- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- নভেম্বর ১, ২০২৩
গাজায় সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে নির্বিচারে ইসরায়েলি বোমার হামলা, নিহত বহু সাধারণ মানুষ, এর মধ্যে শিশুও রয়েছে
গাজার বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে মঙ্গলবার একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে, এতে বহু মানুষ নিহত হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে বিমান হানার মাধ্যমে যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তাতে ৭ অক্টোবরের হামলার সাথে জড়িত হামাস কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
গাজায় আজ নয়জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে, এর ফলে গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে এদিন পর্যন্ত নিহত ইসরায়েলি সৈন্যের মোট সংখ্যা ৩২৬ -এ দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলি সেনা সূত্রে এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে এ ছাড়াও অন্য দুই ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছে।
আজ গাজা উপত্যকায় ইন্টারনেট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্যালেস্টাইন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (প্যাল্টেল) এক্স-কে জানিয়েছে, “প্রিয় দেশের ভালো মানুষদের কাছে, আমরা দুঃখের সাথে ঘোষণা করছি যে গাজায় যোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” উইং গাজাকে ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য “কবরস্থানে” পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে হামাসের সশস্ত্র সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড-এর মুখপাত্র আবু ওবাইদা গাজাকে ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য একটি “কবরস্থানে” পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। হামাসের সশস্ত্র সামরিক শাখার মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, যে তাঁরা আগামী দিনে তাঁদের হাতে বন্দী থাকা কিছু বিদেশীকে মুক্তি দেবে, কারণ তাঁরা গাজাকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি কবরস্থানে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গাজায় এই মুহুর্তে প্রায় ২৪০ জনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে মনে করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েল জুড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েলের তরফে একটি ভয়ঙ্কর বোমা হামলার দিয়ে প্রত্যাঘাত শুরু হয়েছিল, যা এখন ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে নিয়ে গিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, পরিণতিতে এখন গাজা ভূখণ্ডে স্থল আক্রমণ মধ্যদিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনা বাহিনী৷
এদিকে একটি আবাসিক এলাকাকে অমানবিক লক্ষ্যবস্তু করে ইসরায়েলি বোমা বর্ষণের ঘটনাকে তীব্র নিন্দা করে মিশর বলেছে যে এই বোমার হামলা আহত ফিলিস্তিনিদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ভর্তির জন্য রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেবে। সংঘাত শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কায়রো আক্রান্ত অসামরিক নাগরিকদের জন্য ক্রসিং খুলে দিতে সম্মত হয়েছে।
গাজায় সহিংসতা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিকস্তরে আহ্বানের যখন জানানো হয়েছে, সেই ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের মধ্যে ইসরায়েল এই বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ৩ হাজার ৫৪২ জন শিশু এবং ২ হাজার ১৮৭ জন মহিলা সহ ৮ হাজার ৫২৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।
এদিকে ক্রমবর্ধমান ইসরায়েলি হামলায় গাজায় যখন মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, তা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দৃঢ়ভাবে যুদ্ধবিরতির সমস্ত রকম প্রস্তাব ও প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির এই ধরনের আবেদন “ইসরায়েলকে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণের, সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পনের, বর্বরতার কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বানের সমান, তা যুদ্ধবিরতির কোনও প্রশ্নই নেই।”
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার আবারও ইসরাইল সফর করবেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, “সচিব ব্লিঙ্কেন শুক্রবার ইসরায়েলি সরকারের সদস্যদের সাথে বৈঠকের জন্য ইসরায়েলে যাবেন।”
মঙ্গলবার জাতিসংঘ বলেছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা হাজার হাজার শিশুর ‘কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘর দাবি, , গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা কয়েক ডজন, তারপরে শত শত এবং শেষ পর্যন্ত হাজারে পরিণত হওয়ার বিষয়ে আমাদের গুরুতর আশঙ্কা হচ্ছে। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
পশ্চিম তীরে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলের দখলে থাকা ফিলিস্তিনি অঞ্চল, ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে কমপক্ষে ১২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার হামাস নেতা সালেহ আল-আরুরির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েল বলেছে যে তাদের বাহিনী রামাল্লার নিকটবর্তী একটি গ্রামে অরুরায় প্রবেশ করে এবং ধ্বংসের সময় তাদের দিকে পাথর নিক্ষেপ”কারী লোকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চলমান সঙ্কট বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলিভিয়া মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে তারা ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে। বলিভিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রেডি মামানি বলেছেন, বলিভিয়ার সরকার “গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ সামরিক হামলার প্রত্যাখ্যান ও নিন্দায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে হামাস স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গাজায় নিরলসভাবে ইসরায়েল যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে, এর ফলে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি শিশু সহ এখনও পর্যন্ত ৮হাজার ৫২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রক পরে জানিয়েছে যে মঙ্গলবার উত্তর গাজা উপত্যকায় একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে 50 জন নিহত হয়েছে।
❤ Support Us