- এই মুহূর্তে দে । শ
- জুন ১৪, ২০২৩
মনোনয়নের পঞ্চম দিনেও রণক্ষেত্র ভাঙড় ১, ক্যানিং ১। শাসক-বিরোধী বিবাদ ছাড়িয়ে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও নির্দেশই যে তাঁর দলের কর্মীরা মানছে না, সেই ছবিটাই মনোনয়নের পঞ্চম দিনেও স্পষ্ট। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলছেন, “শান্তিতে ভোট করতে হবে। গায়ের জোড় দেখানো চলবে না, তাহলে দল থেকে বহিস্কার করা হবে, তখন কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ চলছেই। আর এই সংঘর্ষের অভিযোগ উঠছে সর্বত্রই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ কোথাও বিরোধীরা করছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোথাও তৃণমূলই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পঞ্চম দিনেও যুদ্ধক্ষেত্রের রূপ নিল দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিং ১ নম্বর ব্লক ও ভাঙড় ১ নম্বর ব্লক। ক্যানিংয়ে মুড়িমুড়কির মতো বোমা পরে, গুলি চলে। ক্যানিংয়ে পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়, রক্তাক্ত এক পুলিশকর্মী। শেষে পুলিশ ব্যাপক হারে লাঠি চার্জ করে এলাকা ফাঁকা করে।গ্রামে ঢুকে দুষ্কৃতীদের ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযোগ, ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে বুধবার সকাল থেকে এই সংঘর্ষ হয় তৃণমূলের মূল সংগঠন বনাম যুব তৃণমূলের মধ্যে। তৃণমূলের এক নেতার অভিযোগ, “আমাদের মনোনয়ন দিতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু যুব তৃণমূলই মনোনয়ন জমা দিচ্ছে। আমরা যুব তৃণমূলকে মনোনয়ন জমা দিতে দেব না। আমরা রাস্তায় আছি,ওদের রুখবো।” অন্যদিকে ক্যানিং ১ ব্লকের যুব তৃণমূলের অভিযোগ, “যুব তৃণমূলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দিচ্ছে না মাদার তৃণমূল।” এর ফলে হাতে গোনা গুটিকতক মনেনয়ন জমা পড়েছে ক্যানিং ১ ব্লকে। ক্যানিংয়ের যুব তৃণমূল এখানকার বিধায়কের অনুগত বলেই পরিচিত। তবে লক্ষণীয়, ক্যানিংয়ের লড়াইটা তৃণমূল মাদার বনাম যুব তৃণমূলে।
ক্যানিংয়ে যখন মাদার তৃণমূল যুব তৃণমূলকে বাধা দিচ্ছে তখন ভাঙড় ১ ব্লকে তৃণমূল ঠিক একই মাত্রায়, একই কায়দায় হামলা চালাচ্ছে আইএসএফ-এর উপর। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছে আইএসএফ।
ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকে তৃণমূল বলছে, “আইএসএফ-কে মনোনয়ন জমা দিতে দেবো না। পিটিয়ে নওশাদ সিদ্দিকির চামড়া ছাড়িয়ে দেব।” নিজেদের তৃণমূল বলে পরিচয় দিয়ে, “নওশাদ সিদ্দিকির পিঠের চামড়া তুলে দেবো, অ্যাকশন হবে”, বলে যারা হুমকি দিচ্ছে তখন সেই তৃণমূল কর্মীদের হাতে উইকেট, রড,বাঁশ।
লক্ষণীয় ঘটনা হল ভাঙড় ১নম্বর ব্লকের যে বিডিও অফিসে মনোনয়ন দেওয়া হবে সেখানে এবং তার ১ কিলোমিটারের মধ্যে যে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, তার কোনও তোয়াক্কা করছে না তৃণমূলের এই কর্মীরা। মনোনয়ন কেন্দ্রের ভেতর থেকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, বিডিও অফিসের ১ কিলো মিটারের মধ্যে ৫ জনের বেশি থাকতে পারবে না। কিন্তু এই ভিড় সরানোর দায়িত্ব যে পুলিশ কর্মীর, তারা ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসের ভেতরে গাছের তলায় ছায়ায় তখন চুপ করে বসে আছে। সকাল থেকেই পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় আছে ভাঙড়ে।
ভাঙড় ১ ব্লকে সকাল থেকেই আইএসএফকে তৃণমূল পথে আটকাচ্ছে বলে আইএসএফ কর্মীদের অভিযোগ। আইএসএফ কর্মীরা অভিযোগ করছে, “পুলিশ আমাদের বোমা মারছে বাসন্তী হাইওয়েতে। এরা কেউ পুলিশ নয়, সব শওকত মোল্লার দলের লোকজন।”
তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, “আইএসএফ গতকাল রাত থেকে আমাদের কর্মীদের ওপর, পার্টি অফিসে লাঠি,বোমা, বন্দুক নিয়ে হামলা চালায়। মঙ্গলবার ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকে আমাদের আক্রমণ করেছে, আর মিডিয়া শুধু তৃণমূলকে দেখছে। আমরা দলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি, বলেছি কেউ যেন অশান্তি না করে। তবে কে অশান্তি করেছে আমি জানি না। তৃণমূল কর্মীদের হাতে লাঠি থাকলে পুলিশ পদক্ষেপ করবে।”
শওকত মোল্লা যখন এই বিবৃতি দিচ্ছেন তখনও বিডিও অফিস ঘিরে রেখেছে তৃণমূলের লাঠিধারী বাহিনী। তাদের মুখে একটাই কথা, “আইএসএফকে মনোনয়ন দিতে দেবো না। নওশাদ সিদ্দিকীর চামড়া ছাড়িয়ে নেবো।” সব দেখে শুনেও পুলিশ নীরব দর্শক।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করে রাখে তৃণমূল কর্মীরা। সকাল থেকেই আইএসএফ কর্মীদের মনোনয়ন দিতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয় তৃণমূল। অবশেষে বারুইপুরের এসপি, এডিজি এসে বেলা সোয়া একটা নাগাদ তৃণমূল কর্মীদের বাসন্তি হাইওয়ে থেকে সরিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে দেয়। তৃণমূল রাস্তা অবরোধ থেকে সরে গেলেও হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই একই জায়গায়। কেন হাতে লাঠি নিয়ে এতো জন দাঁড়িয়ে আছেন? উত্তরে তৃণমূল কর্মীরা জানায়, মঙ্গলবার ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকে আইএসএফ আমাদের নেতাদের গাড়ি ভেঙেছে , আজ আমরা ১ নম্বর ব্লকে আইএসএফকে মনোনয়ন জমা দিতে দেবো না। ভাঙড়ে এই হামলার নেতৃত্ব দেন তৃণমূল নেতা শাজাহান মোল্লা। তৃণমূল কর্মীরা অন্যকে আক্রমণের জন্য নয়, আত্মরক্ষার্থে হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বলে শাজাহান মোল্লা জানান। শাজাহানের চোখের সামনেই আক্রান্ত হয় সাংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা।
বীরভূমের আমোদপুর ও বাঁকুড়ার ইন্দাসে মনোনয়ন জমা দিতে আসা বিজেপি কর্মীদের মারধর করে, মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। ইন্দাসে গাড়ি থেকে উদ্ধার প্রচুর বোমা। অশান্তির মনেনয়নের পঞ্চম দিনেও পুলিশ অসূম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে নীরব রয়েছে।
❤ Support Us