Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • জুন ২২, ২০২৩

পঞ্চায়েত নির্বাচনের বাম ইস্তেহার প্রকাশ।শাসকের দুর্নীতির পাশাপাশি কেন্দ্রের এজেন্সি রাজনীতির সমালোচনা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
পঞ্চায়েত নির্বাচনের বাম ইস্তেহার প্রকাশ।শাসকের দুর্নীতির পাশাপাশি কেন্দ্রের এজেন্সি রাজনীতির সমালোচনা

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে। ইস্তেহারে রাজ্যের শাসক দলের পাশাপাশি বিজেপির এজেন্সি রাজনীতি ও একনায়কতন্ত্রের সমালোচনা করে এই শক্তির হাত থেকে মানুষের পরিত্রাণ পাওয়ার স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে যাতে বিজেপির অগ্রগতি না হয় বামফ্রন্টের ইস্তেহারে সেই বার্তা মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ইস্তেহারে বামফ্রন্ট যা লিখেছে তার অর্থ, তৃণমূলের চাইতে বিজেপিকেই তারা বেশি মানুষের শত্রু বলে মনে করে।

ইস্তেহারের শুরুতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে লেখা হয়েছে, আগামী ৮ই জুলাই ২০২৩ (২২শে আষাঢ়, ১৪৩০), শনিবার আমাদের রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার গড়ে ওঠার দিনেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী  জ্যোতি বসু ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে পঞ্চায়েত ও পুরসভা জনগণের ভোটে নির্বাচিত করা হবে। এই ঘোষণা অনুসারে ১৯৭৮ সালে ভারতের মধ্যে প্রথম পশ্চিমবাংলায় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ স্থানীয় নির্বাচিত সংস্থা হিসাবে গড়ে তোলা হয়। সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ব্যবস্থার স্বার্থে রাজ্য সরকার জেলা পরিষদ থেকে গ্রামসভা পর্যন্ত হিসাব নিকাশ, বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তা কমিটি ও সাহায্য-সহায়তা প্রাপকদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন কোন খাতে বা প্রকল্পে কত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ফলে, সরকারি অর্থবরাদ্দ ও পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজের একটি সাধারণ চিত্র গ্রামবাংলার জনগণের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা চালু ছিল।

এর পরেই বামফ্রন্টের পঞ্চায়েতের সঙ্গে তৃণমূলের শাসনকালের পঞ্চায়েতের তুলনা টেনে লেখা হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের আমলে তৃতীয়বার পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ১২ বছরের অপশাসনে রাজ্যজুড়ে নজিরবিহীন চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট চলছে। দমন, পীড়ন, অকারণ হয়রানি, মিথ্যা অভিযোগে আটক এখন নিত্যকার ঘটনা। মানুষের জিজ্ঞাসার শেষ নেই – কাজ নেই কেন? শিল্পের এই করুন অবস্থা কেন? কৃষক ফসলের দাম পায় না কেন? ১০০ দিনের কাজ বন্ধ কেন? আবাস যোজনার কাজ থেমে আছে কেন? শিক্ষা ব্যবস্থায় এই সর্বনাশ হয়েছে কার মদতে? দলের নেতা মন্ত্রীরা চুরির দায়ে জেলে যাচ্ছেন, টাকার বিনিময়ে পাওয়া চাকরি বাতিল হচ্ছে, ভূ-ভারতে এর কি কোন নজির আছে? শুধু শিক্ষা দপ্তর নয় সব দপ্তরে, সব নিয়োগে, বালি, পাথর, কয়লাসহ সব খাদানে, পঞ্চায়েত, পুরসভা, সমবায় সর্বত্র লুটপাটে কারা জড়িত? উত্তর একটাই – শাসকদল, তৃণমূল। রাজ্যের অর্থনীতি, আইনের শাসন, নাগরিক স্বাধীনতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প সবই ধ্বংসের কিনারায়। রাজ্যের ঘাড়ে দেনার পরিমাণ বেড়ে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ কোটি টাকা। এই সর্বনাশা পরিস্থিতি, লুটপাট এবং অরাজকতার ফলে ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন শাসক দল। দু্র্নীতি ও জুলুমবাজির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বামফ্রন্ট চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সময় থেকেই স্পষ্ট করেছে- ‘তৃণমূল কংগ্রেস একটা দুর্নীতিগ্রস্ত দল। দুর্নীতির টাকায় তাদের দল চলে। সবধরনের লুটের অর্থের মূল উপভোক্তা দলের শীর্ষনেতৃত্ব’। ঘটনাবহুল এক দশকে বামপন্থীদের মন্তব্যের যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যুব-ছাত্রদের ইনসাফ সভা, গ্রামে সাড়া জাগানো পদযাত্রা, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে জনগণের বার্তা এবং শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শিক্ষক, কর্মচারীদের ১০ মার্চের সফল ধর্মঘট – প্রতিটি আন্দোলনে শাসকের উদ্বেগ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এ লড়াই শুধু পঞ্চায়েতকে দুর্নীতিমুক্ত করার লড়াই নয়, বাংলাকে বাঁচানোর লড়াই।

ইস্তেহারে রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রের অপশাসন, অসহিষ্ণুতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বামফ্রন্টের দাবি বিষবৃক্ষকে শিকড়সমেত উৎখাত করতে হবে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৫ জন নেতা-মন্ত্রী-কর্মকর্তা- দালাল জেলে গেছেন। সরকারি মদতে রাজ্যে দুর্নীতির যে চেহারা সাধারণ মানুষ দেখছেন সেটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বিপন্ন রাজ্যকে বাঁচাতে হলে এই অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। তৃণমূল ও বিজেপি’কে হটাতে মানুষের ঐক্য চাই। আগামীর লড়াই হবে গ্রামে গ্রামে, লড়াই হবে বিপন্ন বাংলাকে বাঁচাতে, লড়াই হবে লুট-দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লড়াই হবে দেশের ঐক্য ও সম্প্রতি রক্ষার্থে। এই লড়াইয়ে আপনিও আসুন। গভীর প্রত্যাশা নিয়ে আমরা আপনাদের প্রতীক্ষায় রইলাম।

মূলতঃ পাঁচটি দাবিকে সামনে রেখে বামফ্রন্ট এই নির্বাচনে লড়াইয়ের পথে নেমেছে। এই পাঁচটি বিষয় হল:- বাংলাকে দুর্নীতিগ্রস্তদের দখল থেকে মুক্ত করুন। দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংসকারী, সাম্প্রদায়িক বিজেপি’কে জনবিচ্ছিন্ন করুন। দিকে দিকে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের জয়ী করুন। রাজ্যে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলুন।

বামফ্রন্টের এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ইস্তেহারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে সমালোচনা করা। দেশের সারভৌমত্ব রক্ষায় বিজেপি যে প্রধান অন্তরায় সেটা এই ইস্তেহারে লেখা হয়েছে। পাশাপাশি বিজেপির সাম্প্রদায়িক মানসিকতার সমালোচনা করে শিকড় থেকে উৎপাটিত করার ডাক দেওয়া হয়েছে। এমন কি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কার্যকলাপ ও তদন্তের গতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই ইস্তেহার থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের চাইতে বিজেপিকেই বেশি করে মানুষের শত্রু বলে বামফ্রন্ট মনে করছে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!