- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- নভেম্বর ৯, ২০২৪
কালনায় রেললাইনের ধারে মেধাবী ছাত্রীর দেহ ঘিরে উত্তেজনা
রেললাইনের ধার থেকে মেধাবী ছাত্রীর দেহ উদ্ধারে দানা বেঁধেছে রহস্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় কালনা শহরের মধুবন এলাকার এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশানি পড়তে গিয়েছিল দ্বাদশের ছাত্রী অঙ্গনা হালদার (১৮)। আর ফেরেনি। রাতে কালনা স্টেশনের অদূরে জিউধারা রেলগেটের কাছে রেললাইনের ধারে মেলে ধাত্রীগ্রাম দাসপাড়ার বাসিন্দা অঙ্গনার দেহ। রেলপুলিশ দেহ উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। শনিবার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জিআরপি প্রাথমিক তদন্তে এটাকে ‘আত্মহত্যা’ মনে করলেও ছাত্রীর পরিবার নিশ্চিত এই ঘটনা ‘পরিকল্পিত খুন’।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রের খবর বছর দুয়েক আগে অঙ্গনাকে টিউশন পড়াতে নিয়ে যাওয়ার পথে বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার বাবা জয়দেব হালদারের। গুরুতর জখম অঙ্গনা প্রায় ৭ মাস ধরে কলকাতার পিজি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকার পর নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অঙ্গনা ওরফে পিউর পা থেকে প্লেট বের করা হয়েছে। মেয়েকে প্রাণে বাঁচাতে তার বাবার মৃত্যুর খবর শোনাননি অঙ্গনার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রিঙ্কু হালদার। এমনকী স্বামীর মৃত্যুর খবর গোপন রাখতে ও তাকে সুস্থ করে তুলতে একসময় শাঁখা-সিঁদুরও পরতেন রিঙ্কুদেবী।
শুক্রবার বিকালে স্থানীয় কৃষ্ণদেবপুর হাইস্কুলের দ্বাদশের ছাত্রী অঙ্গনাকে টোটোয় চাপিয়ে তার মা অন্যদিনের মত মধুবনের ইংরাজি শিক্ষক শম্ভু কর্মকারের কাছে টিউশন পড়াতে নিয়ে যান। সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে অঙ্গনা তার মাকে ফোন করে আর্তনাদ করে, ‘এরা আমাকে বাঁচতে দেবে না মা।’ এরপরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কালনা রেলস্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অঙ্গনা স্টেশনের ১ নম্বর গেট দিয়ে একাই প্লাটফর্মে ঢুকল। তারপর ব্যান্ডেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। স্টেশন থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে পুলিশ তাকে পড়ে থাকতে দেখে। যদিও সেখানে কোনও সিসি ক্যামেরা ছিলনা। এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে পড়া শেষ করে ওই পড়ুয়া মায়ের কাছে না গিয়ে কেন কালনা স্টেশনের দিকে গেল? মা রিঙ্কু হালদার অঙ্গনার শেষ ফোন পাওয়ার পর আর যোগাযোগ করতে না পেরে মধুবন এলাকায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। এরপর বাধ্য হয়ে রাতেই পুলিশের দ্বারস্থ হয় অঙ্গনার বাড়ির লোকজন। এখন বড় প্রশ্ন, অঙ্গনা শেষ ফোনে যারা বাঁচতে দেবে না বলে আর্তনাদ করেছিল, তারা কারা? অঙ্গনার মা রিঙ্কু এবিষয়ে জানান, ‘আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আমার কোনো সন্দেহের তালিকা কিছু নেই।’ তবে রিঙ্কুদেবীর মনে হচ্ছে তার মেয়েকে ‘কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘নাহলে স্যরের বাড়ি থেকে অতটা দূরে ওই জনমানবশূন্য অন্ধকার জায়গায় ও যাবে কী করে?’ মাধ্যমিকে ধাত্রীগ্রাম স্কুলে টপার ছিল অঙ্গনা। দুর্ঘটনার পর ফেব্রুয়ারি মাসে পায়ের প্লেট বের করার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে পড়াশোনার জগতে ফিরছিল। নিটের জন্য তৈরি হচ্ছিল। কলকাতার ফুলবাগানের একটি কোচিং সেন্টারে অঙ্গনাকে ভর্তিও করা হয়েছিল। অঙ্গনার প্রাইভেট টিউটর শম্ভু কর্মকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুক্রবার বিকাল ৫টা ২০ নাগাদ অঙ্গনা পড়তে যায়। ছাত্রী হিসাবে কোনোদিনই খারাপ ছিলনা। দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু, তার উপর পিজিতে ভর্তি থাকার কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। পিছিয়ে পড়েছে। একটা বছর পরীক্ষা দিতে পারেনি। এইজন্য টুয়েলভ ক্লাসে ওর ২ বছর হচ্ছে। ও নিয়মিত পড়তে যেতে পারত না চিকিৎসার কারণে। মানসিকভাবে ওর একটু অসুবিধা হচ্ছিল। অতীতকে আরও বেশি করে মনে করত। বাবার কথা ভাবত সবসময়। একটু বিক্ষিপ্ত মানসিকতাও ছিল। শুক্রবার শিক্ষকের ব্যক্তিগত কাজ থাকায় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অঙ্গনাকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সে স্টেশনের দিকে কেন গেল, সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অঙ্গনার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক চৌধুরিরা। মন্ত্রী শনিবার কালনা মহকুমা হাসপাতালেও যান। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশকে বলেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরিবারকে দিতে বলেছি।’ কালনা জিআরপি ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’ ধাত্রীগ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজো হয় মহা ধূমধামের সঙ্গে। অঙ্গনার মৃত্যুর খবর আসতেই এলাকাজুড়ে স্তব্ধতা নেমে এসেছে।
❤ Support Us