- এই মুহূর্তে বি। দে । শ
- জুলাই ১৯, ২০২৪
অশান্ত বাংলাদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে মামলার শুনানি এগিয়ে আনল ঢাকা হাইকোর্ট

সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিনের পর দিন অবনতি হচ্ছে । রাজধানী ঢাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ৩৯ জন মারা গিয়েছেন । আহত বহু । ঢাকা,, চট্টগ্রামে , নরসিংদী ,রংপুর, সাভার , মাদারীপুরে -সর্বত্র জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন । এমতাবস্থায় ঢাকাসহ সে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে । বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো স্বার্থান্বেষি মহলের প্ররোচনায় নানা গুজব ছড়াতে পারে । ফলে কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই সরকারের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
শুক্রবার সকাল দশটায় ঢাকার মেহুল বাড্ডা এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে । আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এবং ইট বৃষ্টি রুখতে, ছররা গুলি চালানোর অভিযোগ উঠছে পুলিশের বিরুদ্ধে । যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মালিবাগে অবরুদ্ধ সড়ক । ঢাকার উত্তরা , মোহাম্মদপুরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারিদের সংঘর্ষ অব্যাহত ।
বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ঢাকা হাইকোর্টে সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল আগামী ৭ অগাস্ট । গতকাল প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনার নির্দেশ অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাপিল করেন আদালতে, তারপরই তারিখ পরিবর্তন করে, ২১ জুলাই রবিবার মামলার শুনানির সিদ্ধান্ত নেয় হাইকোর্ট ।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত ও ৪৪ শতাংশ সাধারণ ক্যাটেগরির জন্য নির্ধারিত ছিল । আবার এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়দের জন্য । বাকি ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ বিভিন্ন জেলার জন্য, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল । ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওই ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ তুলে দেন । কেবল জনজাতিদের ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষণ বজায় রাখেন । তখনকার মতো আন্দোলন থেমে গেলেও আবার ২০২১ সালে তা মাথাচাড়া দেয় । ওই বছর সাতজন মুক্তিযোদ্ধার আত্মীয় হাসিনা সরকারের ওই সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান । চলতি বছর ৫ জুন সে মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে । হাইকোর্ট জানিয়েছে, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ । এর অর্থ আবার ২০১৮-র পূর্ববর্তী সংরক্ষণ আইন জারি থাকবে । ফলে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা প্রতিবাদে নামেন । তাঁদের দাবি সবরকমের কোটা বাতিল করুক সরকার । হাসিনা সরকারের তরফে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে । যদিও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাইকোর্টের সম্পূর্ণ রায় প্রকাশ হওয়ার পর তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত ।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা সহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচী’ পালন করেছেন সে দেশের আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা । সারা শহর কার্যত অচল হয়ে যায় । বুধবার সে দেশের সরকারি চ্যানেল বি টিভিতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। পরেরদিন দেশের সরকারি চ্যানেল ‘বি টিভি’-র সদর দফতরে আগুন লাগিয়ে দেন আন্দোলনকারীদের একাংশ । বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান( স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলি আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ , হাসিনার সরকার ক্ষমতাপ্রদর্শন করতে ও বিরোধী জনমতকে দমন করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার করছে । আন্দোলনকারীদের একজন বিদিশা রিমঝিম বলেছেন, আমাদের প্রধান দাবি , প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে । দ্বিতীয়ত, আমাদের নিহত ভাইদের ন্যায় দিতে হবে। ‘প্রতিবাদকারীদের দাবি, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা আসলে ‘বৈষম্যমূলক’ । তাঁদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ দলের সমর্থকদের জন্য এই কোটা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সরকার যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করুক ।
❤ Support Us