- এই মুহূর্তে বি। দে । শ
- ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫
আমেরিকার পথেই হাঁটল আর্জেন্টিনা — বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা ছাড়ার ঘোষণা প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলের

আমেরিকার পর এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে আর্জেন্টিনা। বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র এ ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ ডব্লিউএইচও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সমন্বয় করে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে লাতিন আমেরিকার অন্যতম দেশ আর্জেন্টিনা। বুধবার আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের মুখপাত্র ডব্লিউএইচও থেকে দেশটির বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে আর্জেন্টিনা। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুখপাত্র ম্যানুয়েল অ্যাডোরনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে গভীর বিভাজনের ওপর ভিত্তি করে — বিশেষ করে কোভিড -১৯ মহামারির সময়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকার কারণে প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই সংস্থাটি থেকে আর্জেন্টিনাকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আমাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেবে না আর্জেন্টিনা।
এই পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ ডব্লিউএইচও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সমন্বয় করে থাকে। এই ঘোষণাটি এমন সময়ে এসেছে, যখন কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একই পথে হেঁটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুটি দেশের বর্তমান কট্টর ডানপন্থী সরকারের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। উভয়েই কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, জাতিসংঘের একটি সংস্থা হিসেবে, ডব্লিউএইচও কোনো দেশকে তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ মানতে বাধ্য করতে পারে না। সংস্থাটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলিকে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও সুপারিশ দিয়ে সহায়তা করতে পারে কেবল।
আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি মিলেই, কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে ডব্লিউএইচও-এর পরামর্শের সমালোচনা করেনছেন । সামাজিক মাধ্যমের একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা এমন একটি জঘন্য সংস্থা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা ইতিহাসের বৃহত্তম ‘সামাজিক নিয়ন্ত্রণ’ কাজের অংশ ছিল। ‘ আর্জেন্টিনায় আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে ২০২৩ সালে হাভিয়ের মিলেই প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন। নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি ব্যয় কমানোর বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছেন তিনি। নিজেকে ‘অনার্কো-ক্যাপিটালিস্ট’ বা কট্টোর পুঁজিবাদী হিসেবে পরিচয় দেন। তার সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নিলেও, দারিদ্র্যের হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রশাসন গরবীদের জন্য খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরিষেবাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প কমিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে, গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার পরপরই জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই পদক্ষেপে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের মতে, এ হেন সীদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ স্থানীয় দেশ হিসেবে আমেরিকার সার্বিক অবস্থানকে দুর্বল এবং পরবর্তী মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করা আরো কঠিন করে তুলবে।
শপথ নেওয়ার দিনেই জারি করা নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের পিছনে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছিলেন, যার মধ্যে ডব্লিউএইচওর ‘কোভিড-১৯ মহামারির ভুল ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘জরুরিভাবে প্রয়োজন এমন সংস্কারে ব্যর্থতা’র কথা বলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বিশ্বজুড়ে কাজ করা এই জনস্বাস্থ্য সংস্থাটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘অন্যায়ভাবে বেশি অর্থ’ দাবি করে। এছাড়াও জনসংখ্যার নিরিখে চিন সর্বোচ্চ স্থানীয় হলে, তারা কম অর্থ প্রদান করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপটি অপ্রত্যাশিত নয় । প্রথম বার নির্বাচনে জেতবার পর থেকেই ডব্লিউএইচওর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ে তুঙ্গে ওঠে আক্রমণ করেছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছিলেন। এর জেরে ২০২০ সালের জুলাই মাসে বৈশ্বিক এই সংস্থাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার জন্য আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন ট্রাম্প। জো বাইডেন ক্ষমতা দখল করে ট্রাম্পের নির্দেশগুলি প্রত্যাহার করেন।
❤ Support Us