Advertisement
  • দে । শ
  • মার্চ ১৩, ২০২৫

দিল্লির সঙ্গে ভাষাযুদ্ধ ! রাজ্য বাজেটে ‘রুপি’ বদলে রুবাই-এর ‘রু’ ব্যবহার স্টালিনের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দিল্লির সঙ্গে ভাষাযুদ্ধ ! রাজ্য বাজেটে ‘রুপি’ বদলে রুবাই-এর ‘রু’ ব্যবহার স্টালিনের

বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজ্য বাজেট উপস্থাপন করেছেন। তবে এবারের বাজেট অধিবেশনের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ভাষাগত বিরোধের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।  বাজেটের আর্থিক পরিসংখ্যানের উপস্থাপনায় ঐতিহ্যবাহী ‘রুপি’ প্রতীকের পরিবর্তে তামিল ভাষায় প্রচলিত ‘রুবাই’ শব্দের ‘রু’ অক্ষর ব্যবহার করে এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তকে তামিল ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি কেন্দ্রের ভাষানীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই তামিলনাড়ু সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের তিন ভাষানীতি ও জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে আসছে। রাজ্যের স্কুলে তামিলভাষায় পড়াশোনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত হয়েছে স্ট্যালিনের। এবার ডিএমকে-এর নতুন পদক্ষেপ সেই বিরোধিতাকে আরো জোরালো করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। একই সঙ্গে এই পদক্ষেপ রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

স্ট্যালিনের নেতৃত্বাধীন সরকার দক্ষিণ ভারতের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার প্রশ্নে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এবারের বাজেটে তামিল ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং তামিল জনগণের সাংস্কৃতিক পরিচয় সুরক্ষার জন্য এই প্রতীকী পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশেষত, বাজেটের লোগোতেও ‘রুপি-₹’ চিহ্নের পরিবর্তে তামিল অক্ষর ‘রু-ரு’   ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণত  জাতীয় মুদ্রা প্রতীকে ব্যবহৃত হিন্দি অক্ষর ‘র’ এর অনুপ্রেরণায় তৈরি। এর আগে, ২০২৩-২৪ সালের তামিলনাড়ুর বাজেটে আইআইটি-গুয়াহাটির একজন অধ্যাপক ডিজাইন করা লোগো ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে জাতীয় মুদ্রা প্রতীক হিসেবে ‘₹’ চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এবারই প্রথমবার, তামিলনাড়ুর সরকার জাতীয় মুদ্রা প্রতীককে প্রত্যাখ্যান করে একেবারে নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীক প্রবর্তন করল। এটি রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন, সাংস্কৃতিক মর্যাদা এবং ভাষার প্রতি আঞ্চলিক গর্বের প্রতিফলন। তামিলনাড়ুর জনগণের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই এটিকে রাজ্যের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক অধিকারের পক্ষে এক বড় জয় হিসেবে দেখছেন। বিশেষত, দক্ষিণ ভারতে বহুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে, এই পদক্ষেপ সে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তামিল ভাষাভাষী জনগণ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে, এটিকে তাঁরা তাঁদের  মাতৃভাষার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিন X-হ্যান্ডেলে এ নতুন লোগো শেয়ার করেছেন।

এই পদক্ষেপ কেন্দ্র সরকারে সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ককে কোনদিকে নিয়ে নিয়ে যাবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।  জাতীয় স্তরে একক ভাষা নীতির বিরুদ্ধে তামিলনাড়ু বরাবরই সরব থেকেছে। এবারের বাজেটে প্রতীকী পরিবর্তন সেই অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এর ফলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হতে পারে এবং অন্যান্য রাজ্যগুলোর জন্যও এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিজেপি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপির তামিলনাড়ু শাখার মুখপাত্র নারায়ণ থিরুপাথি বলেছেন, ‘এটি প্রমাণ করে ডিএমকে নিজেদের  ভারত থেকে পৃথক করে দেখে। আসলে, এটা তাঁদের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল।’ বিজেপির তামিলনাড়ু  রাজ্য সভাপতি কে. আন্নামালাই,  মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অবিবেচক’ বলে কটাক্ষ করেছেন।  সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন,  করেন, ‘ভারত সরকার ২০১০ সালের জুলাই মাসে যে মুদ্রা প্রতীক (₹) গ্রহণ করে, তা নকশা করেছিলেন এক প্রাক্তন ডিএমকে বিধায়কের পুত্র।’ তিনি কটাক্ষ করে আরো লেখেন, ‘আপনারা নিজেদের আর কতটা নির্বোধ প্রমাণ করবেন?’ বিজেপির আরেক শীর্ষ নেতা ও তেলেঙ্গানার প্রাক্তন রাজ্যপাল, তামিলিসাই সৌন্দরারাজন, এই পরিবর্তনের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘ এটি সংবিধানবিরোধী এবং জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে। সরকারের উচিত ভাষা পরিবর্তন না করে সাধারণ মানুষের মৌলিক সমস্যার দিকে মনোযোগ দেওয়া। যদি মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন  সত্যিই তামিল ভাষাকে এতটাই অগ্রাধিকার দেন, তাহলে তিনি আগে নিজের নাম তামিল ভাষায় পরিবর্তন করুন!’

এখনো পর্যন্ত তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রতীক পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। তবে ডিএমকে নেতা সরবনান আন্নাদুরাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘এতে কিছুই অবৈধ নয়… এটি কোনো কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা বিক্ষোভও নয়। আমরা তামিল ভাষাকে অগ্রাধিকার দিই, সরকার তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’  এই প্রতীক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন তামিলনাড়ু রাজ্য ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।  এবারের নির্বাচনে ডিএমকে ও এআইএডিএমকের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান।  বিজেপি এখনো তামিলনাড়ুতে নিজেদের মাটি শক্ত করতে পারে নি, এআইএডিএমকের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!