- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- অক্টোবর ৯, ২০২৩
ইসরেইয়েলের পাশে যথারীতি আমেরিকা। ফিলিস্তিনিদের সবরকমের সাহায্য করছে দুঃসাহসীক ইরান। আশংকা, শীতের আগে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। পাল্টা আঘাতের প্রস্তুতি, মার্কিন নোসেনা, বায়ু সেনা ঠেসে ধরবে ফিলিস্তিনকে

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর দ্বিতীয় বৃহত্তর যুদ্ধ পরিস্তিতি সৃষ্টি করেছে। আমেরিকা যেহেতু পশ্চিম এশিয়া থেকে এখন বহুলাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তাই আমেরিকা তাদের পুরনো অবস্থান থেকে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। অন্যদিকে ইরান ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সৃষ্টির পর এটাই সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ইসরেইয়েলের ওপর একটি বৃহত্তর আক্রমণ।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সন্ত্রাসীদের হামলার ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানকার ২০ লাখ বাসিন্দা শনিবার খোলা আকাশের নিচে উদ্বাস্তু অবস্থায় রাত কাটিয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, গাজায় সন্ত্রাসীদের হামলার জের দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
শনিবার এক ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইসরায়েলের নাগরিকরা, আমরা যুদ্ধে আছি। কোনও অপারেশনে নয়, রাউন্ডে নয়, যুদ্ধে।” বিশ্ব গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়েই প্রকারান্তরে ফিলিস্তিনি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন নেতানিয়াহু।
সন্ত্রাসীদের দাবি, তারা গাজা থেকে ইসরায়েলে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই হাজার ২০০ রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সন্ত্রাসীদের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা দেশগুলো। এরই মধ্যে সন্ত্রাসীদের হামলা ও ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের নিরীহ ও নিরপরাধ কেউ যেন ইসরায়েলের হামলার শিকার না হয়।
এদিকে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগ সন্ত্রাসীদের এই হামলাকে তাদের দেশের জন্য “কঠিন পরিস্থিতি” বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সব মিলিয়ে যুদ্ধের রণহুঙ্কারের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ যুদ্ধ নতুন কথা নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের তিনবার যুদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৪৮ সালে একবার, ১৯৬৫ সালের ছয়দিনের যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ১৯৭৩ সালে সিনাই উপত্যকা ও গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করে সিরিয়া-মিশর জোট।
এরপর থেকে ইসরায়েলের হামলার জবাব দিয়ে আসছিল ফিলিস্তিনের সশস্ত্র যোদ্ধারা। কিন্তু ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের ৫০ বছরে সন্ত্রাসীদের হামলা নতুন করে হিসাবনিকাশে বাধ্য করছে ইসরায়েল ও তার পশ্চিমি মিত্রদের। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। বাইডেন সেই ফোনালাপে সন্ত্রাসীদের হামলার নিন্দা করেছেন। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই হামলার নিন্দা করেছে।
ইসরায়েলে এ হামলায় সর্বশেষ ২৯৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের এই স্বাধীনতাকামী সংগঠন। এর মধ্যে ফিলিস্তিনি রয়েছেন ১৯৮ জন ও ইসরায়েলি রয়েছেন ১০০ জন। সন্ত্রাসীরা ইসরায়েলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে বললে খুব একটা অতুক্তি হয় না। একটি বিশেষভাবে নজর দেওয়া দরকার সেটা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের এই হামলা ৫০ বছরের আগের একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট অভিযান চালায় ইসরাইলে। সেই সংঘাত ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, অক্টোবর যুদ্ধ, রমজান যুদ্ধ, ইয়ম কিপ্পুর যুদ্ধ প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ৬-২৫ অক্টোবরের মধ্যে সংঘটিত আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে উভয়পক্ষের সম্পর্ক কতটা তিক্ত হয়ে ওঠে, পেছনে ফিরে তাকালেই তার বহু প্রমাণ মিলবে। এই অর্থে বলতে হয়, অর্ধশতাব্দী পর আবারও ইসরাইলের ভূখণ্ডে ‘নতুন অভিযান’ চালানোর মধ্য দিয়ে বিশ্ব নতুন করে কী দেখবে, সেটাই চিন্তার বিষয়!
অর্ধশতাব্দী পর সন্ত্রাসীদের এই হামলা ইসরায়েলিদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা বহন করে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রতিরোধ করার জন্য আকস্মিক এই হামলা করা হলো। অপরদিকে সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এই যুদ্ধে যদি কারও একটি বন্দুকও থাকে, তবে তাই নিয়ে ইসরায়েলি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।”
আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্ত্রাসীদের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি বলেন, “দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতার জবাবে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায়, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এবং আমাদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেবে। এগুলোই এই অভিযানের কারণ।”
এছাড়া এ হামলার মধ্য দিয়ে আরব বিশ্বকেও বার্তা দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে যেসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে, তাদের প্রতি বিশেষ বার্তা এই আক্রমণ। টেলিগ্রামে এক পোস্টে পশ্চিম তীরের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে এই যুদ্ধে আরব ও মুসলিম বিশ্বকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
গাজায় হামাস সরকারের সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজি হামাদ বলেন, ‘যেসব আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে, এই অভিযান তাদের জন্যও একধরনের বার্তা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা তাদের জন্য লজ্জার। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে আরব দেশগুলোর প্রতি আমি আহ্বান জানাই। কারণ ইসরায়েল শান্তি ও সহাবস্থানে বিশ্বাস করে, এমন কোনো দেশ নয়। এটা শত্রু রাষ্ট্র; তাদের প্রতিহত করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার সকালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হঠাৎ করেই হামলা করে বসে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এ হামলার নিন্দা জানিয়ে চলেছেন।
❤ Support Us