Advertisement
  • এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
  • মে ১৭, ২০২৪

বিতর্ক সঙ্গী করেই টপ ট্রেন্ডিংএ কোক স্টুডিও বাংলার ‘মা লো মা’, গা ভাসাচ্ছেন বিদেশিরাও

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বিতর্ক সঙ্গী করেই টপ ট্রেন্ডিংএ কোক স্টুডিও বাংলার ‘মা লো মা’, গা ভাসাচ্ছেন বিদেশিরাও

‘কালীর নয়নজলে/ জলে বুক ভেসে যায়/ কী সাপে কামড়াইলো আমার/ দুর্লভ লকাইর গায়’
গানটি লেখা ঢাকার সাধক, কবি ও শিল্পী খালেক দেওয়ানের ।এই একই সুর এবং কথায় গাওয়া হয়েছে আরও একটি গান যার লেখক নেত্রকোনার বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন। ‘মা লো মা’ নামের সেই গানটি নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

দুটি গানের একজন স্রষ্টাও এখন জীবিত নেই। তবে তাঁদের পরিবারের মধ্যে বিরোধ লেগেছে  গানটির অধিকারের দাবিতে। রশিদ উদ্দিনের ২০ বছরের ছোট খালেক। তাদের উত্তরসূরীদের নানা দাবি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। একজনের লেখা গান, অন্য কারও নামে চালানোর চেষ্টা চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আবার রশিদ উদ্দিনের ছেলে কালা মিয়ার দাবি, গানটির মূল স্রষ্টা রশিদ উদ্দিন। আবার আরিফ দেওয়ানের দাবি, এই গানের মূল স্রষ্টা তাঁর দাদু খালেক দেওয়ান। এই নিয়ে নানা আলোচনা চলছে তাঁদের মধ্যে গত সপ্তাহেই কোক স্টুডিও বাংলার চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে ‘মালো মা’ নামক গানটি। অপরদিকে সেই বিতর্ক উস্কে দিয়ে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ এই গানের বর্ণনায়, ইউটিউবে, স্রষ্টা হিসেবে রশিদ উদ্দিনের নামও উল্লেখ করেছে। তারা লিখেছে , ‘মালো মা’ লিখেছেন খালেক দেওয়ান এবং এর আরেকটি  সংস্করণ ‘মাগো মা’ লিখেছে রশিদ উদ্দিন। যদিও তাঁর উত্তরসূরী এবং নেত্রকোনার বাসিন্দাদের দাবি, মূল গানটি খালেক দেওয়ানের লেখা নয়।

 

গানটি মূলত লেখা হয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যের আধারে। দেবী মনসা হলেন সাপের দেবী। তার পুজো হত তৎকালীন অন্তজ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে। তাঁর ইচ্ছা হয় তথাকথিত উচ্চ সম্প্রদায়ের হাতে পূজা পাওয়ার। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন মর্ত্যের সদাগর চাঁদের হাতে পূজা পাওয়ার। কিন্তু  স্বভাবে একরোখা চাঁদ ছিলেন শৈব। কিছুতেই করবেন না মনসার পূজা। মনসা তাঁকে নির্বংশ হওয়ার শাপ দিলেন। চাঁদ মাথা নত করলেন না । তখন প্রচণ্ড ক্ষোভে দেবী মনসা একে একে চাঁদের ছয় পুত্রকে কেড়ে নিলেন, তাঁর সপ্তডিঙ্গা বাণিজ্যতরী ডুবিয়ে তাঁকে সর্বস্বান্ত করলেন । তখনও তাঁকে কিছুতেই টলানো গেলনা। এদিকে তাঁর স্ত্রী সনখা জন্ম দিলেন আরেক পুত্র লখিন্দরকে। আখ্যান অনুযায়ী, লখিন্দর ছিলেন স্বর্গের শাপভ্রষ্ট নর্তক অনিরুদ্ধ। তাঁর জন্মান্তর ঘটল চাঁদ সদাগরের ঘরে। যথাসময়ে তাঁর বিবাহ হল বণিককন্যা বেহুলার সাথে। তিনিও শাপভ্রষ্ট নর্তকী ছিলেন বলে শোনা যায়। নাম ছিল ‘উষা।’  লখিন্দরের বিবাহ বাসর তৈরি হয়েছিল সম্পূর্ণ লোহা দিয়ে, যেন কোনোভাবেই তার মধ্যে সাপ প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু দেবীর অভিশাপে কালনাগিনী সেখানে প্রবেশ করে ও লখিন্দরকে মারণ ছোবল মারে। বেহুলা সেই মৃতদেহ নিয়ে তখন যে ঈশ্বরের সাথে যে অসম যুদ্ধ লড়েছিলেন, এবং শেষমেশ তাঁর মৃত স্বামীকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে এনে আবার স্বর্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, তার আখ্যান হল মনসামঙ্গল । এক সময় বহু লোকশিল্পী, বহু মঙ্গল কাব্য রচয়িতা এই আখ্যান নিয়ে রচনা করেছেন কাব্য, যাত্রাপালা, সঙ্গীত, নাটক প্রভৃতি। এদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ(‘কেতকা’ মনসার আরেক নাম), বিজয় গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, কানাহরি দত্ত প্রমুখ। এই আখ্যানের মূল উপজীব্য বিষয় হল বেহুলা লখিন্দরের করুণ কাহিনি। আধুনিক কালে নাট্যকার শম্ভু মিত্র রচনা করেছিলেন ‘চাঁদ বণিকের পালা।’

কোক স্টুডিও বাংলায় এই গানটি ঘিরে বিতর্ক থাকলেও সমাজমাধ্যমে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে এটি।। গানের মাধুর্যে গা ভাসাচ্ছেন বিদেশি শ্রোতারাও। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনের এক দুর্দান্ত মেলবন্ধন এই গানটি মুক্তির  ১২ দিনের মধ্যে ১৫০ লক্ষ ভিউ পেয়েছে ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!