Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • অক্টোবর ২০, ২০২৩

বেপরোয়া ইসরায়েলি হামলা এবার গাজার গ্রিক গির্জায়

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বেপরোয়া ইসরায়েলি হামলা এবার গাজার গ্রিক গির্জায়

গাজা উপত্যকায় একটি গ্রীক অর্থোডক্স গির্জায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এছাড়া আরও বহু মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি হামলার শিকার এই গির্জাটি গাজার সবচেয়ে পুরোনো এবং কয়েক শতাব্দী আগে নির্মিত হয়েছিল। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে ফিলিস্তিনি চার্চ কমিটি বলেছে, ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

এদিকে এই ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গাজা সীমান্তে জড়ো হওয়া ইসরায়েলি সৈন্যদের আসন্ন স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “এবার গাজাকে ভেতর থেৃকে দেখবেন।” এই বার্তায় গাজায় স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি যে ইসরায়েল নিয়ে ফেলেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।

পরিস্থিতি বলছে, কোনও ভাবেই ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ থামাবার কোনও রাস্তায় হাটছে না। তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামাসকে রাশিয়ার সাথে তুলনা করে বলেছেন, হামাসের হাতে আটক মার্কিন বন্দীদের দেশে ফিরিয়ে আনা একটি “অগ্রাধিকার”। জো বাইডেনের এই উক্তির পর মুসলিম বিশ্ব যে ফিলিস্তিনের পাশে যে আরও বেশি ভাবে দাঁড়াবে তাতে কোনও সংশয় থাকছে না। কাজেই যুদ্ধ আরও ব্যাপকতা পাওয়ার দিকে এগোচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ জো বাইডেন রাশিয়াকে হামাসের সঙ্গে তুলনা করে রাশিয়ার দিকেও একটি প্ররোচনার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। পাশাপাশি ইসরায়েলের পাশে আরও দৃঢ়ভাবে থাকার স্পষ্ট বার্তায় বাইডেন দিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস বলেছেন যে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলি গাজায় “যেতে প্রস্তুত” কারণ কয়েক ডজন মার্কিন সিনেটর মার্কিন-মিশর চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি যা হয়ে রয়েছে তাতে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ওই ট্রাকগুলির আর ফিলিস্তিনি আর্তদের কাছে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হয় কি না সেটাই প্রশ্ন। কারণ, যে করিডোর দিয়ে সম্ভাব্য ত্রাণসামগ্রী ট্রাকে করে আসার কথা সেই রাফাতেই বৃহস্পতিবার সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনা। ওদিকে মুখে বেঞ্জামিনের সরকার বলছে ফিলিস্তিনিরা যাতে  আন্তর্জাতিক সাহায্য পেতে পারে তার জন্য ইসরায়েল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির থেকে সাহায্যকারী ট্রাক আসার জন্য করিডোর তৈরি করে ত্রাণসামগ্রী আসার অনুমতি দিয়েছে।

ইসরায়েল মুখে বলছে হামাসের বিরুদ্ধে তাদের এই যুদ্ধ। অথচ হামাসের প্রভাবহীন ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।  অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ঢুকে ইসরায়েল ৭জনকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে দু’জনের বয়স ১৫, দু’জনের ১৭। একজনের মাথায় সরাসরি গুলি করা হয়েছে। গত ১২ দিনে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ৮০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনা। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইসরায়েলের এই হত্যালীলা চালানো নতুন কিছু নয়। গত দু’বছরে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে প্রতিদিন গড়ে ১ জন করে প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন ইসরায়েলিদের আক্রমণে। গত ১২ দিনে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার তুলকারেমে নুর শামস শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলী সেনারা হানা দেয়, ওখানেই সাতজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বুধবার রাতেই ১২০ জনকে গ্রেপ্তার করে ইজরায়েলী সেনারা, এই সংখ্যা গত ১২ দিনে ৮৫০-এ দাঁড়িয়েছে।

মুখে “মানবিক সাহায্য” ঢুকতে দেবার কথা ঘোষণা করলেও  সম্ভাব্য সেই সাহায্য আসার পথ রাফাতেই বৃহস্পতিবার সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনা। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা থেকে বিমান হানা আরও  কম সময়ের ব্যবধানে চলছে। একটির পর একটি আবাসিক এলাকা এবং আশ্রয় শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সাহায্য নিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে রাফা সীমান্তের মিশর ভূখন্ডে। কিন্তু ইসরায়েলের অনুমতি ছাড়া সেই সহায়তা ঢুকতে পারছে না। অনুমতি কবে মিলবে, সেটাও জানা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফ থেকে বারংবার বিবৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে গাজার মানবিক সঙ্কট সবরকমের সীমা অতিক্রম করে গেছে। তবে মুখে এই কথা বললেও এযাবৎ  কোনও পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে দেখা যায়নি। অথচ গাজায় পাঁচটি পরিষেবা প্রদানকারী হাসপাতাল ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে ন্যূনতম চিকিৎসা করার পরিস্থিতিও এখন আর নেই। এছাড়াও প্রায় ৬০টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইজরায়েল বোমাবর্ষণ করেছে। আল-আহিল হাসপাতালে বোমাবর্ষণের ঘটনায় প্রায় ৫০০জন নিহত হয়েছেন।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের আরও হিসেব, এযাবৎ ইসরায়েলী হামলায় গাজায় ৯৮ হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা হামাসকে লক্ষ্য করেই আক্রমণ করছে। তবে বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যাই প্রমাণ করছে ইসরায়েলের দাবি সম্পূর্ণই অসত্য, ভিত্তিহীন। সারা বিশ্বের কেউ এটা মেনে নেবেন যে ৯৮ হাজার বাড়িতে হামাসের সদস্যরা থাকতেন, এই কথা বিশ্বের কোনো মহলেই বিশ্বাস করাতে পারছে না তেল আভিভ। গাজার  ২৫ শতাংশ বাড়িই ইসরায়েলী হানায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। জল সরবরাহ ও নিকাশি ব্যবস্থাকেও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্বের নানা দেশে একটানা বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেস ভবনের মধ্যেই প্রায় ৩৫০ জন ইহুদি ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ  দেখিয়েছেন। তাঁরা ইসরায়েলী হামলা বন্ধের পাশাপাশি দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে অবিলম্বে প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। মার্কিন কংগ্রেস ভবনের বাইরেও  কয়েক শত মানুষ এই একই দাবিতে স্লোগান দেন। মার্কিন বিদেশ দপ্তরের শীর্ষস্থানীয় কর্তা জশ পল ইসরায়েলকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়েছেন। সোস্যাল মিডিয়ায় তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের আগ্রাসনকে মদত দিয়ে আমেরিকা ভুল পদক্ষেপ করছে। নীতি পরিবর্তনের চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি।

গির্জায় হামলা প্রসঙ্গে আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি হামলার শিকার গাজার সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জাটি দুই সপ্তাহ আগে এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই  খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ফিলিস্তিনিদের কাছে আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল।

এছাড়া হামলার শিকার গির্জার ভবনটির দীর্ঘ একটি ইতিহাস রয়েছে। গ্রীক অর্থোডক্স গির্জাটি ১১৫০ সাল থেকে ১১৬০ সালের মধ্যে ক্রুসেডারদের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল এবং গাজার পঞ্চম শতাব্দীর বিশপের নামে নামকরণ করা হয়েছিল।

অন্যদিকে গির্জা কম্পাউন্ডে হামলার কয়েকদিন আগে গ্রীক অর্থোডক্স গির্জার পুরোহিত ফাদার ইলিয়াস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ইসরায়েল হয়তো এই গির্জাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। সেসময় তিনি বলেছিলেন, “গির্জার ওপর কোনও হামলা হলে তা শুধু ধর্মের ওপরই আক্রমণ হবে তা নয়, মানবতার ওপরও আক্রমণ হবে। যা একটি জঘন্য কাজ”, শেষ পর্যন্ত তাই হল।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!