Advertisement
  • দে । শ
  • মে ৮, ২০২৩

দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, দল যাকে প্রার্থী করবে তাকেই জিতিয়ে আনতে হবে: অভিষেক

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, দল যাকে প্রার্থী করবে তাকেই জিতিয়ে আনতে হবে: অভিষেক

পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার বহরমপুরে অধিবেশন মঞ্চ থেকে কড়া বার্তা দিলেন দলকে। তিনি বললেন, “কেউ দলের ঊর্ধ্বে নয়। ৯০ শতাংশ দলের কর্মী যাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে, তাকেই কাঁধে করে পঞ্চায়েতের প্রার্থী হিসেবে ভোট জিতিয়ে আনতে হবে। ৯০ শতাংশের -এর মত দলে গুরুত্ব পাবে। আর যে ১০ শতাংশ কর্মী দলের এই অবস্থান না মেনে নির্বাচনের সময় নিষ্ক্রিয় থাকবেন তারপর আবার নির্বাচনের পর দলে ফেরার চেষ্টা করবেন, সেটা হবে না। মনে রাখবেন দলের উর্ধে কেউ নয়।”

প্রসঙ্গত ২৫ এপ্রিল তৃণমূলে নবজোয়ার শুরুর পর থেকে প্রার্থী নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে মারামারি চলছেই । ৭ মে বহরমপুরে গোপন ব্যালটে ভোটার সময় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আর স্থানীয় বিধায়কের গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স নিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। উভয় পক্ষ অভিযোগ করে তাদের ভোটারদের নাম তালিকায় নেই, বহু তৃণমূল কর্মীর নাম নেই তালিকায়। ২৫ এপ্রিল অভিষেকের তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচির পর থেকে প্রায় রোজই পালা করে কোনও না কোনও জায়গায় অভিষেকে সামনে বা অভিষেক চলে যাওয়ার পর এই বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। ৭ মে, রবিবারও তার পুনরাবৃত্তি হলো।

এর পরেই বহরমপুর থেকেই ৭ মে রাতে অভিষেক দলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে তাঁর কঠোর অবস্থান দলের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর কাছে স্পষ্ট করে দেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বহরমপুরের অধিবেশন মঞ্চ থেকে বলেন, “১২ মাস লড়াই করে দলটাকে যারা রক্ষা করে তাদের আজ সভায় ডেকেছি। বুথ সভাপতিদের আক্ষেপ তাদের ভোটের পর কেউ ডাকে না। আমি জানি সারা রাজ্য জুড়ে এই আক্ষেপ বুথ সভাপতিদের আছে, ভোটের পর তাদের কেউ ডাকে না। আমি বুথ অঞ্চল নেতৃত্বের কাছে পঞ্চায়েত স্তরের সবাইকে কথা বলতে বলি।” এর পর অভিষেক উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন,  “ভোট দিয়েছ?” তখন চেচামেচি তুঙ্গে ওঠে। অভিষেক মাইক হাতে বলেন, “চেচাবে না, যা জানতে চাইছি সেই উত্তর দাও।” আবার অভিষেক প্রশ্ন করেন, “ভোট দিয়েছেন? কেউ তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছে?” উত্তর আসে না। অভিষেক তখন বলেন, “যারা ভোট দিতে পারোনি তারা একটা কাগজে তাদের নাম লিখে মুখ বন্ধ খামে আমায় দাও। আমি জানি যারা প্রাণ দিয়ে দলকে রক্ষা করে তারাই দলের আসল সম্পদ।”

এরপর অভিষেক বলেন, “প্রার্থী যেই হোক ব্যালটের মাধ্যমে জানতে পারছি মানুষ কি চাইছেন। যারা ভোট দিতে পারছেন না কোনও কারণে, তাদের জন্য একটা নাম্বার আমি দিয়েছি, সেখানে ফোন করুন। কেউ ব্যালটে, কেউ সভায় ভোটের মাধ্যমে, কেউ ফোনে প্রার্থীর নাম জানাচ্ছে বা নির্বাচন করছে। ধরুন ৫০০ জন এমন ভোটারের মধ্যে ৩০০ জনের সমর্থন এই তিন ভাবে কেউ পেলেন, তিনিই গণতান্ত্রিক ভাবে দলের প্রার্থী, কারণ বেশি সংখ্যক  মানুষ তাকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। এই প্রার্থী যেই হোন, তাঁকে পছন্দ হোক বা না হোক, তাকেই  প্রার্থী হিসেবে মানতেই হবে। আর এই প্রার্থীকেই নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।”

অভিষেকের এই দলের প্রার্থীকে মানতেই হবে বক্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতির বিরোধী পক্ষরা বলছেন, তাহলে আর সরকারি টাকা খরচ করে রাজ্যে জুড়ে এসবের কি দরকার ছিল? আর নবজোয়ারের ১৩ তম দিনেও বহরমপুরে অভিষেকের অধিবেশনে এই মারামারির পর বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল দলটার কোনও শৃঙ্খলা নেই সেটা বারবার প্রমাণিত। একটা দলীয় নির্বাচন সামলাতে অভিষেকের পুলিশ লাগছে, পুলিশও শেষ পর্যন্ত বিবদমান দুই গোষ্ঠীকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই পুলিশ কি করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যালট লুট রুখবে? কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে না আজ আবার বহরমপুরের এই তৃণমূলের ভেতরকার অশান্তি সেটা স্পষ্ট করে দিল।”

প্রসঙ্গত আব্দুল করিম চৌধুরীও এর আগে বলেছেন, “যে পদ্ধতিতে পঞ্চায়েতের প্রার্থী নির্বাচন হচ্ছে তাহলে আর দলের এতো পদাধিকারী থাকার কি দরকার ছিল? এতদিন দল যাকে প্রার্থী মনে করতো সেই প্রার্থী হতো, এখন অভিষেক যে ভাবে প্রার্থী নির্বাচন করছেন তাতে প্রমাণ হচ্ছে আগের প্রার্থী নির্বাচন পদ্ধতি ভুল ছিল।”

শেষ পর্যন্ত বহরমপুরের অধিবেশন মঞ্চ থেকে অভিষেক রবিবার যা বললেন তাতে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেল, দল যাকে প্রার্থী করবে তাকেই মানতে হবে দলের কর্মীদের। তাহলে আব্দুল করিম চৌধুরীর কথায় কি আবার আগের পথেই প্রার্থী নির্বাচনে অভিষেক ফিরে এলেন? তাহলে এই নবজোয়ার যাত্রা করে কি লাভ হচ্ছে? সেই প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরেও যেমন ঘুরপাক খাচ্ছে তেমন রাজ্য রাজনীতির প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে এই বিষয়টি।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!