisement
  • দে । শ
  • জানুয়ারি ৩, ২০২৩

শিখ সমর্থন ফিরে পেতে ধর্মান্তরের অভিযোগকেই হাতিয়ার মোদির

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
শিখ সমর্থন ফিরে পেতে ধর্মান্তরের অভিযোগকেই হাতিয়ার মোদির

পাঞ্জাবে নিজেদের হারানোর জমি ফিরে পেতে চাইছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের তাসকে সামনে রেখে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল।

শিখদের ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগাতে এবছরে শুরুতে ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন এবছর ২৬ ডিসেম্বর ‘বীর বাল দিবস’ পালনের কথা। উল্লেখ্য এবছর থেকেই শুরু হল এই ‘বীর বাল দিবস’ পালন। এদিন দিল্লির ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিখদের বিরুদ্ধে মুঘল শাসক বিশেষত ঔরঙ্গজেবের নিপীড়নের কথা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গেই তিনি দশম গুরু গোবিন্দ সিং -এর দুই পুত্র জোরাওয়ার সিং ও ফতেহ সিং এর মর্মান্তিক হত্যার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

প্রসঙ্গত, শিখ ইতিহাস অনুযায়ী দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিং এর দুই পুত্র জোরাওয়ার সিং ও ফতেহ সিং সিরহিন্দের নবাব ওয়াজির খান কর্তৃক ১৭০৪ সালে নিহত হন। তখন তাদের বয়স ছিল সাত ও পাঁচ বছর। সেই দিনটিও ছিল ২৬ ডিসেম্বর। শিখদের কাছে এই ঘটনা খুবই আবেগের। ফতেহ সিংকে তাঁরা প্রথম নিহাঙ্গ যোদ্ধা বলে মনে করে।

এই ঘটনার স্মৃতি উস্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ঔরঙ্গজেবের সাথে এই শিশুদের কোনো শত্রুতা ছিল না। কিন্তু তারপরেও এই শিশুদের ইঁটের দেওয়ালের মধ্যে মাথা থেঁতলে দিয়ে মারা হয়েছিল। কারণ গুরু গোবিন্দ সিং ধর্মান্তরিত হতে চাননি। ধর্ম পরিবর্তনে আগ্রহী হয়নি তাঁর দুই সন্তান। সেই কারণে এই হত্যা বলে মন্তব্য করেন মোদি। এরপর দেশের যুবসমাজকে ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান মোদি।

প্রধানমন্ত্রী মোদি এদিনের বক্তৃতায় কার্যত আরএসএসের ইতিহাসের চিরায়ত ব্যাখ্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। যেখানে ইতিহাসকে একরৈখিকভাবে দেখা হয়। অর্থাৎ মুসলিম শাসন মানেই বিদেশি শাসন। ইতিহাস বিদরা স্পষ্টতই ইতিহাসের এমন বিকৃত ব্যাখ্যার নিন্দা করছেন। কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল যে মিথ আর ইতিহাসের পার্থক্য বোঝেন না। এটা তারই নিদর্শন। এক প্রবীণ ইতিহাসবিদের কথায়, শিখ ও মারাঠাদের সাথে মুঘলদের বিবাদের অনেক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। ধর্মীয় কারণ এক্ষেত্রে ততটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু শাসক দল মিথকেই ইতিহাস বলে চালাতে চান। ইতিহাসে যা ঘটে গেছে তার বদল করা যায় না। কিন্তু অতীতে কোনো অন্যায় হলে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে তার পুনরাবৃত্তি বা তার প্রত্যাঘাত কখনই বাঞ্ছনীয় নয়।

সব থেকে মজার বিষয়, যে শিখ ভাবাবেগকে মোদি নির্বাচনের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছেন সেই শিখদের অনেকেও বীর বাল দিবস নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাদের আপত্তি এই নামকরণ নিয়ে। অকাল তখত এবং এসজিপিসি প্রথমেই জানিয়েছিল এই বীর বাল দিবসের পরিবর্তে যেন অন্য নাম রাখা হয়। তাদের সুপারিশ ছিল ‘সাহেবজাদে শাহাদাত দিবস’ নামকরণ করবার। ১১ অক্টোবর এই নিয়ে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্র এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। তাদের মত ছিল কোনো নামকরণের পূর্বে শিখদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যর দিকটা বিচার করা ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। অবশ্য শিখদের অন্য একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!