Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩

জি ২০-র মঞ্চ থেকে ঐতিহাসিক প্রকল্পের ঘোষণা।স্থায়ী সদস্য হিসেবে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি ঘোষণা করলেন মোদি

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
জি ২০-র মঞ্চ থেকে ঐতিহাসিক প্রকল্পের ঘোষণা।স্থায়ী সদস্য হিসেবে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি ঘোষণা করলেন মোদি

জি ২০ এর মঞ্চ থেকে এক ঐতিহাসিক প্রকল্পে সংযুক্ত হল ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউএই বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইউরোপ। রেল, বন্দর, বাণিজ্য বৃদ্ধি, শক্তি, ডিজিটাল সংযোগ সম্পর্কিত এই প্রকল্পে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার শপথ নিয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, ইউএই এবং ভারত। জানা গিয়েছে, জি২০ বৈঠকের ফাঁকে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে দেশগুলির মধ্যে। একথা জানিয়েছেন, মার্কিন প্রিন্সিপাল ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জন ফিনার।

শনিবার সংবাদিকদ বৈঠকে ফিনার জানিয়েছেন, পরিকাঠামোগত যে ঘাটতি থেকে গিয়েছিল, তা এই প্রকল্পের হাত ধরে পূর্ণতা পেতে পাওয়ার পথে চলে যাচ্ছে । তিনি বলছেন, এই প্রকল্প, উচ্চমান, স্বচ্ছ্বতা সম্পন্ন, এবং মজবুত হতে চলেছে। তাঁর মতে, এই প্রকল্প কোনও চাপিয়ে দেওয়া  প্রকল্প নয়। উল্টে এটি চাহিদার কথাকে মাথায় রেখেই করা হচ্ছে।

এদিকে, এই বড়সড় প্রকল্প খানিকটা হলেও, চিনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ”-এর সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি উল্টো বিষয়। যেখানে চিন তার ওই উদ্যোগে বিভিন্ন দেশকে ঋণের বোঝার মধ্যে ডুবিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ, সেখানে ভারত, ইউএই, আমেরিকা, ইউরোপের এই উদ্যোগ আপোস ও সমঝোতাকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

পশ্চিম এশিয়া নিয়ে জো বাইডেনের যে নীতি রয়েছে, তা কার্যত এই প্রকল্পের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, জি২০ এর সঙ্গী দেশগুলি ছাড়াও ভারতের তরফে আমন্ত্রিত হিসাবে দিল্লিতে পা রেখেছেন মহম্মদ বিন জায়েদ অল নাহেয়ান। তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেই জায়গা থেকে ইউএইর সঙ্গে এই বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে, সেই মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সখ্যতার মাত্রা বাড়িয়ে নিতে সচেষ্ট আমেরিকা। সেই জায়গা থেকে এই প্রকল্প আমেরিকার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প, I2U2 ফ্রেমওয়ার্ক (ভারত, ইজরায়েল, ইউএই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এর আওতায় নয়। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে ইজরায়েল ও সৌদির মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করার একটি সুপ্ত উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, তেল আভিভ ও রিয়াধের মধ্যে যখন আনুষ্ঠানিক কূটনীতি জোরদার রয়েছে, তখন এই প্রকল্পে ইজরায়েল সংযুক্ত হলেও হতে পারে।

আমেরিকা বলছে, ওই এলাকায় স্থিতিশীলতা ও সংযোগ বাড়িয়ে তুলে সংঘাত কমানোর উদ্যোগ রয়েছে। তবে চিনের বিআরআইকে এই প্রকল্প টক্কর দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে মুখ খুলে আমেরিকা শুধু বলছে, “এই প্রকল্পের একটি ইতিবাচক অ্যাজেন্ডা রয়েছে।”

এদিকে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হওয়ার বিষয়ে ভারত বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই অতিমাত্রায় সরব। এই আবহে ভারতের সভাপতিত্বে শনিবার  জি২০-র স্থায়ী সদস্য হল আফ্রিকান ইউনিয়ন। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই নিয়ে ঘোষণা করেন। সর্বসম্মতিক্রমেই আফ্রিকান ইউনিয়নকে আজ জি২০ গোষ্ঠীতে যুক্ত করা হল। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি ২০-র স্থায়ী সদস্য করা জি ২০ ভুক্ত দেশগুলির জন্য একটি মাইলফলক।

উল্লেখ্য, এর আগে গ্লোবাল সাউথ দেশগুলিকে একত্রিত করতে গত জানুয়ারি মাসে একটি দু’দিনের সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারত। এই আবহে জি২০ সম্মেলনের কয়েকদিন আগেই বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি বলেছিলেন, “গ্লোবাল সাউথ-এর যে দেশগুলির কথা কেউ তুলে ধরে না, সেই দেশগুলির কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে ভারত।” প্রসঙ্গত, গ্লোবাল সাউথ বলতে আফ্রিকা, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও ওশিয়ানিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বোঝানো হয়ে থাকে। তার মধ্যে আফ্রিকান ইউনিয়ন জি২০ গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিশ্ব সমীকরণে পরিবর্তন আসতে চলেছে।

প্রসঙ্গত, জি২০ গোষ্ঠীর অন্তর্গত দেশগুলি বিশ্বের মোট ডিজিপির ৮৫ শতাংশের অংশীদার। তাছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এই দেশগুলির নিয়ন্ত্রণেই আছে। তাই এই গোষ্ঠীর দেশগুলির নীতি সারা বিশ্বকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। তবে ভারত বরাবর বলে আসছে, জি২০ গোষ্ঠীর বাইরে শতাধিক দেশের কথা কেউ বলছে না। সেই দেশগুলির কণ্ঠস্বর হতে চাইছে ভারত। এই আবহে আফ্রিকান ইউনিয়ন আজ জি২০-র স্থায়ী সদস্য হওয়ায় গ্লোবাল সাউথে ভারতের মর্যাদা আরও বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই।

প্রধানমন্ত্রী জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরুর সময় শনিবার নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘\”আমাদের ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’ মন্ত্র অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে। এই মন্ত্রই আমাদের পথ প্রদর্শক হবে, আমাদের মশালবাহক হবে। উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে বিভাজন হোক, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব হোক, খাদ্য ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, সন্ত্রাসবাদ, সাইবার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি বা পানীয় জল সরবরাহ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের এই সব কঠিন সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে হবে।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “কোভিড মহামারীর পরে বিশ্বে আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এটা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। দুর্ভাগ্যবশত, সাম্প্রতিককালে যুদ্ধ এই সমস্যাকে আরও গভীর করেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যদি কোভিডের মতো মহামারিকে পরাজিত করতে পারি, তবে আমরা এই আস্থার ঘাটতি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জকেও জয় করতে পারি। আজ, জি২০-এর সভাপতি হিসেবে ভারত এই আস্থার ঘাটতিকে ভরসা ও আত্মবিশ্বাসে রূপান্তর করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে সমগ্র বিশ্বের প্রতি। আমাদের সকলের একসাথে চলা উচিত।”

এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চিনের সঙ্গে নেহাতই আর্থিক সম্পর্ক আছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আত্মিক যোগ আছে বাংলাদেশের। দু’দেশের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক আছে। জি২০ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এমনই আশ্বাস দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দিল্লিতে জি২০ সম্মেলন শুরু আজ শনিবার থেকে, চলবে আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত। এই  সম্মেলনে যে ন’টি দেশকে ‘অতিথি’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত, সেই তালিকায় আছে বাংলাদেশ। আর জি২০ সম্মেলনের আগেরদিন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন হাসিনা। ঘণ্টাখানেকের সেই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ায় সুখ-শান্তি বজায় রাখা; সুরক্ষা, বাণিজ্য, শক্তির মতো ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর মতো একাধিক আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে কিছু জানানো হয়নি। তবে বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ঢাকা আশ্বস্ত করেছে যে চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক আছে, তা মূলত আর্থিক বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে একেবারে আত্মিক সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশের রক্তের বন্ধু হল ভারত।

চিনের বিষয়ে কোনও সরাসরি মন্তব্য করেননি বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনও। মোদি-হাসিনা বৈঠকের পর তিনি জানান, আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে দু’দেশের অবস্থান একই। তাঁর কথায়, “দুই দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিষয়ে আমাদের এবং ভারতের অবস্থান সম্পূর্ণ এক।”

সেইসঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী বলেন, “পিছন ফিরে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাকিয়ে দেখুন। যখন সন্ত্রাসবাদ, জেহাদি ও খারাপ  নীতির দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল বাংলাদেশ। ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩টিতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন এক বিদেশি রাষ্ট্রদূত। শেখ হাসিনার মিছিলে গ্রেনেড হামলা চলেছিল। আমরা সেইসব দিন আর ফিরে পেতে চাই না। আমরা উন্নত বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।”

আজ সকাল সাড়ে নটা থেকে ভারত মণ্ডপমে বিদেশি রাষ্ট্রনেতারা আসতে শুরু করেন। সকাল সাড় ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা ভারত মণ্ডপমে বিভিন্ন দেশের নেতা এবং প্রতিনিধি দলের প্রধানরা এসে পৌঁছন। তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপরে ‘ট্রি অফ লাইফ’ ফোয়ারার সামনে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে একটি ছবি তোলান সবাই। এরপর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানরা ভারত মণ্ডপমের লেভেল ২-এ লিডারস লাউঞ্জে একত্রিত হন।

দুপুর দেড়টায় লাঞ্চের পর থেকে সাড়ে ৩টে পর্যন্ত ভারত মণ্ডপমেই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এরপর দুপুর সাড়ে তিনটের সময় জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশন শুরু। এই সেশনের নাম হবে “ওয়ান ফ্যামিলি” বা “এক পরিবার”। এই সেশনের পর আজকের মতো বৈঠক শেষ হয়ে যাবে। এরপর রাষ্ট্রনেতারা নিজেদের হোটেলে চলে যাবেন। এরপর আজ সন্ধ্যায় ভারত মণ্ডপমেই অনুষ্ঠিত হবে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রনেতাদের জন্য নৈশভোজ। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে রাষ্ট্রনেতা এবং আমন্ত্রিতরা এই নৈশভোজে অংশ নিতে সম্মেলন স্থলে পৌঁছবেন। এর পর রবিবার দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ দিনের জি ২০ সম্মেলন শুরু হবে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!