- এই মুহূর্তে দে । শ
- নভেম্বর ২৭, ২০২৩
রাজ্যের হাতে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির ছাড়পত্র।আলোচনা অব্যাহত আদানিদের সঙ্গে, জানালেন শশী
তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর ছেড়ে যায়নি আদানিগোষ্ঠী। দিল্লিতে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শর্ত সাপেক্ষে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে। এই ছাড়পত্রের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। তবে প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও জাহাজ মন্ত্রকের ছাড়পত্র রাজ্যের হাতে এসে গেছে। তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরের সাম্প্রতিক অবস্থান নিয়ে শশী পাঁজর এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে ধোঁয়াশা স্পষ্ট হল। কারণ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পতিদের বলেছিলেন, তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর প্রস্তুত, আপনারা টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কে আদানিগোষ্ঠী তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকে সরে গিয়েছেন? না হলে মুখ্যমন্ত্রী আদানির প্রকল্পে অন্য শিল্পপতিদের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে বলছেন কেন?
প্রসঙ্গত, কারণ গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসেই রাজ্য সরকার তাজপুর বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক আগ্রহপত্র আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানির ছেলে কর্ণ আদানির হাতে তুলে দিয়েছিল। তখন সেই দরপত্রে বা টেন্ডারে সর্বোচ্চ দর আদানি দিয়েছিলেন বলেই আদানি গোষ্ঠীকে ওই আগ্রহপত্র দেওয়া হয়।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর করা মন্তব্যে কিছুটা সংশয় তৈরি হলেও রাজ্যের তরফে কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেননি। রবিবার দিল্লিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় “পশ্চিমবঙ্গ দিবস” উপলক্ষে রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজার সাংবাদিক বৈঠক হয়েছে। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে প্রশ্ন উঠবে আঁচ করেই তিনি আগাম এই বিষয়ে বিবৃতি তৈরি করেই এসেছিলেন। তাজপুর বন্দর নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শশী বলেন, “তাজপুর বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক আগ্রহপত্র-এর এই প্রকল্পের দরপত্রে বা টেন্ডারে সর্বোচ্চ দর দেওয়ার জন্য অ্যাপসেজ বা আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জোন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের চারটি মন্ত্রক—স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও জাহাজ মন্ত্রকের থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র চাওয়া হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শর্তযুক্ত নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিয়েছে। তার সঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য সরকার ও আদানি গোষ্ঠী কাজ করছে, আলোচনা চালাচ্ছে। স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কথাবার্তা চলছে।” তবে এই পর্যবেক্ষণ হিসেবে কী জানতে চেয়েছে শ্রম মন্ত্রক, তা অবশ্য বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বিদেশ, প্রতিরক্ষা, জাহাজ—কেন্দ্রীয় সরকারের এই তিনটি মন্ত্রকের ছাড়পত্র এসে গিয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে শিল্পমহলের সামনে নতুন করে দরপত্রের কথা কেন বলেছিলেন? এর কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য রাজ্যের মন্ত্রী দেননি। শশী শুধু বলেন, “আমি যা বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর তরফেই বলছি।” রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করতে তিনি ওই বিবৃতি একাধিক বার বাংলা ও ইংরেজিতে পড়ে শোনান। আদানি গোষ্ঠী এখনও তাজপুর বন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত তো? এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী শশী পাঁজা স্পষ্ট করে বলেন, “হ্যাঁ। আমাদের আলোচনা চলছে।” রাজ্য প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, আগ্রহপত্র বা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পাওয়ার পরে আদানি গোষ্ঠীকে সম্মতিপত্র বা লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্স দিতে হবে। কেন্দ্রের সমস্ত ছাড়পত্র পাওয়ার পরে রাজ্য ও আদানি সংস্থার মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছিল, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের লাগাতার আদানি গোষ্ঠীকে আক্রমণের ফলেই আদানি গোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছে কী? এর আগে গত ১৪ নভেম্বর দিল্লিতে এসেই শশী পাঁজা বলছিলেন, রাজনীতির সঙ্গে উন্নয়নের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আদানি গোষ্ঠীকে নিশানা ও তা ঘিরে বিতর্ক এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে শিল্পপতিদের সম্পর্ক তথা বা রাজ্যে আদানিদের লগ্নি, এই বিষয়গুলো রাজ্য সরকার আলাদা ভাবে দেখছে বলেও জানিয়েছিলেন শশী। কিন্তু তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর তাজপুর নিয়ে মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক প্রশ্নও উঠে যায়। সেই সঙ্গে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে গৌতম আদানি, তাঁর ছেলে কর্ণ আদানি বা আদানি গোষ্ঠীর কেউ হাজিরও ছিলেন না এবার। তাতেও আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। আদানিদের অনুপস্থিতি নিয়ে শশী পাঁজা রবিবার বলেন, “আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কেন কেউ ছিলেন না, তা ওঁদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন।”
তবে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি খারিজ শশী পাঁজা যে খারিজ করলেন, রবিবার দিল্লিতে তিনি সেটা তাঁর বক্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্র ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শশী পাঁজর তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে মন্তব্যের পর।
❤ Support Us